খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ৭ মে, ২০১৭: বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পাটের ব্যাগের পক্ষে এবং পলিথিন ও প্লাস্টিক-ব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে আগামি ১৫ মে থেকে শুরু হচ্ছে সারাদেশব্যাপী সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযান। পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামুলক ব্যবহার আইন-২০১০ এ নির্ধারিত ১৭টি পণ্য যেমন ধান, চাল, গম,ভূট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, পেয়াঁজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা ও তুষ-খুদ-কুড়া পরিবহন ও সংরক্ষণে পাটের ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সারাদেশের সকল প্রকার সড়কপথ, জলপথ, স্থলবন্দর, মালামাল পরিবহণকারী যানবাহন, উৎপাদনকারী, প্যাকেটজাতকারী, আমদানীকারক-রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। স্বরাষ্ট্র, বন ও পরিবেশ, সড়ক ও সেতু পরিবহণ, নৌপরিবহণ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ, জেলাপ্রশাসন, পুলিশপ্রশাসন ও র্যাবের সহায়তায় এই সাঁড়াশি অভিযান পরিচালিত হবে। এই অভিযান নিয়মিতভাবে চলতে থাকবে।
সোনালী আঁশ পাটের উৎপাদন এবং এর বহুমুখী ব্যবহারকে উৎসাহিত ও জনপ্রিয় করতে ১৭টি পণ্যের পাটজাত মোড়কের ব্যবহার নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশবিরোধী প্লাস্টিক-পলিথিন ব্যবহার ও উৎপাদনবন্ধে সরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাগ্রহণ করেছে এবং ব্যাপক জনসচেতনতাবৃদ্ধিসহ এই অভিযান সফল করতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথেও আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা-সমাবেশ এবং পাটজাত পণ্যপ্রদর্শনী অব্যাহত রাখা হবে।
আজ সচিবালয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে নৌ-পরিবহণমন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহণ সেক্টরে জড়িত সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দের এক সমন্বয়সভায় এই তথ্য জানানো হয়। বস্ত্র ও পা টমন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ।
“পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০” এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন পর্যালোচনা, ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট স্টোক হোল্ডারদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়।
এ সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত (সচিব) কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য (অতি: সচিব), পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোছলেহ উদ্দিন, বিজেএমসির চেয়ারম্যান ড. মো: মাহমুদুল হাসান ,বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন,,বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওর্নাস এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি, ট্রাক এজেন্সি সমিতি, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন,লঞ্চ মালিক সমিতি এর প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্টোক হোল্ডারগণ এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন।
বস্ত্র ও পাটপ্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম পাটের অতীত গৌরবের বিবরণ দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহেই আবার আমরা সোনালি আঁশের সুদিন এবং এর বহুমুখী ব্যবহার এমনভাবেই ফিরিয়ে আনবো যাতে জনগণ পাট উৎপাদনে আগ্রহী হয়। তিনি বর্তমানে দেশে পাট ও বস্ত্রের সংমিশ্রণে উন্নত মানের সার্ট ও প্যান্টপিচসহ জিন্সকাপড়ের উৎপাদনের কথা উল্লেখ করে পণ্যের মোড়কে স্বাস্থ্যহানিকর পলিথিন ও প্লাস্টিকব্যাগ বর্জনে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় জানানো হয়, আইনটি সমূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলে প্রতিবছর ১০০ কোটি পাটের বস্তার চাহিদা সৃষ্টি হবে । স্থানীয় বাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, পাট চাষীরা পাটের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে এবং সর্বোপরি পাটের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ পাটের শিল্প ও পরিবেশ রক্ষা পাবে । গত ৩০ নভেম্বর,২০১৫ থেকে সপ্তাহব্যাপী ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য দেশজুড়ে এক বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং উক্ত অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে । এ অভিযানে জেলা প্রশাসন মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর/প্রতিষ্ঠান/চেম্বার/বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এর সহযোগিতায় জনগনকে উদ্বুদ্ধ করা সহ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে আইন বাস্তবায়নে সাহসী ও গতিশীল ভূমিকা পালন করেছে । তার ফলশ্রুতিতে দেশের যে কোন শহর-বন্দরে, হাটে- বাজারে বর্ণিত আইনের অধীন ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ ও বিপণনে পাটজাত মোড়ক বা বস্তা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে । আইনটি বাস্তবায়নে সাধারণ মানুষ এখন সচেতন হয়েছে । তদুপরি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, দেশের বিভিন্ন বাজারে এখন কিছু কিছু আড়ৎ/দোকান/প্রতিষ্ঠানে/বিভিন্ন সুপার সপ এ প্লাষ্টিকের ব্যাগে পণ্য মোড়কীকরণ করে বাজারজাত করা হচ্ছে যা রোধ করা প্রয়োজন। ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ অনুযায়ী ছয়টি পণ্য (ধান, চাল, গম, ভূট্টা, সার ও চিনি) মোড়কীকরণে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার প্রায় শতভাগ বাস্তবায়ন হয়। এ জন্য গত ৬ মার্চ,২০১৬ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ৪১ ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয় । এ আইন বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সকল যুগ্ম সচিবদের সমন্বয়ে ০৯ (নয়)টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন , “আবারো ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে প্লাষ্টিকের বস্তার ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে । ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’ এ সব পণ্যের ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে পালন হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং এর জন্য আবারো ঢাকাসহ সারা দেশে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হবে । এজন্য সকল বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকগণকে এ আইন সুষ্ঠু বাস্তবায়নে পূর্বের ন্যায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ মনিটরিং এর জন্য আবারো নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।”
উল্লেখ্য, আইন অনুযায়ী ৬টি পণ্য অর্থাৎ ধান, চাল, গম, ভূট্টা, সার ও চিনি পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত হয়েছে । পরবর্তীতে ২১ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে আরো মরিচ, হলুদ, পেয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, ধনিয়া, আলু, আটা, ময়দা, তুষ-খুদ-কুড়াসহ মোট ১৭টি পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে । ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ এর ধারা ১৪ অনুযায়ী পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে। এ অপরাধ পুনঃসংগঠিত হলে সর্বোচ্চ দন্ডের দ্বিগুণ দন্ডে দন্ডিত করা হবে । স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহায়তায় ৩০ নভেম্বর, ২০১৫ হতে সপ্তাহকাল ব্যাপী বিশেষ অভিযানকালে সমগ্রদেশে এ সময়ে ১৬০৮টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ১.৫১ কোটি টাকা অর্থ দন্ড এবং ০২ জনকে কারাদন্ড প্রদান কার হয় । গত জুলাই-২০১৬ হতে মার্চ-২০১৭ পর্যন্ত সমগ্র দেশে ৮৪৭টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ৭৬.৯৬ লক্ষ টাকা অর্থ করা হয়েছে ।