খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ১০ মে, ২০১৭:অবশেষে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের ৩৩০ জন দুস্থ মহিলার বিপরীতে (ভিজিডি চক্র) বরাদ্ধকৃত প্রায় ৪০ মেট্রিকটন চাল বিতরন শুরু করা হয়েছে।
বুধবার (১০মে) উপজেলা ভিজিডি কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন এবং সদস্য সচিব উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস ও ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টু উপস্থিত থেকে এসব চাল চাল বিতরন করেন।এছাড়া ইউপি সদস্য,এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
চারমাস পর ১২০ কেজি করে চাল পেয়ে দুস্থ মানুষগুলো আনন্দে যেন আতœহারা হয়েছে।৮নম্বর ওর্য়াডের গনকপাড়া গ্রামের সাহেরা বেগম।কার্ড নম্বর ৩০৩ ।তিনি বলেন,আমার স্বামী অনেকদিন থেকে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন।ওষুধ কিনলে আর চাল কেনার টাকা থাকেনা।এক বেলা খাবার জুটলেও আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়েছে।এই চাল পেয়ে খুব উপকার হলো ভাই।
চাল না পেয়ে আবার অনেককেই খালি হাতে বাড়ী ফিরতেও দেখা গেছে।কারন চাল বিতরনের আগে কার্ড বিতরন না করায় তালিকায় নাম আছে ভেবে অনেকে চাল নিতে এসেছিলেন ।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়াডাঙ্গা গ্রামের আমেলা বেগম( ৪০) ইউনিয়ন পরিষদে তাকে চাল নিতে ডেকেছেন ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম।কিন্তু দিনভর থাকার পর তাকে খালী হাতে বাড়ী ফিরতে হয়েছে।
আমেলা বেগম আরও বলেন,রফিকুল মেম্বার ভোটার আইডি কার্ড নিয়েছেন আরো ছয়মাস আগে।ভিজিডি কার্ডের জন্য সবাই যে টাকা দিয়েছে আমিও সেই টাকা দিতে চেয়েছিলাম।তাদের আর্থিক অবস্থা ভাল তাই তারা আগে দিতে পেরেছেন।আমি সুদের উপর টাকা খুজছিলাম পাইনি। সকালে খবর পেয়ে আমি মেম্বরের বাড়ীতে যাই।মেম্বর আমাকে আসতে বলেছিলেন তাই এসেছি।কিন্তু এখন বাড়ী যেতে বলছেন।তিনি আরও বলেন,সামনে রমজান মাস আসছে।শেষ রাতে কি খেয়ে রোজা করব সেই চিন্তা করছি।চাল পেলে রোজার মাসটা খুব ভাল যেত।আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে।
উল্লেখ্য,সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় অতিদরিদ্র মহিলাদেরকে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষার আলোকে স্থায়ীভাবে জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে ভিজিডি চক্র কর্মসুচী চালু হয়।
২০১৭-২০১৮ এই দুই বছরে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও দুর্দশাগ্রস্থ পরিবারের শতকরা হার বিবেচনায় রেখে কিশোরগাড়ী ইউনিয়নে ৩৩০জন দুস্থ,অসহায়,অতিদরিদ্র মহিলার নামের তালিকা অনুমোদনের জন্য গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ইউনিয়ন ভিজিডি উপকারভোগী বাছাই কমিটি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করে। উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা(ইউএনও) ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর তালিকা অনুমোদন করেন।
নীতিমালা অনুযায়ী,৩১ ডিসেম্বরের মধ্য ইউনিয়ন ভিজিডি কমিটি উপকারভোগী নির্বাচন করে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তরে চুড়ান্ত তালিকা অনুমোদনের জন্য পাঠাবে।উপজেলা ভিজিডি কমিটি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্য অনুমোদন করবে এবং ৩১ জানুয়ারির মধ্য ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে উপকারভোগীদের মাঝে ভিজিডি চক্রের চাল বিতরনের ব্যবস্থা করবে।প্রত্যেক সুবিধাভোগি প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে ২৪ মাস এই চাল পাবে।
কিন্তু চলতি বছরের চারমাস পেরিয়ে গেলেও উপকারভোগিদের মধ্য কার্ড কিংবা চাল বিতরন করা হয়নি।অথচ প্রতিমাসে ৩৩০ জনের বিপরীতে নয়হাজার ৯০০ কেজি চাল করে জানুয়ারি,ফেব্রয়ারি,মার্চ ও এপ্রিল এই চারমাসে প্রায় ৪০ মেট্রিকটন চাল পলাশবাড়ী সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলন করা হয়।
এরপর অতিদরিদ্র মহিলারা চাল আতœসাতের অভিযোগ তোলে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন,উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস এবং কিশোরগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রিন্টুর বিরুদ্ধে।
সোমবার (০৮ মে)ভিজিডির চাল আতœসাতের অভিযোগ সংক্রান্ত সংবাদ সংস্থা এনবিএস এ প্রকাশিত হওয়ার পর আজ চাল বিতরন শুরু করা হলো।