খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ১০ মে, ২০১৭: নাটোরের মাধনগরে উচ্ছেদ হওয়া ১৫ আদিবাসী পরিবার এখনও মানবেতর জীন কাটাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাসেও নয় দিনেও তারা নতুন ঠিকানা খুজে পায়নি। অর্ধাহারে অনাহারে ও অজানা আতংকেই কাটছে তাদের জীবন। তবে জেলা প্রশাসন থেকে অন্যত্র ঘর তৈরী করে দেওয়ার আশ্বাসের পরও তারা ওই ভিটাতেই খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছ্।ে এদিকে আদিবাসী ১৫ পরিবারকে াাদালতের নির্দেশে উচ্ছেদের ঘটনায় এলাকায় তদন্ত শুরু করেছেন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। বুধবার বেলা ১১ টার দিকে তদন্ত কমিটির প্রধান মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটির অপর দুই সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের উপসচিব আবু হেনা মোস্তফা জামান ও আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোঃ মাহবুবার রহমান সরকার ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেন। এসময় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার,প্রত্যক্ষদর্শি,সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধি সহ এলাকাবাসীর সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন। এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মনিরুজ্জামন , নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেজা হাসান,সদর উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা (ভুমি) ফারজানা খানম প্রমুখ সরকারী কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাক্ষাতকার গ্রহণের সময় চ্যানেল আইয়ের সঙ্গীত প্রতিযোগীতার ক্ষুদে শিল্পি ১৫ বছরের বাসনার দেওয়া স্বাক্ষাতকারের সময় উপস্থিত অনেকেই আবেগ আপ্লুত হয়ে ওঠেন। বাসনা সেদিনের সেই ঘটনা বর্ননা করে বলে, বিপুল সংখ্যক পুলিশসহ এলাকার প্রভাবশালীরা তাদের একমাত্র ঘরটি ভেপু মেসিন দিয়ে গুড়িয়ে দেয়। আকুতি জানিয়েও তার জীবনে শিল্পি হওয়ার স্বপ্নসাধ গানের বাদ্য যন্ত্রগুলো ঘর থেকে বের করতে দেওয়া হয়নি। সব কিছুই গুড়িয়ে দেওয়া হযেছে। দুপুরের খাবারও মাটির সাথে মিশে দেওয়া হয়। তার স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়েছে। দেশের সেরা শিল্পি হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার । এখন খাবারই জুটছেনা। এরপর মাথা গোজার ঠিকানা নেই। বাসনা তার স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিনত করেছে তাদের সে বিচার চায়। প্রতিবেশী শতবর্ষী বৃদ্ধা শাহিদা বেওয়া জানান, হিন্দু চক্রবর্তী পরিবার ওই জমিতে বসবাস করতো। তারা ভারতে চলে যাওয়ার সময় আদিবাসীরা ওই জমিতে বসবাস শুরু করে। ওদের উচ্ছেদ করার সময় কিছু টাকা দিল্ েওদের উপকার হতো। এভাবে উচ্ছেদ করা ঠিক হয়নি। অন্যায় হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ দেওয়ান জানান, উচ্ছেদের বিষয়টি তিনি জানতেননা। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও বিষয়টি অবগত ছিলেননা বলেও তিনি জানান।
আদিবাসী নেতা নরেশ ওড়াও দাবী করেন, ঘটনার সময় আদিবাসীদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। তদন্ত করে সুষ্ঠ বিচার সহ পুনবার্সনের দাবী জানান তিনি।
অপর দিকে ওই ১৫ আদিবাসী পরিবারকে উচ্ছেদের পর জেলা প্রশাসন রায়টি বাধ্যকর নয় মর্মে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে নাটোরের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ঘোষনামুলক ডিগ্রি বাবদ পিটিশন দায়ের করলে আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মনিরুজ্জামান ভুইয়া বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব সাইদুর রহমান বলেন, আদিবাসীদের উচ্ছেদের বিষয়ে তারা তদন্তে নেমেছেন। কি কারনে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং কোন ধরনের অনিয়ম বা তাদের ওপর নির্যাতনের কোন সত্যতা আছে কিনা এসব নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব হচ্ছে ঘটনাস্থল পরিদর্শন সহ ঘটনার কারন জানতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার,এলাকাবাসী,গণমাধ্যম কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন জমা দিবেন।
উল্লেখ্য ,গত ২ মে আদালতের আদেশে পুর্ব নোটিশ ছাড়াই ভেপু মেসিন লাগিয়ে আদিবাসী ১৫ পরিবারের বাড়ি-ঘর গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এসময় পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয় বেশ ক’জন আদিবাসী নারী পুরুষ। এই ঘটনা নিয়ে গণমাদ্রম সহ সামাজিক গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে আলোচনার ঝড় উঠলে টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের। জেলা প্রশাসনেরে শীর্ষ কর্মকর্তা সহ উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার আশ্বাস দেন। পরে এঘটনা তদন্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব সাইদুর রহমানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।