Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

15kখােলা বাজার২৪।। শুক্রবার , ১২ মে, ২০১৭: অনেকেই অতিরিক্ত রক্তচাপে ভুগে থাকেন। কেউ বলেন ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়, কেউ বলেন খাওয়া দরকার। আসুন জেনে নেই ডাক্তার কী বলেন। জানাচ্ছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আবদুল্লাহ শাহরিয়ার।

রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন সাধারণ কোনো রোগ নয়। আবার শুধু ওষুধ খেয়ে যাওয়ার বিষয় এটি নয়। উচ্চ রক্তচাপের অল্প কিছু কারণ বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন। অধিকাংশ কারণ অজানা। এজন্য উচ্চ রক্তচাপ হলেই ওষুধ খাবেন ভালো কথা। কিন্তু কারণ না জেনে ওষুধ সেবন করলে অনেক ক্ষেত্রেই ফলাফল ইতিবাচক হয় না।

তবে জনশ্রুতি আছে, উচ্চ রক্তচাপ নিরোধক ওষুধ একবার খেলে সারাজীবন চালিয়ে যেতে হয়। সারাজীবন রোগী হয়ে থাকার ভয়ে অনেকেই ব্লাডপ্রেসার কন্ট্রোলের কথা ভুলে যান। ওষুধ খাওয়ার অভ্যস্ততা ত্যাগ করেন। এটি ভালো কথা নয়। উচ্চ রক্তচাপের কারণ অজানা থাকলে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আপনাকে এন্টি হাইপারটেনসিভ পিল সেবন করতে হবে সারাজীবন।

অনেক সময় স্থূলতা, ডায়াবেটিসের সঙ্গী হিসেবে উচ্চ রক্তচাপ বিরাজ করে। সেক্ষেত্রে প্রেসার কমানোর ওষুধ শুধু সেবন করেই কাজ হয় না। খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা সব কিছুই পরিবর্তন করতে হয়। কিডনির অসুখের কারণেও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। কিডনি ধমনী সংকুচিত হয়ে গেলে কিডনি ফেইলুর, কিডনি নিকটস্থ গ্গ্নান্ডে টিউমার হলেও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগ আবিষ্কার করা সম্ভব হলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

শুধু তাই নয়, কিডনি ধমনী সংকোচনজনিত কারণে সৃষ্ট উচ্চ রক্তচাপের সঠিক চিকিৎসা নেওয়া হলে উচ্চ রক্তচাপ শুধু নিয়ন্ত্রণ নয়, তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। গর্ভধারণজনিত কারণেও মায়েরা উচ্চ রক্তচাপের শিকার হতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শে এসব মায়ের অবশ্যই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক পিল সেবন করতে হবে।

ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রক ওষুধ নিয়মিত সেবনের ফলে অনেক সময় রক্ত চাপ কমে আসতে পারে। ডায়রিয়া, অধিক বমি এসব কারণেও রক্তচাপ কমে আসতে পারে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধের ডোজ কমিয়ে এনে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

বিস্ময়কর হলেও সত্য, অনেকের আবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেই উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিষয়টি সুনিশ্চিত করে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা নিতে হবে। এই বিশেষ অবস্থাটিকে আমরা চিকিৎসার পরিভাষায় হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন বলে থাকি। প্রেসার নিয়ন্ত্রক পিল অনিয়মিতভাবে এবং অপর্যাপ্ত পরিমাণে সেবন করলে স্ট্রোক, কিডনি ফেইলুর এসব মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

দুশ্চিন্তাজনিত কারণেও শরীরের উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। এজন্য উচ্চ রক্তচাপ নিরোধক পিলের সঙ্গে দুশ্চিন্তা প্রশোমক ওষুধ সেবনের পরামর্শ চিকিৎসকেরা দিয়ে থাকেন। অনেকেই এসব ওষুধকে নিছক ঘুমের ওষুধ মনে করে সেবন করা থেকে বিরত থাকেন। এক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হয়। অতিরিক্ত স্ট্রেস আর মানসিক যন্ত্রণার কারণে রক্ত চাপ বাড়তেই থাকে।

শিশু বয়সে নেফ্রাইটিস রোগের শিকার হয়ে সাময়িকভাবে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই নেফ্রাইটিসের চিকিৎসার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক ওষুধ সেবন করতে হবে। তবে নেফ্রাইটিস রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রেসার কন্ট্রোল পিল খেতে হয় না।

অনেক ক্ষেত্রে একক মাত্রার এবং একটি মাত্র প্রেসার কন্ট্রোল পিল খেয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না। সেক্ষেত্রে একাধিকবার এবং ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রেসার কন্ট্রোলের ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। এ অবস্থাটি রোগীর জন্য বিরক্তিকর এবং কষ্টকরও বটে। বিশেষ করে যারা বার্ধক্যে উপনীত হন তাদের পক্ষে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক ওষুধ সময় ধরে সেবন করা সম্ভব হয় না। এজন্য ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ‘কম্বিনেশন ড্রাগ’ বা দুটো নির্দিষ্ট মাত্রার ওষুধ সংযুক্ত করে বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন।

এক্ষেত্রে একটি ওষুধ সেবনেই কার্যকর ফল পাওয়া সম্ভব। জটিল স্নায়ুবিক সমস্যার কারণেও অনেক সময় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকতে পারে। বার্ধক্যে উপনীত ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এ জন্য এসব রোগীর আত্মীয়-স্বজন বা সেবাশুশ্রূষাকারীদের রোগীর পাশাপাশি দীর্ঘদিন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ধৈর্যসহকারে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়।

উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকেরা মূত্রবর্ধক ওষুধ এবং অনেক ক্ষেত্রে ডায়াটেশিয়ানের পরামর্শে জীবনযাত্রার কৌশল পরিবর্তন তথা ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। খাবারে অতিরিক্ত লবণ তো বটেই, লবণযুক্ত খাবার যেমন শুঁটকি, লোনা ইলিশ, সালাদ এসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপের পারিবারিক ইতিহাস না থাকলে স্থূল ব্যক্তিরা জীবনযাত্রার কৌশল পরিবর্তনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ থেকে রেহাই পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে পৃথকভাবে ওষুধ সেবনের প্রয়োজন পড়ে না। তবে উচ্চ রক্তচাপ যখন যে বয়সেই ধরা পড়ূক না কেন, তাকে মামুলি রোগ বলে উড়িয়ে দেবেন না। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিন। সুস্থ থাকুন।