খােলা বাজার২৪।। শনিবার , ১৩ মে, ২০১৭: সামনে পবিত্র রমজান মাস। এ উপলক্ষে বিশ্বের প্রায় সব মুসলিমপ্রধান দেশে নিত্যপণ্যের দাম কমানো বা বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিবছরই এর উল্টো দৃশ্য দেখা যায়। ব্যবসায়ীরা যেন মুনাফার লোভে দানব হয়ে ওঠে।
রমজান মাস সামনে রেখে প্রায় দেড় মাস আগেই সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। প্রতি সপ্তাহেই এ দাম দফায় দফায় বাড়ানো হয়; সঙ্গে নানা অজুহাত।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর বাজারে মাছ, মুরগি, সবজি থেকে শুরু করে চাল-ডাল পর্যন্ত সব ভোগ্যপণ্যের দাম এক দফা বাড়ানো হয়েছিল। এর দ্বিতীয় সপ্তাহে দেখা গেছে, প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দাম আরও এক দফা বাড়িয়েছেন রাজধানীর ব্যবসায়ীরা।
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি রসুনের দাম বাড়ানো হয়েছে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ছোলা, চিনি, মুরগির দামও প্রতি কেজিতে ১০-১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে গরুর মাংস নিয়ে আন্দোলনের পর দুই দফায় বাড়ানো হয়েছে দাম। এরপর বৃহস্পতিবার পবিত্র শবে বরাতে অতিরিক্ত চাহিদা থাকায় এবং সরবরাহ সংকটের অজুহাতে আরও এক দফা বাড়ানো হয় মাংসের দাম।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। শসা, জিঙ্গা, ঢেঁড়স, টমোটো, বেগুন, করলা, দুন্ধুল, চিচিঙ্গার দাম কেজিতে বেড়েছে পাঁচ টাকা। শসা ৪০ টাকা, জিঙ্গা ৬০ টাকা, টমোটো ৪০, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বেগুন ৫০-৫৫ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ১০০ টাকা, আলু ১৫ থেকে ২০ টাকা, পটল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ৩০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা; কাঁচামরিচ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা; মিষ্টিকুমড়া প্রতিটি ২০ টাকা; লাউ ৪০-৬০ টাকা, জালি কুমড়া ২৫ টাকা; লেবু হালিতে ৫ টাকা বেড়ে ২০ টাকা, কাঁচকলা ২০-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
রমজান মাস শুরুর আগে লেবু, বেগুন, শসা, গাজরের দাম আরেক দফা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে রসুনের দাম কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়েছে। দেশি রসুন গত সপ্তাহের মতো ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হলেও ভারতীয় রসুনের দাম ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে ২২-২৪ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা; পাইকারিতে ভারতীয় পিঁয়াজের দাম ১৫-১৬ টাকা হলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। তবে গত সপ্তাহের মতো ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি আদা।
এছাড়া দেশি মসুর ডাল ১১০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ৭৫-৯০ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ টাকা। মান ভেদে ছোলার দাম ৫-১০ টাকা বেড়ে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খোলা চিনির পাইকারি মূল্য ৫৫-৫৭ টাকা হলেও খুচরা বাজারে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি ও মুদিপণ্যের মতো এ সপ্তাহে প্রায় সব ধরনের চালের দামও বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে মান ভেদে চালের দাম বেড়েছে ৪-৭ টাকা। শুক্রবারের বাজারে চিনিগুড়া চাল ৭৫-৮০ টাকা, নাজিরশাইল ৫৪ টাকা, মিনিকেট ৫২ টাকা, বিআর-২৮ ৪৮ টাকা, মোটা চাল ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রমজানের গরম হাওয়া লেগেছে মাছের বাজারও। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এ দাম আরও বাড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
আজকের বাজারে প্রতি জোড়া মাঝারি ইলিশ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা; বড় ইলিশ ১৪০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কোরাল মাছ কেজি প্রতি ৬০০ টাকা; বড় চিংড়ি ৬৫০ টাকা, ছোট চিংড়ি ৬০০ টাকা, চিংড়ি গুড়া ৪০০ টাকা; বড় তেলাপিয়া ১৫০ টাকা, ছোট তেলাপিয়া ১০০-১২০ টাকা; পাবদা ৫০০ টাকা, রুই ২৪০ টাকা, পাঙ্গাস ১৩০ টাকা, কাতলা ৩৫০ টাকা, আইস ৬০০ টাকা, টেংরা ৪৫০ টাকা; বড় মৃগেল ৩০০ টাকা, ছোট মৃগেল ২০০ টাকা; কই মাছ ২০০ টাকা; মাগুর মাছ ৮০০ টাকা; শিং মাছ ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া গরুর মাংসের দাম এবার আরও এক ধাপ বাড়ানো হয়েছে। আজকের বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৫০-৬০০ টাকা এবং খাসির মাংসা ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শবে বরাতের আগে হঠাৎ মাংসের দাম বাড়ার জন্য ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ এবং দেশি খামারিদের গরু বিক্রি বন্ধ করে দেয়াকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া বয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা বেড়ে আজকের বাজারে ১৬৫ টাকা; পাকিস্তানি মুরগি আকার ভেদে ১৩০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইসঙ্গে রাজধানীর বাজারে ডিমের দামও কিছুটা বেড়েছে। বয়লার মুরগির লাল ডিম প্রতি হালি ২৮ টাকা ও ডজন ৮৫ টাকা; দেশি মুরগির ডিম হালি ৫৫ টাকা ও ডজন ১৬০ টাকা এবং হাসের ডিম হালি ৪০ টাকা ও ডজন ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, রমজান মাসকে সামনে রেখে আগামী ১৫ মে থেকে রাজধানীর ৩০টিসহ সারাদেশের ১৮৫টি নির্ধারিত স্থানে ৫টি পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি। টিসিবির বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, চিনি কেজি প্রতি ৫৫ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা, মসুর ডাল ৮০ টাকা, খেজুর ১২০ টাকা এবং সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ৮৫ টাকায় বিক্রি হবে।
ঢাকায় ৩০টি; চট্টগ্রামে ১০টি, অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ৫টি ও জেলা সদরে ২টি করে ট্রাকে করে সারাদেশে এসব পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি।
এছাড়া টিসিবির নিজস্ব ১০টি খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র এবং ২ হাজার ৮১১ জন পরিবেশকের কাছ থেকেও ভোক্তারা পণ্য কিনতে পারবেন।