খােলা বাজার২৪।। রবিবার , ১৪ মে, ২০১৭: রমজান আইনে সংশোধনের প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে তীব্র বিতর্ক শুরু হল পাকিস্তানে। রামজান মাসে খাওয়া-দাওয়ার এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ আরও কঠোর করতে পুরনো রমজান আইনকে পাকিস্তান সংশোধন করছে।
সংশোধিত বিল অনুযায়ী, রোজার সময় প্রকাশ্য স্থানে খাওয়া-দাওয়া করলে জেলে যেতে হবে। এই বিলের তীব্র বিরোধিতায় সরব হয়েছেন প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী তথা প্রয়াত পিপিপি নেত্রী বেনজির ভুট্টোর মেয়ে বখতাওয়ার ভুট্টো জারদারি। পাক সরকারকে তুলোধোনা করে টুইটারে তাঁর কটাক্ষ— সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য কোনও শাস্তি নেই, কিন্তু রমজানের সময় জল খেলে জেলে যেতে হবে।
১০ মে পাকিস্তান সেনেটের ধর্মীয় বিষয় সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটি সংশোধনী বিলটিকে অনুমোদন দিয়েছে। ‘এহতরাম-এ-রমজান (সংশোধনী) বিল ২০১৭’— বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে এই বিলকে কেন্দ্র করেই। পাকিস্তানে রমজান পালন সংক্রান্ত আইন সেনা শাসক জিয়াউল হকের সময় থেকেই রয়েছে। সে আইনে অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে। সেই বিধিনিষেধকে আরও কঠোর করে তুলতে সেনেটর তনভির খান পাক সেনেটে সংশোধনী বিলটি পেশ করেন। পরে বিলটি স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে পাঠানো হয় বিবেচনার জন্য। কমিটি বিবেচনার পর বিলটিকে সর্বসম্মত ভাবে অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে।
নতুন বিলে বলা হয়েছে, রমজানের সময় কেউ যদি রাস্তাঘাটে বা প্রকাশ্য স্থানে খাওয়া-দাওয়া করেন বা জল খান বা ধূমপান করেন, তা হলে তাঁর তিন মাসের কারাদণ্ড হবে। সঙ্গে হবে ৫০০ পাক রুপি জরিমানাও। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলি যদি রমজান আইন ভাঙে, তা হলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে। আর মিডিয়া বা প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষ রমজান আইন ভাঙলে ন্যূনতম ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা হবে।
এই বিলের বিরুদ্ধে বেনজির-কন্যা বখতাওয়ার সরব হয়েছেন। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘‘এই হাস্যকর আইনের জেরে মানুষ হিট স্ট্রোক এবং ডিহাইড্রেশনে মারা যাবেন। এটা ইসলাম নয়। ’’ বিলকে কটাক্ষ করে বখতাওয়ার ভুট্টো জারদারির মন্তব্য— রমজানের সময় জল খেলে তিন মাসের জেল হবে আর জঙ্গি হলে, মালালার মতো স্কুল পড়ুয়াদের খুনের চেষ্টা করলে হাসতে হাসতে টিভিতে মুখ দেখানো যাবে।
বখতাওয়ার ভুট্টো পাকিস্তানে যথেষ্ট প্রভাবশালী নাম। তাঁর সহোদর বিলাবল ভুট্টো পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল পিপিপি-র চেয়ারম্যান। বখতাওয়ার-বিলাবলের বাবা আসিফ আলি জারদারি পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। তাই এহতরাম-এ-রমজান (সংশোধনী) বিল ২০১৭-র বিরুদ্ধে বখতাওয়ারের সরব হওয়া যে প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সংশয় নেই। টুইটারে তিনি ইতিমধ্যেই প্রচুর সমর্থন পেয়েছেন। তবে বিরোধিতাও কম হয়নি। টুইটারেই এক জন বখতাওয়ারকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, রমজানের সময় উপবাস রাখা ইসলামের অঙ্গ। বখতাওয়ারের জবাব— রমজানে উপবাস রাখা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। কিন্তু কেউ উপবাস না করলে তাঁকে জেলে যেতে হবে, এমন কথা ইসলামে লেখা নেই।