Wed. Aug 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

25খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ২১ মে, ২০১৭:  ১৯ মে, ২০১৭ তারিখে লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী চাকুরীর পরীক্ষা দিতে ঢাকায় এসেছিল। সকালে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ওঠে। আর সরাসরি প্রশ্ন ফাঁসের কারণে বিকেলের পরীক্ষার ঠিক আগ-মুহুর্তে পরীক্ষা বাতিল করা হয়। বলা হয়, পরবর্তীতে পরীক্ষার তারিখ জানানো হবে।

সরকারি হিসেবে, বাংলাদেশে প্রায় ছাব্বিশ লাখ উচ্চ শিক্ষিত বেকার রয়েছে। তারা নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। পাঁচ-দশটি খালি পদের বিপরীতে লাখ লাখ আবেদন করছে। আমাদের দেশে নিয়োগ পরীক্ষাগুলো অধিকাংশই ঢাকাতে অনুষ্ঠিত হয়। তাই প্রায় সপ্তাহে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হাজার হাজার বেকার ঢাকায় আসতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা তথা পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার প্রভূতি অঞ্চল থেকে ঢাকায় যাতায়াতে কমপক্ষে দুই হাজার টাকার বেশি লাগে। একটি দরিদ্র পরিবারে একজন বেকারের পক্ষে এ দুই হাজার টাকা যোগাড় করা যে কতোটা কষ্টকর, তা শুধু ভুক্তভোগীরাই উপলব্ধি করতে পারে। এ কষ্টের টাকায় বেকাররা সারারাত গাড়ীতে আসে এবং পরীক্ষা দিয়ে আবার সারারাত গাড়ীতে বাড়ি ফেরে। অতি কষ্টের টাকায় বাড়ী ফেরার আগ পর্যন্ত তারা শুধু পাউরুটি-কলা বা বাড়ী থেকে আনা খাবার খেয়ে কোনোমতে দিন-রাত কাটিয়ে দেয়। এত কষ্টে ঢাকায় এসে যখন শোনে, প্রশ্ন ফাঁসের কারণে পরীক্ষা বাতিল। পরবর্তীতে তারিখ জানানো হবে। তখন তাদের কেমন লাগে? শাসকেরা কখনো কি এ বিষয়টি ভাবে? এ বেকাররা বিলবোর্ডে যখন দেখে, দেশ উন্নয়নের জোঁয়ারে ভেসে যাচ্ছে অথচ তাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই, তখন কেমন লাগে?
এমনিতেই মুক্তিযোদ্ধা কোটার কারণে বেকাররা চরম ক্ষুব্ধ, তার ওপর প্রশ্ন ফাঁসের যন্ত্রণা- যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা। সরকার মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রতি এতোটা গুরুত্ব দিয়েছে যে, দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা শতগুণ বেড়েছে। সরকার বিগত চল্লিশ বছরের মুক্তিযোদ্ধা কোটা-ঘাটতি পূরণ করেছে। যেমন ধরুন, কোনো প্রতিষ্ঠানে ১৯৭৫ সাল থেকে এযাবত ৫০০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাতে শতকরা ত্রিশভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা হিসেবে ১৫০ জন নিয়োগের কথা। বিভিন্ন সরকারের গাফলতি বা বিশেষ কারণে হয়তো ১০০ জন নিয়োগ পেয়েছে। অর্থাৎ ৫০টি কোটাপদ ঘাটতি হয়েছে। একইভাবে, বর্তমানে উক্ত প্রতিষ্ঠানে ৭০টি পদ খালি হয়েছে। এর ত্রিশভাগ কোটায় ২১টি এবং আগের ঘাটতিপদ ৫০টি মিলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটাতেই হয়েছে। এভাবে বিসিএস, ব্যাংক-বীমা, সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা কোটা পরিপালন হয়েছে। এতে যা হবার তাই হয়েছে। একসাথে বিশাল সংখ্যক খালি পদে শুধুমাত্র দুই লাখ তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা এককভাবে নিয়োগ পেয়েছে। আর কোটা বহির্ভূত ছাব্বিশ লাখ বেকার যথেষ্ট যোগ্যতা সত্ত্বেও বঞ্চিত হয়েছে। এ বঞ্চিতদের কষ্ট দেখার বা বোঝার কেউ নেই।
বাংলাদেশে ষোল কোটি নাগরিকের মধ্যে মাত্র দুই লাখ পরিবার কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পায়, তা কারো বোধগম্য নয়। যে দেশে ত্রিশ লাখ শহীদ প্রাণ হারায়, সেদেশে মাত্র দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধা কিভাবে তালিকাভুক্ত হয়? তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ বিসর্জনকারী ত্রিশ লাখ বীর সেনারা মুক্তিযোদ্ধা নয়? পৃথিবীর কোথাও শহীদেরা যোদ্ধা তালিকার বাইরে নয়। যোদ্ধা ও শহীদের সংখ্যাগত এতো ব্যবধান কোথাও নেই। শুধু বাংলাদেশেই ত্রিশ লাখ শহীদদের বঞ্চিত করে মাত্র দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তালিকাভুক্তদেরকে ভাতা ও কোটা সুবিধার নামে বাজেট-বরাদ্দ দিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলসহ জাতীয় ও ঐতিহাসিক প্রতারণা করা হয়েছে। মেধাবী যুবসমাজকে তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তারা বেকারত্বের যন্ত্রণা ভোগ করছে। প্রশ্ন ফাঁসের যন্ত্রণা এখন অসহনীয় মাত্রা যোগ করেছে। দেশের শিক্ষিত বেকারদের প্রতি প্রশ্ন ফাঁস ও মুক্তিযোদ্ধা কোটার এ যন্ত্রণা শাসক গোষ্ঠির জন্য বুমেরাং হতে পারে।
তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দায়িত্বশীল মহলের কাছে আরজি, প্রশ্ন ফাঁসের যন্ত্রণা আর সহ্য হয়না। মুক্তিযোদ্ধা কোটাবৈষম্য ও বঞ্চণা, আর মানতে পারছিনা। দয়া করে বেকার যুবসমাজের যন্ত্রণা একটু দেখুন। প্রশ্ন ফাঁসকারী পাপিষ্ঠদেরকে দেশদ্রোহী ও মানবতা বিরোধী অপরাধী ঘোষণা করুন। তাদেরকে শক্ত হাতে দমন করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন। প্রশ্ন ফাঁস ও কোটা বৈষম্যের শিকার যুবসমাজের দিকে সুনজর দিন।

শিক্ষানবিশ আইনজীবী, ঢাকা।

[email protected].

অন্যরকম