খােলা বাজার২৪।। সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭: চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের মতে, ‘পানি যে পাত্রেই রাখা হয়, সে তার আকার ধারণ করে। আর জ্ঞানী ব্যক্তিরা পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেয়।’ কথা খুব একটা ভুল কিন্তু বলেননি তিনি। পুরো বিশ্ব শাসন করা পশ্চিমা শক্তি যুক্তরাষ্ট্র তাইতো চীনের প্রস্তাবিত নয়া সিল্ক রোড বা ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ওবিওআর) প্রকল্পকে সাহায্য দিয়েছে। এ নিয়ে কোনো দ্বিমত পোষণ করেনি। চীনের এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এটা হবে বিশ্বে সবচেয়ে বড় বাণিজ্য পথ। যা এশিয়াকে ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত করবে। তবে এ প্রকল্প সত্যিই আশা পূরণ করবে নাকি প্রহসন তা এখনো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
অর্থনীতির ধীর উন্নয়নের কারণে চীনের নেতারা বেশ উদ্বেগে ছিলেন। আর সমুদ্র পথ পাড়ি দিয়ে ঠিক সময় মতো বিদেশের মার্কেটও ধরা যায় না। যা তাদের অর্থনৈতিক দ্রুত উন্নয়নের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক। এ প্রতিবন্ধকতা দূর করেই চীন ওবিওআর প্রকল্প করার উদ্যোগ নিয়েছে। চীনের দাবি, এ প্রকল্প ঠিক মতো বাস্তাবায়ন করা গেলে তা থেকে দীর্ঘ মেয়াদি ফল পাওয়া যাবে। এ প্রকল্প থেকে শুধু তারাই আর্থিকভাবে লাভবান হবে বিষষটা তা নয়। এশিয়ার সব দেশই যেহেতু এ প্রকল্পের আওতায় পড়েবে কাজেই সবারই অর্থনীতির চাকা সচল করার একটা সুযোগ রয়েছে। যদিও এরই মধ্যে ভারত বেঁকে বসেছে। কারণ এ প্রকল্পের আওতায় পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে যাওয়া করিডোর তাদের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিজনক বলে তারা দাবি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া যখন সায় দিয়েছে তখন চীন ভারতকে নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে না।
চীনের এ প্রকল্পকে একবিংশ শতকের সিল্ক রোড হিসেবেই অভিহিত করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনে নিজেকে কমিউনিস্ট বা সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দাবি করে। তবে বিশ্বায়নের এ যুগেই তারাই সবচেয়ে বেশি মুনাফা লাভের চেষ্টা করে। তারাই বিশ্বব্যাপী একচেটিয়া বাণিজ্য করে যাচ্ছে।
চীনের এ উদ্যোগকে পুঁজিবাদের নতুন ধারা বলেই ভাবছেন বিশ্লেষকরা। কারণ গোটা এলাকার উন্নয়ন কার চীনের লক্ষ্য নয়। এ লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তাদের সমর্থন দেয়নি। আসলে যে যার আর্থিক লাভের কথা বিবেচনা করেই এ প্রকল্পে যুক্ত হতে চাইছে। শুধু আর্থিক লাভই নয় কে কতটা আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে তার হিসাবও চলছে। চীনের উদ্যোগে যদি এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে তারা সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যাবে। বিশেষ করে আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারের দিকে দিয়ে। কাজেই এ প্রকল্প নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে নাকি পুঁজিবাদকে আরো শক্তপোক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।