খােলা বাজার২৪।। সোমবার, ২৯ মে, ২০১৭: কাতার ভিত্তিক আল-জাজিরা চ্যানেল হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়ার পর থেকে উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে তেল ও গ্যাস সমৃদ্ধ ছোট মুসলিম রাষ্ট্র কাতারের সাথে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। দ্বিপাক্ষিক এবং কূটনৈতিক ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক তলায় গিয়ে ঠেকেছে। সাম্প্রতিক কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হাম্মাদের একটি বক্তব্য বিকৃতি করে মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয় প্রতিবেশী আরব দেশগুলো। বিশেষত সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত। উভয় দেশ সাফ জানিয়ে দেয় তাদের অসস্তুষ্টির কথা। এ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবের আল-আরাবিয়্যাহ চ্যানেল কাতারের সাথে উপসাগরীয় দেশগুলোর সর্ম্পকের উত্থান-পতনের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
কাতার রাষ্ট্রটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সর্ম্পক খুবই ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষত শেখ খলীফা বিন হামদ আত-থানি ক্ষমতায় থাকাকালে। এসময় শেখ খলিফা উপসাগরীয় দেশগুলো নিয়ে গঠিত একটি সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তারপরে ১৯৯১ সালে কাতার সেনাবাহিনী ইরাকের সাদ্দাম হুসেইনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সৌদি, যুক্তরাষ্ট এবং বৃটেনের সাথে রণাঙ্গনে উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, শেখ খলীফা (যিনি উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সুসর্ম্পক বজায় রাখায় প্রসিদ্ধ ছিলেন) ১৯৯৫ সালে ক্ষমতাচ্যুত হন তারই ঔরসজাত পূত্র হাম্মাদ বিন খলীফা কৃর্তক একটি নিরব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে।
হামদ বিন খলীফা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোর সাথে কূটনৈতিক এবং দ্বিপাক্ষিক সর্ম্পক মারাত্মক পর্যায়ে পৌছে।
উত্তেজনা যেভাবে শুরু হয়েছিল : শেখ হাম্মাদ প্রথমেই একটি টিভি-চ্যানেল চালু করেন। যা দেখতে না দেখতেই সৌদিসহ অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর বিষোদগারে লিপ্ত হয়।
এ সময় কাতারের বিশাল গ্যাস খনির সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীতে জানা যায়, এটিই রাশিয়ার পর দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাস খনি। তখন থেকে কাতার এই তেল ও গ্যাস খনির উদ্বৃত্ত আয় এ অঞ্চলে উগ্রবাদী গোষ্ঠী এবং সশস্ত্র দলকে অর্থায়নের পিছনে ব্যয় করে আসছে।
এরপরে কাতারের দ্বিমুখী নীতি প্রকাশ্যে আসে। একদিকে সন্ত্রাসবাদ দমনের লক্ষ্যে আমেরিকানদের জন্য কাতারের সবচেয়ে বড় সেনাঘাটি ‘আল-আ“ি’ প্রদান করে অন্যদিকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদে জড়িত বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
এরপরে আশির দশকে আমেরিকা কাতারকে পাকিস্তানি নাগরিক খালেদ শেখ মাহমুদের সন্দেহযুক্ত কার্যকলাপের ব্যাপারে জানিয়ে দেয়। তারপরও কাতার তাকে আশ্রয় দেয়। এ বিষয়ে কাতারের এক মন্ত্রীর গোপন কথাও প্রকাশ্যে এসেছিল। পরেই তাকে পাচার করিয়ে দেয়। এই খালেদ মাহমুদই ২০০১ সালে ওসামা বিন লাদেনের জোগসাজসে টুইন টাওয়ার হামলা করে।
হামদ বিন খলীফার শাষনামলে আরোও বির্তকিত ঘটনা ঘটে। ২০০৭ সালে শেখ হাম্মাদ উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্মেলনে ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদিনাজাদকে দাওয়াত দিলে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। ২০১০ সালে আরব বিশ্বে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরব বসন্ত নামে শুরু হয়েছিলো সেটাকে কাতার ভরপুর সমর্থন দেয়। বিশেষত মিশরকে নিয়ে। শেষ পর্যন্ত কাতারের সমর্থনে ইখওয়ান ক্ষমতায় আসতে সক্ষম হয়েছিল। লিবিয়ার ত্রিপলীতেও কাতারের সমর্থনের উগ্রবাদের সূচনা ঘটে।
২০১১ সালে ইয়েমেন সঙ্কট নিরসনে উপসাগরীয় উদ্যোগ থেকে কাতার পিছু হটে। ২০১৩ সালে জুনে হাম্মাদ ক্ষমতা থেকে অবসর নেন। তার কিছু দিন পরেই মিশরে মুরসির পতন ঘটে।
২০১৪ সালে কাতারের সাথে উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে নতুন করে কূটনৈতিক সর্ম্পকে ফাটল ধরে। যখন সৌদি আরব আমিরাত এবং বাহরাইন নিজেদের দূত কাতার থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। যদিও পরবর্তীতে কুয়েতের মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতায় পৌছতে সক্ষম হয়। তারপরে একই বছরের ডিসেম্বরে নতুন করে দোহায় কূটনীতিকগন ফিরে আসেন।
সাম্প্রতিক রিয়াদ সামিটে শেখ তামিমের বিবৃতি নিয়েও চরম সমালোচনা সৃষ্টি হয়। যে বিবৃতি কাতারের ইরান এবং ইখওয়ানকে সমর্থন দেওয়ার কথা স্পষ্টরূপে জানিয়ে দিয়েছে।