Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

29kখােলা বাজার২৪।। শুক্রবার, ২ জুন, ২০১৭: আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ, সুন্দর, সাবলীল ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখার জন্যই গর্ভবতী মা ও প্রসূতির যথোপযুক্ত যত্ন এবং পরিচর্যা দরকার। এ জন্য প্রথমেই দরকার পরিবারের সবার মানসিকতার পরিবর্তন। মনে রাখতে হবে, এটি আল্লাহ তায়ালার অশেষ ও অপার রহমত। একজন নারী তার শরীরের ভেতর ধারণ করছে আরেকজন ক্ষদ্র্রাকৃতি কিন্তু পূর্ণাঙ্গ শিশুমানব। ক্ষদ্র্রাকৃতি এ মানব শিশু মায়ের পেটের ভেতরে বেড়ে ওঠার জন্য চাই পরিবেশবান্ধব অবস্থা। সেটি হবে খাদ্য, আলো, বাতাস, বিশ্রাম ও সময় মতো চিকিৎসকের পরামর্শ এবং সে অনুযায়ী পথ্য ও পরীক্ষা। গর্ভকালীন সময়কে এ জন্য তিনটি সময়ে ভাগ করা হয়েছে। লিখেছেন ডা: হামিদা বেগম
প্রথম গর্ভধারণের লজ্জা, বমি বমি ভাব, এসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি তাকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। অথচ এ সময়ই শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো পূর্ণতা লাভ করে (পিরিয়ড অব অরগানোজেনেসিস)। তাই মাকে এ সময় সহমর্মিতার পাশাপাশি বমি বেশি হলে বমিনাশক, অম্লনাশক, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের পাশাপাশি সবুজ শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। পাশাপাশি ছোট কয়েকটি রক্ত পরীক্ষা যেমন- রক্তের গ্রুপ, হিমোগ্লোবিন ও সুগার করে রাখা উচিত। খুব প্রয়োজন না হলে আলট্রাসনোগ্রাম করার দরকার নেই।

দ্বিতীয় তিন মাস
যাদের মাসিক অনিয়মিত, তাদের তারিখ নিশ্চিত করার জন্য ১২-১৪ সপ্তাহে এবং যাদের কোনো বংশগত বা জন্মগত সমস্যা আছে, যা শিশুর জন্মগত সমস্যা করতে পারে তা দেখার জন্য তাদের ২০-২২ সপ্তাহে আলট্রাসনোগ্রাম করতে হবে। গর্ভস্থ শিশুর শরীর গঠনের প্রয়োজনীয় উপাদান যেহেতু মায়ের কাছ থেকেই পায় তাই মাকে দিতে হবে সুষম খাবার, যাতে থাকবে পরিমিত পরিমাণ মাছ, গোশত, শাকসবজি, ডিম, দুধ, ফলমূল ও প্রচুর পানি। সাথে সাথে তাকে দুপুরে অন্তত দুই ঘণ্টা ও রাতে অন্তত সাত ঘণ্টা বিশ্রাম দিতে হবে। আগে টিকা দেয়া না থাকলে গর্ভাবস্থায় পাঁচ ও ছয় মাস শেষ হলে একটি করে টিকা দিতে হবে। তা ছাড়া গর্ভস্থ শিশুর বাড়ন্ত গঠনের জন্য মায়ের পুষ্টির জন্য তাকে বাড়তি আয়রন, ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে দিলে ভালো হয়।

তৃতীয় তিন মাস
এ সময় গর্ভের শিশু খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে। মোট গর্ভকালীন মায়ের ১০-১২ কেজি ওজন বৃদ্ধির বেশির ভাগ (৫০%) এ সময় হয়। কমপক্ষে পাঁচবার গর্ভবতী মাকে ডাক্তার দেখানো দরকার। প্রথম তিন মাসে একবার, ২৮ সপ্তাহে একবার, ৩৬ সপ্তাহে একবার ও পরে ১৫ দিন পরপর বা সমস্যা হলে সপ্তাহ পরপর দেখাতে হবে। এ সময় অনেক গর্ভবতী মায়ের পায়ে পানি আসে। পেট বড় হওয়ার জন্য মৃদু শ্বাসকষ্ট হয়, এসিডিটি হয় ও স্তন থেকে কিছু তরল পদার্থ নিঃসৃত হতে পারে। এগুলো গর্ভবতী মায়ের জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার। তাকে এসব বুঝিয়ে বলতে হবে। নিয়মিত ওজন ও প্রেসার মাপা, পেটের উচ্চতা (যত সপ্তাহ তত সে:মি:) মাপা ও কোনো জটিলতা দেখা দিলে, যেমন অস্বাভাবিক পেট বড় বা ছোট হওয়া, হঠাৎ রক্তভাঙা, খুব বেশি জ্বর হলে বা প্রেসার বেশি হলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসক দেখাতে হবে।

প্রসূতি মাকে অবশ্যই একজন ডাক্তার বা নিদেন পক্ষে একজন এসবিএ (স্কিলড বার্থ অ্যাটেন্ডেট) দিয়ে ডেলিভারি করানো উচিত এবং মাথা ছাড়া অন্য অঙ্গ বেরিয়ে গেলে, ডেলিভারির সময় ১২ ঘণ্টার বেশি হলে, অস্বাভাবিক রক্ত গেলে তাড়াতাড়ি তাকে হাসপাতালে স্থানান্তর করাই যুক্তিযুক্ত। ডেলিভারির পরে ও প্রথম দুই ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একে ডেলিভারির চতুর্থ ধাপও বলা হয়ে থাকে। এ সময় রক্তক্ষরণ, প্রেসার চেক করা ও ক্লান্ত পরিশ্রান্ত প্রসূতির বিশ্রামের ব্যবস্থা করা দরকার। শিশুর জন্মের পরই তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মায়ের কাছে আনতে হবে ও মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিশু মায়ের বুকে চুষতে থাকলে দুটো হরমোন তৈরি হয়। একটি হরমোন দুধ তৈরি করে ও অপরটি দুধের সাথে মিশে শিশুর দেহে প্রবেশ করে রোগ প্রতিরোধ করে ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়।

শিশুর জন্মের সাত দিন ও ছয় সপ্তাহ পরে তাকে আবার চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে, যিনি তাকে অন্যান্য সাধারণ চেকআপ করা ছাড়াও বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে ও জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে পরামর্শ দেবেন।

আমাদের দেশে প্রতি লাখে ৩২০ জন প্রসূতি গর্ভধারণজনিত জটিলতায় মারা যায়, পশ্চিমা বিশ্বে এ সংখ্যা মাত্র ৯ জন। পশ্চিমাদের উন্নত জীবনযাপন, গর্ভকালীন ও শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় উন্নত যত্নের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে। তাই আসুন আমরা সচেতন হই মায়ের গর্ভকালীন পুষ্টি ও নিরাপত্তার ব্যাপারে, মায়ের জন্য সুন্দর ও নির্ভরশীল পরিবেশ সৃষ্টি করি যেন দু’জনেই সুস্থ এবং শিশু বেড়ে ওঠে নির্ভাবনায়।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক (স্ত্রী রোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা।