খােলা বাজার২৪।। সোমবার , ৫ জুন, ২০১৭: এই সপ্তাহে ইংল্যান্ডে বোমা হামলা আমাদের চরমপন্থী ইসলামি সন্ত্রাসবাদের কথা মনে করিয়ে দেয়। সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর অভিযোগে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। কিন্তু সৌদি আরব ট্রাম্পের কাছ থেকে পেয়েছে ফ্রি পাস। ট্রাম্প সৌদির জন্য মুক্ত হস্ত উন্মোচন করেছেন। যদিও গত পাঁচ দশক ধরে সৌদি আরব সংর্কীণ, গোঁড়া এবং ইসলামের অসহনশীল সংস্করণ পালন ও বিস্তার করছে। যা মুসলিম বিশ্বের কোথাও পালন করা হয় না। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১’র হামলাকারী ওসামা বিন লাদেনও সৌদিই ছিলেন।
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ফাঁস হওয়া ই- মেইল থেকে জানা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরব কাতারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে এই অঞ্চলে গোপন অর্থায়ন করছে এবং আইএসসহ অন্যান্য মৌলবাদী সুন্নী গোষ্ঠিকে সমর্থন দিচ্ছে। এই ই-মেইলে আরো বলা হয়, আইএসএর বিদেশি যোদ্ধাদের মধ্যে বৃহত্তর অংশ জুড়ে আছে সৌদি নাগরিকরা এবং ইরাকের সন্ত্রাসী গোষ্ঠির হয়ে কাজ করা যোদ্ধাদের বড় অংশই সৌদি নাগরিক। এছাড়া সৌদি আরবের সঙ্গে ইয়েমেনের আল-কায়দা গোষ্ঠির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিদ্যমান।
আইএস সৌদি আরবে ইসলামের ওয়াহাবি মতাদর্শের প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য প্রকাশ করেছে। আইএস তাদের নিজস্ব বইপত্র তৈরি করার আগে এটি সৌদি আরবের বই-পুস্তক নিজেদের বলে ব্যবহার করত। ২০১৬ সালে সৌদি আরবের গ্রান্ড মসজিদের সাবেক ইমাম এই ইস্যুতে বলেছিলেন, ‘আইএস আমাদের নীতি ও আদর্শ নিয়ে শোষণ করছে, আমরাও একই মতাদর্শে বিশ্বাসি কিন্তু আমরা এটির শুদ্ধ প্রয়োগ করি।’
এখন সৌদিআরবের অর্থায়নের মোড় ঘুরেছে ইউরোপিয় ইসলামের দিকে। জার্মানির গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়, চ্যারিটি সংস্থাগুলো জার্মানির মসজিদ এবং স্কুলে মৌলবাদী, এবং ইসলামের অসহিঞ্চু মতবাদের প্রচার করছে। এই সংস্থাগুলো গোপনভাবে সৌদিআরব, কাতার এবং কুয়েতের প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
কসোভোতে নিউ ইয়র্ক টাইমসের ক্যার্লোটা গাল বলেন, ‘ইসলামের ৫০০ বছরের সেই মধ্যপন্থী পুরোনো ঐতিহ্য ধ্বংস হতে চলছে।’ সেই জায়গায় এখন সৌদি প্রশিক্ষিত ইমামরা ওয়াহাবী মতাদর্শের প্রচার চালাচ্ছেন, যা সহিংস জিহাদ, তাকফিরিজম এবং কঠোর শরীয়া আইনের দীক্ষা দিচ্ছে। যে শিক্ষা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোন মতবাদ সম্পন্ন ব্যক্তিকে হত্যার অনুমোদন দেয়। চ্যারিটি সংস্থাগুলো কৌশলে এর বাস্তবায়ন করছে, তারা পরিবারগুলোকে মসজিদে নিয়মিত প্রার্থনা ও নারী এবং শিশুদের পর্দা করানোর শর্তসাপেক্ষে মাসিক অর্থ প্রদান করে থাকে।
সৌদি সরকার এর গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো খুব ধীরে সুস্থে করছে। এখন এর ঝা-া হাতে তুলে নিয়েছেন তরুণ বুদ্ধিমান সংস্কারক সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি দুবাইয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাখতুমের মত প্রগতিশীল ও বাস্তববাদী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। কিন্তু এই পর্যন্ত সৌদি আরবে যত সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য, ধর্মীয় মৌলবাদী চিন্তাধারার উৎপাটনের জন্য নয়।
ইসলামের ওপর সৌদিতে দেয়া বক্তৃতায় ট্রাম্প জিহাদী সন্ত্রাদবাদের শিকার হওয়া মুসলানদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়েছেন। কোন রাষ্ট্রের নাম না নিয়েই তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসীদের নিরাপদ স্বর্গ সৃষ্টি, আর্থিক অর্থায়ন এবং তাদের পক্ষে অবস্থান করা বন্ধ করলে সন্ত্রাসবাদ টিকে থাকতে পারবে না। কিন্তু ট্রাম্প একবারের জন্যও সৌদি আরব সম্পর্কে মন্তব্য করেন নি। তবে ইরানের কথা উল্লেখ করেছেন। এটি স্পষ্ট যে, মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করার পেছনে ইরানের ভূমিকা আছে। কিন্তু ইরানকে জিহাদী সন্ত্রাসবাদের উৎস হিসেবে উল্লেখ করা বড় ধরনের ভুল।
গ্লোবাল টেরোরিজম ডাটাবেজের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লন্ডনের কিং কলেজের লিফ ওয়েনার বলেন, ২০০১ সাল থেকে ৯৪ শতাংশেরও বেশি মৃত্যু আইএস, আল-কায়দা এবং অন্যান্য সুন্নী জিহাদীদের ইসলামি সন্ত্রাসবাদের কারণে সংঘটিত হয়েছে। ইরান এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠিগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, তাদের ম“ দিচ্ছে না। পশ্চিমা বিশ্বে এই পর্যন্ত যত সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে তার সঙ্গে সৌদি আরবের সংযোগ রয়েছে, কিন্তু ইরানের সঙ্গে কোন সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় নি।
সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ট্রাম্প সৌদি আরবের পথ অবলম্বন করেছেন, যার ফলে তিনি সৌদির বিরুদ্ধে যে কোন অভিযোগকে ইরানের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি করেছেন এবং ফার্স্ট ডটার ইভানকা ট্রাম্পের প্রভাবে সৌদি আরব বিশ্বব্যাংকে অনুদান দিয়েছে। ২০১৬ সালে ট্রাম্প ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, ক্লিনটন ফাউন্ডেশন সৌদিআরব সহ বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ গ্রহণ করে যে দেশগুলো নারীদের দাসী হিসেবে ব্যবহার করে এবং পুরুষদের হত্যা করে। হিলারীর এই সবদেশের অর্থ ফেরত দেয়া উচিত।
শিয়া ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যা ওয়াশিংটনকে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সাম্প্রদায়িক সংঘাত, আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা এবং ইরাকের মত দেশগুলোর সঙ্গে জটিল সম্পর্ক ইস্যুতে নতুনভাবে যুক্ত করবে। কিন্তু সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি ‘জিহাদী সন্ত্রাসবাদ’ রোধে কোন কাজেই আসবে না। আমি মনে করি , ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি গ্রহণ করবেন, সৌদি নয়।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন লিহান লিমা