খােলা বাজার২৪।। বৃহস্পতিবার , ৮ জুন, ২০১৭: জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড। প্রায় দেড় হাজার বর্গমাইলের বিস্তীর্ণ এলাকাটি বিরল জীববৈচিত্র্যের নিরাপদ প্রজননকেন্দ্র যা প্রস্তাবিত ব্লু-ইকোনমির জন্য হয়ে উঠতে পারে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র কয়েকদিনের গবেষণায় পাখি, তিমি ও শামুখসহ তিন প্রজাতির প্রাণির সন্ধান পাওয়া গেছে। এই নতুন আবিষ্কারকে সমুদ্র গবেষকরা মাইলফলক হিসেবে নিয়ে আগামীতে দীর্ঘ মেয়াদি গবেষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বঙ্গোপসাগরের মৎস্য ভান্ডার হিসাবে দীর্ঘ সময় ধরে পরিচিত সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে মাছের পাশাপাশি আছে বিশাল আকারের তিমি, ডলফিন, হাঙ্গর, বিরল প্রজাতির কিছু কচ্ছপ আর আকাশে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ওড়াউড়ি। সম্প্রতি সোয়াচে গবেষণা চালিয়ে এমন এক পাখির সন্ধান পাওয়া গেছে যে পাখির পরিচয় বা নাম দেশের কোন রেকর্ডে উল্লেখ নেই। পাখিটির নাম বুবি।
অন্যদিকে ডলফিনের ঝাঁকের ভেতরে পাওয়া গেছে নতুন প্রজাতির তিমির সন্ধান। এ ধরণের তিমির বিষয়ে গবেষকদের জানা ছিলো না। এর নাম মেন্ক তিমি।
এছাড়া সাগরের গভীরে একধরণের শামুখের দেখা মিলেছে। যা দেশের সমুদ্র সম্পদের তালিকায় নতুন জায়গা করে নিয়েছে। সম্প্রতি সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে ওই এলাকায় পাওয়া জীববৈচিত্র্য সম্বন্ধে এসব তথ্য দিয়েছেন একদল গবেষক।
বাংলাদেশের দক্ষিণে যেখানে সুন্দরবন শেষ সেখান থেকেই শুরু সমুদ্র যাত্রা আরো ১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই দেখা মিলবে নীল জলরাশির বিস্তীর্ণ রাজ্য যার নাম সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড অর্থ্যাৎ নেই যার কোনো তল।
ইতিহাস বলছে, আঠারশো শতকের শেষ দিকে ডুবে যাওয়া একটি বৃটিশ জাহাজের কোনো নিশানা না পেয়েই জেলেরা এই জায়গাটির নাম দেয় অতল সাগর বা সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড।
জায়গাটিতে জাল ফেললে মাছও পাওয়া যায় বেশি আবাক হলেও বারবার জেলেরা যাচ্ছেন এই এলাকাতেই। ২০১৪ সালে সোয়াচকে সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণা করে সরকার।
সেই তলাবিহীন নীল জলরাশিতে ১৩ জন অভিযাত্রী, গবেষক ও স্কুবা ডাইভাররা চষে বেড়িয়েছেন জীববৈচিত্র্যের সন্ধানে। ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে আর নৌবাহিনীর জাহাজ করতোয়ার সহায়তায় এই অভিযাত্রার নাম দেয়া হয় সাগর ও জীবনের সন্ধানে।
এ এলাকায় চারদিকে অথৈ জল আর দিগন্তজোড়া নীলামায় হৃদয় যেমন আপ্লুত হয় তেমনি সাগরতলের মূল্যবান জীববৈচিত্র্যের তথ্যভান্ডার অবাক করে গবেষকদেরও। তারা বলছেন, সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড আসলে সাগর তলের একটি গভীর উপত্যকা বা মেরিন ভ্যালি। এখানে পানির রং পরিবর্তিত হয়ে নীল আকার ধারন করেছে। নানাজাতের মাছ, বিশালাকৃতির তিমি-হাঙ্গর, ঝাঁকে ঝাঁকে ডলফিনসহ বহু সামুদ্রিক প্রাণি নিরাপদে ঘুরে বেড়ায় এ মেরিনভ্যালিতে।
আর সাগরতল ঘুরে এসে ডুবুরিরা বলছেন, সোয়াচের তলদেশ রহস্যে ভরা। সোয়াচের অজানা রহস্য জানতে আর জানাতে আগামী ডিসেম্বরে আরও বড় আকারের অভিযানে নামছে গবেষক দলটি।