খােলা বাজার২৪।। বৃহস্পতিবার , ৮ জুন, ২০১৭: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তারা জনসংযোগের কাজ শুরু করেছেন। এ আসনেটি নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার একাংশ সখিপুর থানা নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬১ হাজার ২২৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৩১জন ,নারী ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২৯৭ জন। এ আসনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী তারা জনসংযোগের কাজ শুরু করেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন। আর বিএনপির প্রার্থীরা মাঠেই নেই। সরকারী দলের মামলা হামলার ভয়ে এলাকায় আসেন না অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশীরাই।
এ আসনে ও আওয়ামীলীগ ও বিএনপির বেশ কয়েকজন ভিআইপি প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের যে সকল মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম শোনা যায় তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল অব শওকত আলী । তিনি এ আসনে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। যদি ও তিনি বয়সে ন্যুয্যমান। তার পরে ও কে না চায় ক্ষমতা। গত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আইজিপি’র ছোট ভাই একেএম ইসমাইল হককে দলীয় মনোনয়ন না দেয়ায় দীর্ঘ ৪ বছর রয়েছেন তিনি তোপের মুখে। আইজিপি’র ভাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়ে এলাকায় রাজনৈতিক রাম রাজত্ব কায়েম করে তাকে রেখেছেন কোনঠাসা করে। এলাকার জনপ্রতিনিধি হয়ে ও তিনি পারেননি অনেক কর্মকান্ডে শরিক হতে। তিনি এলাকায় তেমন উন্নয়ন করতে পারেননি। এলাকার রাস্তা ঘাটের বেহালদশা। আভ্যন্তরীন কোন্দল নিয়ে এলাকায় বহু মারামারি হয়েছে।বহু নেতা কর্মী আহত ও পঙ্গুত্ব বরন করছে। এ সকল ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ আসনে দল দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে আওয়ামীলীগ কর্মীরা দু’টি মেরুতে অবস্থান নিয়েছে।বর্তমানে এ আসনে একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগেরে সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি একেএম এনামূল হক শামীম,অপর গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল অব শওকত আলী। তবে এর বাইরে ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী রয়েছে। যারা গ্রুপিং চায়না তারা শান্তি প্রিয় প্রার্থী চায়।
এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগেরে সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি একেএম এনামূল হক শামীম। তিনি তার বিভাগের কর্মকান্ডের ফাকে এলাকায় মাঝে মধ্যে এসে জনসংযোগ করছেন। সভা সমাবেশ থেকে শুরু করে সামাজিক অনুষ্ঠানে ও তিনি উপস্থিত হয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। গত জেলা পরিষদের নির্বাচনে দলের প্রার্থীর পক্ষে তার সমর্থন ছিল নিখুত। এ কারনে দলের নেতাকর্মীরা তার উপর খুশি ।
এ আসনে আরেক ভি আাই পি নেতা নড়িয়া সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আর্ন্তজাতিক মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত এটর্নী জেনারেল এডভোকেট সুলতান মাহমুদ সীমন। তিনি ও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করেছেন। সারা জীবন আওয়ামীলীগ করেন। এলাকায় তার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি ও মনোনয়ন লাভের জন্য চেষ্টা তদবীর চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে বর্তমান সংসদ সদস্য কর্নেল শওকত আলী চান তিনি বয়সের ভারে মনোনয়ন না পেলে তার ছেলে ডাঃ খালিদ শওকত কে মনোনয়ন পায়। সে চিন্তা মাথায় রেখে তার ছেলে ডাঃ খালিদ শওকত এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন। তবে মনোনয়ন নির্ভর করছে দলীয় সভানেত্রীর উপর ।
এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী সুলতান সরর্দা । এরপূর্বে ও তিনি এ আসনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছিলেন। তবে এ আসনে জাতীয় পার্টির ভোট সীমিত।
এ আসনে বিএনপি’র ও একাধিক প্রার্থী রয়েছে। যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এডভোকেট জামাল শরীফ হিরু । তিনি বিএনপির ত্যাগী নেতা হিসেবে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন। এ জেলায় বিএনপি দুটি’ অংশে বিভক্ত একাংশের নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি। তিনি কেএম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গজেব এর সঙ্গে এক হয়ে কাজ করেছেন। একায় তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। রাজনীতিতে তার মধ্যে যথেষ্ট স্বচ্ছতা রয়েছে।
এ আসনে রয়েছেন আরেক ভি আই পি নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি সফিকুর রহমান কিরন। মূলত তিনি একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক এবং ব্যবসায়ী।তার অনেক টাকা পয়সা আছে । বেশীর ভাগ সময়ে তিনি দেশ বিদেশে ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত থাকেন। বাকি সময় তিনি কাটান ঢাকায়। দলীয় সকল কর্মকান্ড তিনি ঢাকায় বসে নেতাকর্মীদের ডেকে নিয়ে সেরে নেন। কেননা বিএনপির লাগাতা হরতাল অবরোধ ও ধর্মঘট চলাকালীন সময়ে ৩ বছর পূর্বে ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদরে রাতের আধারে কেবা কারা একটি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় তাকে মামলার আসামী করা হয়েছে। ঐ মামলায় বাকি সব আসামীরা জেল খেটে জামিনে মুক্তি পেলে ও তিনি মামলায় হাজিরা না দিয়ে পলাতক রয়েছেন। তিনি এ আসনে এর পূর্বে ২০০৮ সালের ও বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেছেন। এখানে রয়েছ তার যথেষ্ট পরিচিতি ও ভক্ত। তিনি নির্বাচনে পরাজয়ের পর এ আসনে একদিনের জন্য ও জনসংযোগ তো দুরের কথা নড়িয়া বাজারের উপর দিয়ে বাড়িতে যেতে পারেননি। তবে এ আসনে বিএনপির তিনি একজন শক্ত ও শক্তিশালী প্রার্থী।
এ ছাড়া এ আসনে বিএনপির আরেক ভিআইপি’র নাম শোনা যায়। তিনি হলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠা লগ্নে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিশিষ্ট শিল্পপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী জেলা বিএনপির সাবেক সফল সভাপতি আলহাজ টিএম গিয়াস উদ্দিন। তিনি এ আসনে একাধিকবার বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করেছেন।
নাম শোনা যায় একজন অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার । দীর্ঘ ১৩টি বছর সুনামের সঙ্গে তিনি সেনাবাহিীর একজন কর্ণেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অবসর গ্রহন করেছেন। শরীয়তপুরে তার যথেষ্ট পরিচিতি ও সুনাম রয়েছে। তিনি জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। জেলা বিএনপির সভাপতির গ্রুপে সমর্থন না করায় তাকে বর্তমান জেলা কমিটি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তিনি ও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এ আসনে বিএনপির প্রার্থীরা দুর থেকে নেতা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন।তারা বেশীর ভাগ সময়ে ঢাকায় বসবাস করেন। নির্বাচন আসলেই তারা এলাকায় এসে টাকা পয়সা খরচ করে ধুমধাম করে নির্বাচন করে চলে যান। এরপর আর ৫ বছর তাদেরকে এলাকায় দেখা যায় না। তারা তাদের প্রয়োজনে দলীয় নেতা কর্মীদেরকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে দলীয় ফরজ কাজ গুলো সেরে নেন। যাতে করে দলীয় পদপদবী ঠিক থাকে। এ কারনে এ আসনে বিএনপির শত সম্ভাবনা থাকলে ও ক্ষেতের ধান ঘরে নিতে ব্যর্থ হয়। কেননা দলীয় ভীত তারা গড়ে তুলতে পারেনা। এ আসনে আওয়ামীলীগের অবস্থানটা শক্ত। স্বাধীনতার পর এ আসনে কর্ণেল অবঃ শওকত আলী ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এ আসনে আওয়ামীলীগ দলকে নিজেদের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছে।
এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দিতা হবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে। এ আসনে জাতীয়পার্টি কোন দলের সঙ্গে জোট গঠন করবে এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। এতে কোন প্রাথী পিছিয়ে যাওয়া বা এগিয়ে যাওয়ার বিষয় নেই। দল আছে সাইনবোর্ড আছে তবে তাদের কোন কার্যক্রম নেই। এ আসনে আওয়ামীলীগের কোন্দল মিটে গেলে আর একযোগে নেতাকর্মীরা কাজ করলে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। তবে প্রার্থী নির্বাচনের উপর নির্ভর করবে জয় পরাজয়। । কেননা এ আসনের সখিপুর থানার অংশে বিএনপির ভোট একচেটিয়া। নড়িয়ার অংশে ভোট আওয়ামীলীগের বেশী। সব কিছু হিসেব কষে মনোনয়ন দিলে জয় পরাজয় বিষয়টি সহজ ও কঠিন হবে। এ আসনে বিএনপির নেতা কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত। এ আসনে কোন্দল মিটাতে না পারলে নির্বাচনে ভাল ফলাফল ভাল করার সুযোগ ক্ষীন। তবে এ আসনে আওয়ামীলীগ বিএনপির দুটি দলেই আভ্যন্তরীন কোন্দল রয়েছে প্রকট।