Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। শুক্রবার , ৯ জুন, ২০১৭:  9সাত মাসেও সন্ধান মেলেনি বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার হারুন চৌধুরীর বাসা থেকে নিখোঁজ কিশোরীর। অন্যদিকে, এ ঘটনায় দায়ের করা মানব পাচার মামলায় হারুন চৌধুরীকে গ্রেফতারের পরও ছেড়ে দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। গ্রেফতারের বিষয়টি আদালতকে অবহিত না করায় এরইমধ্যে আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে ডেকে ভৎর্সনা করেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আসামি হারুন চৌধুরী প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না।
মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, গত বছরের শুরুর দিকে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে আম্বিয়া খাতুন নামের এক নারীর মাধ্যমে কিশোরীর বাবা আবুল বাশার ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার হারুন চৌধুরীর বাসায় মাসিক দুই হাজার টাকায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে দেন। গত বছরের ২২ অক্টোবর মেয়েকে বাড়ি পাঠানোর জন্য হারুন চৌধুরী ও তার স্ত্রীকে অনুরোধ করেন কিশোরীর বাবা। এ সময় হারুন চৌধুরীর মেয়ের জামাই লিটন কিশোরীকে বাড়ি যাওয়ার জন্য ছুটি দেওয়া যাবে না বলে মোবাইল ফোনে জানায়। কিশোরীর পিতা নিরুপায় হয়ে ওয়ার্ড কমিশনারের বাড়িতে যান। এ সময় আসামিরা তাকে আটকে রেখে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে বের করে দেয়। নিখোঁজ কিশোরীর বাবা আবুল বাশার এ প্রতিবেদককে জানান, ওই ঘটনার পর তিনি একাধিকবার হাজারীবাগ থানায় মামলা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পরে গত বছরের ২৭ অক্টোবর আদালতে নালিশি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে আসামি আম্বিয়া খাতুন, হারুন চৌধুরী, তার স্ত্রী ও মেয়ের স্বামী লিটনের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা রেকর্ড করে হাজারীবাগ থানা পুলিশ। জানা গেছে, বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক মো. খুরশীদ আলম গত ৯ মে হারুন চৌধুরীকে গ্রেফতার করেন। গত ১১ মে লিখিতভাবে আদালতকে বিষয়টি জানালেও কাকে গ্রেফতার করেছেন, ওই আসামি কোথায় রয়েছে তা আদালতকে অবহিত করেননি।
গত ২২ মে ঢাকার মহানগর হাকিম জিয়ারুল ইসলাম দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আদালতে হাজির হয়ে আসামি কোথায় এবং কেন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়নি তার জবাব দিতে আদেশ দেন। গত ২৪ মে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে হাজির হয়ে আসামি হারুন চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল বলে জানান। গ্রেফতারের পর পরই আসামি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হারুন চৌধুরীকে মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পিপি আবদুল্লাহ আবু জানান, আসামিকে গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির না করে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি পুলিশের। এমন ঘটনায় পরবর্তীতে আদালত এ সংক্রান্ত একটি আদেশ দেয়। আদেশে তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তনের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে আদালত সূত্র নিশ্চিত করেছে। হারুন চৌধুরীকে আইন মেনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে দাবি করে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শামসুন নাহার জানান, আইন মেনেই আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আসামি নিখোঁজ কিশোরীকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তবে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তার বিষয়ে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। বাদী পক্ষের আইনজীবী এসএম জাহিদ হোসেন সরদার জানান, গত বৃহস্পতিবার মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হারুন চৌধুরী, তার স্ত্রী এবং শ্যালক লিটন ও আম্বিয়া খাতুন ঢাকা মহানগর আদালত এলাকায় আত্মসমর্পণ করতে এসেছিলেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে জামিন আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু তিনজনের জামিন হওয়ায় আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) গোলাম মোস্তফা চারজনের তালিকা থেকে হারুন চৌধুরীর নাম গোপনে সরিয়ে দেন। তিনি আরও বলেন, মানব পাচার মামলার আসামিকে কোনোভাবেই সিআইডি জামিন দিতে পারে না। যেখানে নিখোঁজ মেয়েটিই উদ্ধার হলো না সেখানে আদালতের নির্দেশ ছাড়াই তাকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার আনিসুর রহমান জানান, মানব পাচারের ওই মামলায় তিন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন লাভ করেছেন। অপর আসামি অজ্ঞাত কারণে আত্মসমর্পণের জন্য আদালতে আসার পর আত্মসমর্পণ করেননি। আদালত সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার আসামি হারুন চৌধুরী পুলিশ ক্লাবের বিপরীতে একটি হোটেলে বসে জিআরও গোলাম মোস্তফার সঙ্গে গোপন পরামর্শ করেন। প্রথমে তার আদালতে আত্মসমর্পণের কথা ছিল। পরে তার পরামর্শ অনুযায়ী হারুন চৌধুরী সেখান থেকে সটকে পড়েন। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন