Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। শনিবার , ১০জুন, ২০১৭: 28ফরিদপুর শহর থেকে ভাঙ্গা উপজেলা হয়ে নগরকান্দা উপজেলা। তারপর সালথা উপজেলার গ্রামগুলোতে যাওয়ার পথে দুটি জিনিস নজর কেড়ে নিল। একটি হলো জেলার সঙ্গে উপজেলা, উপজেলার সঙ্গে ইউনিয়ন ও ইউনিয়নের সঙ্গে প্রত্যন্ত গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়কগুলোকে নম্বর দেওয়া হলে বিনা দ্বিধায় দশে দশ দিতে হবে।
প্রতিটি সড়ক পরিচ্ছন্ন। বেশির ভাগ সড়কে নতুন করে পিচ ঢালা হয়েছে। রাস্তা একেবারে ঝকঝকে। পুরোনো সড়কগুলোও ময়লা-আবর্জনা মুক্ত। সড়কের দুই পাশে গাছপালার ঘন সন্নিবেশ। বেশির ভাগ গাছই মূল্যবান কাঠের জোগানদার। মেহগনি, একাশিয়া, লম্বু, ইউক্যালিপটাস ইত্যাদি। বেশ খানিকটা ব্যবধানে একটি-দুটি করে কৃষ্ণচূড়া। চিরল চিরল সবুজ পাতা ভরা ঝাঁকড়া মাথায় রক্তিম ফুলের বাহার ছড়িয়ে প্রকৃতির শোভা বাড়াচ্ছে। উপজেলার সঙ্গে জেলার সংযোগ সড়কগুলোতে বাস, মিনিবাস, ভটভটি আর ইজিবাইক চলছে। তবে যানবাহনের চাপ খুব বেশি নয়। উপজেলার সঙ্গে ইউনিয়ন বা ইউনিয়নের ভেতর গ্রামীণ সড়কগুলো একরকম ফাঁকাই বলা যায়। দু-পাশে দাঁড়ানো সারি সারি সবুজ গাছের ভেতর দিয়ে কালো মসৃণ দীর্ঘ পথ কখনো সরল রেখায়, কখনোবা বাঁক নিয়ে সুদূরে চলে গেছে। যাঁরা এখানে আসবেন, তাঁদের স্বীকার করতেই হবে, অনেক উন্নত হয়েছে জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এরপর যে জিনিসটি নজর কেড়ে নিল, তা সড়কের দুই পাশে ফসলের মাঠ। যত দূর চোখ যায়, ঘন সবুজ পাটের জমি। গাছগুলো মানুষের বুক বা গলা সমান উঁচু। এতে দূরের গ্রামের ঘরবাড়িগুলো তেমন দেখা যায় না। পাট খেতের হালকা সবুজের ওপরে গ্রামগুলো গাঢ় সবুজ রেখার মতো লাগে।
এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বৃহত্তর ফরিদপুরের প্রধান ফসল হলো পাট। এখানে বেশির ভাগ জমি দুই ফসলি। কোনো কোনো এলাকায় যেমন গোপালগঞ্জের পূর্বাঞ্চলে বছরে শুধু একটিই ফসল হয়। বোরো ধান। অগ্রহায়ণ থেকে রোপণ শুরু, চৈত্রের শেষ দিকে কাটা শুরু বৈশাখে কাটা শেষ। তার পর থেকে জমি পতিত থাকে।
কারণ পাট বা অন্য ফসল করলে তা কেটে ঘরে তোলার আগেই জমিতে বন্যার পানি এসে যায়। দুই ফসলি জমিতে, পেঁয়াজ বা মসুর, কালোজিরা, গম বা বোরোর পরে পাট লাগান হয়। চৈত্রের প্রথম দিকে পাটের বীজ বোনা শুরু হয়, কাটা শুরু হয় আষাঢ়ের শেষ দিকে। তখন বিলঝিলগুলো ভরে ওঠে। পাট পচাতে সুবিধা হয়। মাঠে মাঠে পাট কাটা জাগ দেওয়া, পানিতে ডোবানো, আঁশ ছাড়ানো, রোদে শুকানো এসব নিয়ে মাস দেড় দুয়েক বেশ ব্যস্ত থাকেন গৃহস্থরা।
পাট ওঠার আগে এখন মধ্যবর্তী এই সময় কর্মহীন থাকছেন ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষক ও দিনমজুরেরা। ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা গ্রামের আলি মিয়া ব্যাপারী, মান্নান খলিফা, দেওড়া গ্রামের নূর হোসেন ব্যাপারীসহ অনেকে ভূমিহীন কৃষকের সঙ্গে কথা হলো। তাঁরা জানালেন, এই সময়টায় তাদের কোনো কাজ থাকে না। শ্রমিকদের দিনমজুরি এখন ৪০০ টাকা। মাঠে কাজ না থাকায় এত দামে মজুর কে নেবে? তাই গ্রামের নিম্ন আয়ের বেশি ভাগ পুরুষ মানুষ ঢাকা, টাঙ্গাইল, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় চলে যান। তাদের অনেকে দিনমজুরি করেন। অনেকে ছাতা মেরামত করেন। আর যাদের কিছু পুঁজিপাটা আছে তারা ফেরি করে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন। আবার পাট কাটার সময় হলে তারা গ্রামে ফিরবেন। বহু বছর থেকে এই অঞ্চলে জীবনযাত্রার এই নিয়ম চলছে।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জি এম আবদুর রউফ জানান পাট ফরিদপুরের প্রধান ফসল। এবার বাম্পার আবাদ হয়েছে। জেলায় চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮২ হাজার ৫০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ৮২ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ২৬৫ হেক্টরে হয়েছে মেস্তা পাট। বাদবাকি সবই তোষা জাতের। পাটের আবাদ এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।