Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements
bandorban_land_slide_daily sun_pic
খােলা বাজার২৪।। বুধবার ,১৪  জুন, ২০১৭: টানা বর্ষণে পাহাড়ে মৃত্যুর মিছিল চলছে। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে লাশের সংখ্যা। পাহাড় ধসে মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত ১৩১ জনের লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব জি এম আবদুল কাদের জানান, রাঙ্গামাটিতে ৯৮ জন, চট্টগ্রামে ২৭ জন ও বান্দরবানে ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার ভোর থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এখনও উদ্ধার কাজ চলছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্ধারকর্মীরা।

মানিকছড়িতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে পাহাড় থেকে ধসে পড়া মাটি অপসারণের সময় ছয় সেনা সদস্য নিহত হন। তারা হলেন- মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভীর আহমেদ, সিপাহী আজিজ, শাহীন, ল্যান্স কর্পোরেল আজিজ ও সিপাহী মামুন। আইএসপিআর’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাহাড় ধসের পর উদ্ধার অভিযানে গিয়ে আহত হন আরও ১০ সেনা সদস্য এবং নিখোঁজ আছেন একজন। উদ্ধারকারীদের মারফতে জানা গেছে এখনও বেশ কজন মাটিচাপায় পড়ে আছেন। উদ্ধারে অভিযান এখনও চলছে।

ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্থানে মোট ২৭ জন নিহত হয়েছেন। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় এই ঘটনা ঘটে। এর মধ্য রাঙ্গুনিয়েতেই নিহত হয় ১৯ জন। চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোরশেদুল আলম এ হতাহতের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামাল হোসেন জানান, রাজানগর এবং ইসলামপুর ইউনিয়নে পাহাড় ধসে এখন পর্যন্ত ১৯ জন মারা গেছেন। ১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে নিহতদের সবার বিস্তারিত নাম ও পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।

চন্দনাইশ : রবিবার থেকে ওই এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে সোমবার রাত ২টার পর ভারী বৃষ্টি ও সঙ্গে বজ্রপাতসহ ঝড়ো হাওয়া হয়। এরপরই এই পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার ভোর ৪টায় চন্দনাইশের দুর্গম এলাকা দোপাছড়ি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের শামুকছড়িতে পাহাড়ধসে এক শিশুসহ চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন শামুকছড়ির শিশু মাহিয়া(৩), ছনবনিয়ার ২নং ওয়ার্ডের উপজাতি এলাকার সিনসাও কেয়াংয়ের স্ত্রী মোকা ইয়ং কিয়াং (৫০), কেলাও অং কেয়াংয়ের কিশোরী কন্যা মেমো কেয়াং (১৩) ও ফেলাও কেয়াংয়ের শিশু কন্যা কেওচা কেয়াং (১০)।

রাঙামাটি : টানা বর্ষণে পাহাড়ের মাটিচাপায় রাঙামাটি শহরের রিজার্ভবাজার, ভেদভেদী, শিমুলতলী, মোনঘর ও মানিকছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে ৫৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটি শহরে ২৪ জন, কাপ্তাইয়ে ১৫ জন, কাউখালীতে ১৫ জন ও বিলাইছড়িতে দুইজন ও জোড়াছড়িতে দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

মানিকছড়িতে পরিচয় পাওয়া নিহতরা হলেন- রুমা আক্তার (২৫), নুর আক্তার (৩), হাজেরা (৪০), সোনালি চাকমা (৩০), এক বছর বয়সী শিশু অমিয় কান্তি চাকমা, আইয়ুশ মল্লিক (২), চুমকি মল্লিক (২), লিটন মল্লিক (২৮), অজ্ঞাত (২২), মিন্টু ত্রিপুরা (৪৫), আবদুল আজিজ (৫৫), অজ্ঞাত (৩২), মিলি চাকমা (৫৫), ফেন্সি চাকমা (৪)।

কাউখালীর যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন ফাতেমা বেগম (৬০), মনির হোসেন (২৫), মো. ইসহাক (৩০), দবির হোসেন (৮৪), খোদেজা বেগম (৬৫), অজিদা খাতুন (৬৫), মংকাচিং মারমা (৫২), আশেমা মারমা (৩৭), শ্যামা মারমা (১২), ক্যাচাচিং মারমা (৭), কুলসুমা বেগম (৬০), বৈশাখী চাকমা (১০), লায়লা বেগমের (২৮) মরদেহ উদ্ধার করে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এদিকে কাপ্তাই রাইখালীর কারিগর পাড়ায় নিহত চারজনের নাম তাৎক্ষণিক পাওয়া যায়নি। এর আগের দিন সোমবার রাঙামাটি শহরের পুলিশ লাইন এলাকায় এক শিশু এবং কাপ্তাইয়ের নতুন বাজারে এক শিশু পাহাড়ের মাটিচাপায় মারা যায়। এছাড়া কর্ণফুলী নদীতে পড়ে ইকবাল নামের এক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন।

এদিকে সোমবার রাত থেকে রাঙামাটি শহরের অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া রাঙামাটির সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন। এতে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

বান্দরবান : জেলার বিভিন্ন এলাকায় অতি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে শিশুসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও কমপক্ষে পাঁচজন। মঙ্গলবার ভোররাত পৌনে ৪টার দিকে জেলার পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কালাঘাটা এলাকার ত্রিপুরা পাড়াসহ দুর্গম কয়েকটি এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে চার জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলো- শহরের আগাপাড়ার একই পরিবারের শুভ বড়ুয়া (৮), মিঠু বড়ুয়া (৬), লতা বড়ুয়া (৫) ও কালাঘাটা কবরস্থান এলাকার রেবি ত্রিপুরা (১৮)।

এ ঘটনায় এখনও জাইল্লাপাড়ায় কামরুন্নাহার ও তার মেয়ে সুফিয়া (২০) নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন।