খােলা বাজার২৪।। বুধবার ,১৪ জুন, ২০১৭: আবহাওয়ার বৈরিতার কারণে প্রচ- বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রামের খাড়া পাহাড়গুলো ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। একদিকে মাটি কেটে পাহাড়খেকোদের আবাসন তৈরির ব্যবসা, অন্যদিকে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও সরকারি নিয়মনীতি না থাকার কারণে বন্দর নগরীতে প্রতিবছরই ঘটছে পাহাড়ধসে হতাহতের ঘটনা। গত ১৫ বছরে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে মারা গেছেন অন্তত ৩৩০ জন। বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না আবহাওয়া কর্মকর্তা ও পরিবেশ অভিজ্ঞরা। তারা বলছেন, সামান্য বৃষ্টিপাতেই পাহাড় থেকে খসে পড়ছে বড় বড় মাটি। গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিলো ১৫১ মিলিমিটার। গতকাল মঙ্গলবার আবারো ১৩১ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। এভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিকহারে বৃষ্টিপাত হতে থাকলে পাহাড়ধস আরো বড় আকার ধারণ করবে। তাই সময় থাকতে প্রশাসনের উচিত পাহাড়ের পাদদেশ থেকে লোকজনকে স্থায়ীভাবে সরিয়ে আনা। একইসঙ্গে যারা পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইদ্রিছ আলী বলেন, প্রতিবছর পাহাড় ধস হয়। তাতে প্রচুর লোক মারা যায়। কিছুদিন এই নিয়ে দৌড়ঝাঁপ হয়। পরে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তিনি আরো বলেন, অনেক পাহাড় এখনো দখল হয়ে আছে। সেখান থেকে লোকজন সরিয়ে আনা উচিত। কিছুদিন পর অভিযান বন্ধ হয়ে গেলে তারা সেখানে আবারো বসতি গড়ছে। এতে পাহাড়ের মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। মাটি কেটে ফেলার কারণে পাহাড় তার শক্তি হারাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের নথি ঘেঁটে দেখা যায়, চট্টগ্রামে প্রতিবছরই ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় প্রচুর লোকের প্রাণহানি হচ্ছে। কেবল ২০০৭ সালের ২১শে জুন চট্টগ্রাম নগরীর সেনানিবাস সংলগ্ন কাইচ্ছাগোনাসহ ৭টি এলাকায় প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানি হয়। ২০১১ সালের জুন মাসে বাটালিহিলে আবার পাহাড় ধসে মারা যায় ১৭ জন। ২০১২ সালের ২৬শে জুন নগরীর চার স্থানে পাহাড় ধসে ১৮ জন মারা যায়। এছাড়া, ২০১৪ সালে নগরীতে পাহাড় ধসে ৩ জন, ২০১৫ সালে লালখানবাজার, বায়েজিদ এলাকায় ৬ জন মারা গেছে। সরজমিন দেখা যায়, প্রতি বছর পাহাড় ধসে প্রচুর লোক মারা যায়। এখনো সেই পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষ। রাজনৈতিক নেতারা জোরপূর্বক এসব পাহাড় দখল করে সেখানে টিনশেড ঘর তুলে তা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় ভাড়া দিচ্ছে। চট্টগ্রামের খুলশী ও রেলওয়ে সংলগ্ন একাধিক এলাকার পাহাড়ে এখন রমরমা পাহাড় বাণিজ্য চলছে। জেলা প্রশাসন কিছুদিন পরপরই সেখানে অভিযান চালালেও লোকজন আবারো বাধ্য হয়ে নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় বসতি গড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, এখনো নগরীতে ১৩টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও টিলা রয়েছে। যেখানে প্রচুর লোকজন বসবাস করছেন। লালখান বাজার এলাকায় একে খান মালিকানাধীন পাহাড়, ইস্পাহানী পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে, লেকসিটি এলাকায়, কৈবল্যধাম বিশ্বকলোনি, আকবর শাহ আবাসিক এলাকার পাহাড়ে, সিটি করপোরেশনের পাহাড়ে, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমির উত্তরে মীর মোহাম্মদ হাসানের মালিকানাধীন পাহাড়ে, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়ে, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল পাহাড়ে রয়েছে লোকজনের মৃত্যুর সঙ্গে বসবাস। অভিযোগ উঠেছে, খুলশীতে আবদুল মালেক সওদাগর নামের জনৈক রাজনৈতিক এক ব্যক্তি পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় পাহাড় কেটে প্লট বিক্রি করছেন। তার মতো এমন ব্যক্তির সমন্বয়ে সিন্ডিকেট রয়েছে আরো অন্তত ১০টি। জানতে চাইলে পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক শরীফ চৌহান বলেন, যারা পাহাড় কেটে বাণিজ্য করছে তারা আরামেই আছে। এসব চক্র চিহ্নিত। তবুও কেনো প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না তা আমরা জানি না। তিনি আরো বলেন, যেভাবে বসতি হচ্ছে তাতে পাহাড় থাকবে না। সব কেটে সাফ করে ফেলা হবে। পাহাড়কে পাহাড়ের মতো থাকতে দেয়া উচিত। পরিবেশ সংগঠনগুলো জানায়, ২০০৭ সালে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনার পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে বিভাগীয় কমিশনার স্বয়ং নিজে নেতৃত্ব দেন। কমিটির সদস্যরা ২৮টি কারণ নির্ধারণ করে ৩৬টি সুপারিশ তৈরি করলেও কাগজে কলমে সেগুলো আজও ফাইলবন্দি হয়ে আছে। সূত্র: মানবজমিন