Tue. Apr 22nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

44kখােলা বাজার২৪।। বুধবার, ১৪  জুন, ২০১৭: উত্তর-পূর্ব দিল্লির অম্বে বিহার নামের এলাকায় একটি সদ্য নির্মিত মসজিদ ভেঙ্গে দেওয়ার পরে সেখানকার মানুষ আতঙ্কে ভুগছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আনুমানিক চারশো থেকে পাঁচশো লোক বাইরের এলাকা থেকে এসে ওই মসজিদটি গত বুধবার ভেঙ্গে দেয়।
মসজিদটি ভাঙ্গার ঘটনাটি দেখেছেন মুশতার আহমেদ, যিনি ওই মসজিদের দুটো বাড়ি পরেই থাকেন। তিনি জানান যে রমজান মাসের শুরু থেকে ওখানে নামাজ পড়া শুরু হলেও সেদিন কিছু লোক এসে মসজিদটা ভেঙ্গে দিয়ে যায়।
তৈরী পোশাক শিল্পে ছোটখাটো কাজ করেন মুশতাক। অনেক কিছু বলতে চাইছিলেন তিনি – তবে হুমকি আসছে নিয়মিত, তাই গোটা পরিবার নিয়ে ভয়ে রয়েছেন মুশতার আহমেদ।
বিবিসি’র সঙ্গে কথা বলার সময়ে মুশতাক আহমেদের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর স্ত্রী আমিনা। মসজিদটা ভেঙ্গে দেওয়ার থেকেও তাঁর বেশী খারাপ লাগছে কোরআনের অসম্মান করাটা। ঘটনার দিন সকালে পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছিল। তারা অবশ্য এখনও টহল দিচ্ছে ওই এলাকায়।
তবে আমিনা বলছিলেন যে বিষয়টা থিতু হয়ে এলে এর ফল নাকি ভুগতে হবে সবাইকে, এমন হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
ওই এলাকার বেশ কিছু মুসলমান পরিবার অম্বে কলোনি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। শাহরুখ (প্রতীকী নাম) নামে এক ব্যক্তিকে তাঁর চুল কাটার সেলুন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বাড়ির মালিক নাকি শাহরুখকে বলেছেন দোকান ছেড়ে চলে যেতে। এখন শাহরুখ নিজের ঘরেই সেলুনটা আবারও চালু করার কথা ভাবছেন।
পূর্ব দিল্লিতে যমুনার পাড় বরাবর বস্তিগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষেরই বসবাস। সকাল হলে সবাই কাজে বেরিয়ে যান।
গত বুধবারও সবাই কাজে চলে যাওয়ার পরেই ঘটনার শুরু। মসজিদ যারা ভাঙতে এসেছিল, তাদেরকে দেখেছিলেন বিমলেশ মৌর্য। তিনি বলেন, চার-পাঁচশো লোক জড়ো হয়েছিল। ওই লোকগুলো কোথা থেকে এসেছিল বলতে পারবো না। তবে ওরাই মসজিদটা ভেঙেছে। তিনি এ-ও বলছিলেন যে, “মুসলমান ভাইরা কোরআনের শপথ নিয়ে, ভেঙ্গে দেওয়া মসজিদের ওপরেই একটা চাটাই বিছিয়ে নামাজ পড়ছেন।”
মুশতাক আহমেদ আর কলোনির অন্য মুসলমান বাসিন্দারা বলছিলেন যে মসজিদটা তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল কয়েক মাস আগেই, তবে নামাজ পড়া শুরু হয় রমজান মাস থেকে। একটা ছোট মাদ্রাসাও চালানো হয় ওখানে, যাতে বাচ্চাদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া যায়।
মুশতার আহমেদ জানিয়েছেন মসজিদের জমির জন্য এলাকারই বাসিন্দা আকবর আলী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়েছিল, আর বলা হয়েছিল যে তাঁর প্রাপ্য টাকা-পয়সা ধীরে ধীরে মিটিয়ে দেওয়া হবে।
কৃষ্ণপাল শর্মা কিছুদিন আগেই বাগপত থেকে ছেলের কাছে থাকতে এসেছিলেন।তিনি স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জেনেছেন যে ওই জমিটা কোনো সাধুবাবার ছিল। একটা শিবলিঙ্গও নাকি ছিল ওখানে। তবে ওই সাধু হরিদ্বারে গেছেন আর সেই সময়েই নামাজ পড়া শুরু হয়।
তবে সাব্বির নামে একজন বলছিলেন, যদি আমাদের হিন্দু ভাইদের আপত্তি থাকতো, তাহলে তো তারা সেটা আগেই বলতে পারতেন। ভেঙ্গে দেওয়া হলো কেন?
বিমলেশ মৌর্য অবশ্য স্পষ্টই বললেন যে এলাকার লোকজন চাইছিলো না যে ওখানে একটা মসজিদ হোক।
আতঙ্কের পরিবেশের মধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপে এমন মেসেজও ছড়ানো হচ্ছে যে অম্বে কলোনীর ওই জায়গায় ৮-১০ ঘর মুসলমান থাকে, তাই সেখানে কেন একটা মসজিদ বানানো হবে।
সেসব মেসেজের মাধ্যমে হিন্দুদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে যে ‘ইসলামিকরণের প্রক্রিয়া’ যেন সবাই মিলে বন্ধ করতে সচেষ্ট হয়।
উত্তরপূর্ব দিল্লির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবেন্দ্র আর্য বলছেন, “পাহারা দেওয়া ছাড়াও বিকেলের দিকে ইফতারের সময়টায় প্রত্যেক রাস্তা আর গলিতে টহল দিচ্ছে পুলিশ বাহিনী।
পুলিশ জমির মালিক আকবর আলীর অভিযোগ অনুযায়ী আট জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। দুজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। অন্যদিকে, মসজিদের পাশেও বসেছে পুলিশী পাহারা। – বিবিসি অবলম্বনে