খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ১৪ জুন, ২০১৭: ব্রিটেনের লন্ডন শহরের নর্থ কেনসিংটনের ল্যানচেস্টার ওয়েস্ট এস্টেটের একটি বহুতল ভবন গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর পুলিশ বলছে ৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেলেও সেখানে অনেক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রযেছ্।ে পুলিশ কমিশনার ড্যানি কটন জানান, বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২ শতাধিক দমকল কর্মী ও ২০টি অগ্নিনির্বাপন ট্রাক আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু করার পর ৭ ঘন্টারও বেশি সময় পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কথা জানায় পুলিশ। লন্ডন পুলিশ বলছে বুধবার গভীর রাত সোয়া একটায় তাদের কাছে ওই ভবনে আগুন লাগার খবর আসে। ভবনটিতে ১২০টি ফ্লাট ছিল যাদের অধিকাংশ বাসিন্দা আটকে পড়ে। অন্তত ৫০ জনকে ৫টি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে নেওয়া হয়। তবে হতাহতের কোনো সুনিদিষ্ট তথ্য জানা যায়নি।
ভবনটিতে আগুন লাগার পর অনেক বাসিন্দা দড়ি ও বিছানার চাদর ব্যবহার করে বাইরে আসার চেষ্টা করে। অনেকে ছাদ থেকে টর্চের আলো ফেলে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। তাদের অনেকে ভবন থেকে উদ্ধারকর্মীদের বাঁচানোর আবেদন জানাতে থাকেন। উদ্ধারকর্মীরা তাদের বের হয়ে আসার জন্যে মাইর্কিং করতে থাকে। হোয়াইট সিটি এলাকায় লাটিমার সড়কে ওই ভবনটি নাম হচ্ছে গ্রেনফেল টাওয়ার। কিভাবে আগুন লেগেছে তা জানা সম্ভব না হলেও ভবনটি দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে এবং এধরনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আশেপাশের ভবনের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। ভবনটিতে আটকা পড়া মানুষ তাদের উদ্ধার করার জন্যে চিৎকার করতে থাকে। পুলিশ আশেপাশের মানুষকে সরিয়ে নেয়। ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভবনটিতে শত শত মানুষ আটকা পড়েছে এবং তাদের অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন বলে টেলিভিশনগুলোর খবরে বলা হয়। অন্তত ৪০টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করার পাশাপাশি ২০টি এ্যাম্বুলেন্স অভিযানে অংশ নেয়। অভিযানে অংশ নেয় হেলিকপ্টার কিন্তু আগুনের তীব্রতা ও ভয়াবহতা এতই বেশি যে দমকল কর্মীরা তেমন সুবিধা করতে পারেনি। পুলিশ ভবনটিতে আটকা পড়া মানুষকে উদ্ধারের ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যায়।
মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র বলেন, বুধবার রাত ১টা ১৬ মিনিটে ওই ভবন থেকে আগুন লাগার কথা জানানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড ও লন্ডন এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়।
পুলিশ ওই এলাকা এড়িয়ে চলার জন্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুরোধ জানায়। পুলিশের এ্যাসিসটেন্ট কমিশনার ড্যান ড্যালি বলেন, ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ভবনটিতে দমকল কর্মীরা অভিযান চালাতে যেয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। এধরনের অগ্নিকা- অনেক বড় দুর্ঘটনা এবং তা মোকাবেলায় বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভবনের বাসিন্দাদের নিয়ে স্বজনরা চিন্তিত হয়ে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তারা বেঁচে আছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইছেন অনেকে।
বিবিসির অ্যান্ডি মুর জানান, পুরো ভবনটি আগুনে জ্বলছে এবং ভবনটি ধসে পড়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা ছাদের ওপর থেকে আলো নাড়ানো দেখেছে। তাদের ধারণা ভবনের লোকজন ছাদের ওপর থেকে টর্চের আলো দিয়ে সাহায্য চাইছে। আর্তনাদও তারা শুনতে পেয়েছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী ছাদে আগুন পৌঁছাতে আর বেশি বিলম্ব নেই।
অন্যদিকে সংবা“াতা অ্যান্ডি মুর জানান, ভবন থেকে ধ্বংসাবশেষ পড়তে দেখছি। আমরা বড় বিস্ফোরণের শব্দও শুনেছি। কাঁচ ভাঙার শব্দও পেয়েছি। কয়েক মাইল দূর থেকে ধোঁয়া দেখা যায়। বিবিসির সাইমন লেডারমেন জানান, ভবনটি যেভাবে জ্বলছে কয়েক মাইল দূর থেকে তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে জানান তিনি।
এদিকে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান এ অগ্নিকান্ডকে অত্যন্ত গুরুতর ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন। আগুনের কারণে লন্ডন পাতাল রেলের হ্যামারস্মিথ এবং সিটি ও সার্কেল লাইন বন্ধ করে দেয়া হয়।
ভবনটিতে মুহূর্তের মধ্যে এত দ্রুত আগুন কিভাবে ছড়িয়ে গেল কিংবা আগুনের উৎস সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি। ওই ভবনের কাছেই বাস করেন আলেকজান্ডার সিল, তিনি টুইটে বলেন, লাটিমার সড়কে গ্রেনফেল টাওয়ারের খুব কাছেই বাস করি। সেখানে প্রচ- হৈ চৈ চলছে, ভবনটিতে আগুন জ্বলছে এবং আকাশে হেলিকপ্টার ঘুরছে।
হাসান মাহদি নামে আরেক ব্যক্তি টুইটে জানান, আগুন নেভানোর জন্যে সবাই সংগ্রাম করছে। ফাবিও বেবার বলেন, গ্রেনফেল টাওয়ারে আটকে পড়া মানুষ তাদের বাঁচানোর জন্যে আঁকুতি জানাচ্ছিল। ভয়াবহ এক দৃশ্য। আরেক ব্যক্তি টুইট করেন, ভবনটি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে অনেক মানুষ ছিল।
ওই ভবনের এক বাসিন্দা জর্জ ক্লার্ক রেডিও ফাইভ লাইভ অনুষ্ঠানে জানান, বিছানায় শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিপ বিপ শব্দ শুনেই দৌড়ে নিচে নেমে আসতে থাকি। প্রথমে মনে করেছিলাম এটা কোনো গাড়ি থেকে এলার্মের শব্দ। কিন্তু আগুনের শিখা দেখে আমি হতবাক হয়ে পড়ি। চারপাশে ধোঁয়া কুন্ডলী পাকিয়ে ধেয়ে আসছিল। যতটা সম্ভব দ্রুত আমি নিচে নেমে আসতে সমর্থ হই। তখনো ভবনের উপর থেকে অনেকে নিচে নেমে আসতে টর্চের আলো এদিক সেদিক ফেলছিল। কিন্তু নিচে নেমে আসা তাদের জন্যে অসম্ভব ছিল। কারণ আগুনের লেলিহান শিখা ততক্ষণে তাদের চারপাশ ঘিরে ফেলেছে। বিবিসি/সিএনএন/ডেইলি মেইল/ স্টার ইউকে