খােলা বাজার২৪।। শুক্রবার ,১৬ জুন, ২০১৭: বাংলাদেশকে ৯ উইকেটে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। মূলত বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের ভুলে বেশ সুবিধা ভোগ করে ভারত। এদিন টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেই ভুবনেশ্বর কুমারের বলে রানের খাতা খোলার আগে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ওপেনার সৌম্য সরকার। সে সেময় ব্যাটিং বিপর্যয়ের শঙ্কাতেকেঁপে উঠেছিলো স্টেডিয়ামের হাজারো বাঙ্গালী দর্শক।
এরপর ৩১ রানে সাব্বির রহমান ফিরে গেলে আরও হতাশ হন তাঁরা। অবশ্য পরবর্তীতে তামিম ইকবাল এবং মুশফিকুর রহিমের ১২৩ রানের জুটিতে নতুন করে যেন প্রাণ ফিরে পায় বাংলাদেশ। তবে ঐ পর্যন্তই। দলীয় ১৫৪ রানের মাথায় তামিম ইকবাল কেদার যাদবের বলে বোল্ড হয়ে ফিরলে দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ।
শেষ পর্যন্ত মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ২৬৪ রানেই থামতে হয় টাইগারদের।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা নিজেই ব্যাটিং ব্যর্থতার দায়স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁরমতে আরও কিছু রান বেশি করলে ভালোভাবে লড়াই করা সম্ভব ছিলো। মাশরাফি বলেন,‘আমরা ৩০০ রান করতে পারতাম, এমনকি ৩২০ রানও করা যেত। তবে আমাদের সেট ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাওয়াতে আমরা পেছনে পরে গিয়েছি। ’
তবে এরপরেও হতাশ হচ্ছেন না টাইগার অধিনায়ক। বরং এরপরে আরও শক্তিশালী ভাবে ফিরে আসবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন তিনি।
মাশরাফি বলেন, ‘পরবর্তীতে আমরা আরও শক্তিশালীভাবে ফিরে আসবো। আমাদের শেখার প্রয়োজন। আমাদের স্কিল ভালো ছিলো, কিন্তু আমরা মানসিক দিক থেকে শক্তিশালী নই।
’ম্যাচ হারলে মন তো একটু খারাপ হবেই। কিন্তু ভারতেরে কাছে এক পেশে হারটা একটু বেশই হয়তো মন খারাপ করে দিয়েছে মাশরাফির। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে যখন আসলেন তখন সেকথাই বলছিল মাশরাফির চোখমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বলেন, ভারতের মতো দলের কাছে হার কোনো ব্যাপার না, কিন্তু যেভাবে হারতে হলো সেটাতেই হয়তো কষ্ট পাচ্ছেন মাশরাফি। সেমিফাইনাল ওঠাকে বড় ব্যাপার বললেও, যেভাবে দল খেলেছে সেটাকে দুঃখজনক বলেছেন মাশরাফি।
হারের ব্যখ্যায় তিনি জানান, ব্যাটিং আশানুরূপ হয়নি। বোলিং হয়েছে যাচ্ছেতাই। বড় ম্যাচের চাপটাও নিতে পারেনি দল। মাশরাফির মতে, হারের সবচেয়ে বড় কারণ পরেরটা। মানে মানসিক চাপ। জানালেন, এই লেভেলে খেলার জন্য যে ধরনের মানসিক প্রস্তুতি থাকার দরকার, সেটার বড়ই অভাব।
মাশরাফি জানান, ‘আমরা ২০১৫ বিশ্বকাপে নট আউট পর্বে খেলেছি। এবার খেললাম। দুটো ম্যাচে আমরা একই রকম খেলেছি। আসলে এই লেভেলে খেলার জন্য যে ধরনের মানসিক চাপ নেয়ার ক্ষমতা বা যোগ্যতা থাকতে হয় সেটা আমাদের অনেক খেলোয়াড়ের নেই। এ ম্যাচটা তাদের জন্য শিক্ষা। এই ধরনের কন্ডিশনে এবং এমন বড় ম্যাচে কীভাবে চাপ নিয়ন্ত্রণ করে খেলতে হয়, সেটা তারা শিখতে পারবে। পরবর্তীতে এখানে বা পরের বিশ্বকাপে তা কাজে লাগবে।’
মাশরাফির মতে ২৬৪ নয় রান হওয়া দরকার ছিল ৩২০- ৩৩০। বললেন, ‘আমরা ২৬৪ করেছি। কিন্তু এই রান এই উইকেটে যথেষ্ঠ ছিল না। ৩০০ বা ২৩০ রান হওয়া উচিৎ ছিল। প্রথম দশ ওভার ব্যাটসম্যানদের জন্য একটু কঠিন ছিল। কিন্তু আমরা সেটা কাটিয়ে ওঠেছিলাম। তামিম-মুশফিক যেভাকে খেলছিল তাতে আমরা ম্যাচেই ছিলাম। কিন্তু নিয়মিত উইকেট পড়ায় আমরা বড় স্কোর গড়তে পারিনি।’
বড় স্কোর না হওয়ায় বোলাদের ওপর চাপ পড়ে যায় বলে মনে করেন মাশরাফি। স্কোর বড় হলে অন্যকিছু হতে পারত বলে জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
মাশরাফি বলেন, ‘স্কোরটা বড় হলে বোলারদের ওপর চাপ কম পড়তো। তখন অন্য কিছু হতে পারত। এই উইকেটে এই রান বোলারদের ডিফেন্ড করা সহজ ছিল না। আমাদের দরকার ছিল শুরুতে কয়েক উইকেট নেয়া। কিন্তু আমরা সেটা পারিনি। আমাদের বোলাররা নির্দিষ্ট জায়গায় বল করতে পারেনি। এ ধরনের উইকেটে জায়গামত বল করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা সেটা পারিনি। আমরা শর্ট বল করেছি। কিন্তু সেগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় না ফেলার মূল্য দিতে হয়েছে। রান চেক করতে পারিনি। এই ধরনের ব্যাটিং উইকেটে কীভাবে রান সেভ করাতে হয় বোলারদের শিখতে হবে। আশরা করি এই অভিজ্ঞতা থেকে তারা শিক্ষা নিবে এবং পরবর্তীতে কাজে লাগাবে।’