খােলা বাজার২৪।। সোমবার, ১৯ জুন, ২০১৭:
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের নন্দাহার গ্রামে মুসলমান থেকে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করায় একের পাপে দশের শাস্তি ভোগ করছে তিনটি পরিবার। গ্রাম্য সালিসের সীদ্ধান্তে গ্রামবাসীরা গত তিনদিন থেকে তিনটি পরিবারকে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে এক ঘরে করে রেখেছে। বাড়ি থেকে বের হওয়া ও খাবার পানি সংগ্রহ নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছে পরিবার তিনটি। এ দূরবস্থা থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নন্দাহার গ্রামে এইচএসসি পরীক্ষার ফলপ্রার্থী রাজীব মন্ডল। বাবা মোফাজ্জল হোসেন ও মা কোহিনুর বেগমের ছোট ছেলে। রাজীব গত ২০১৩ সাল থেকে খ্রীষ্টান ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত। তবে মুসলমান থেকে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করেও পরিবারসহ এলাকাবাসীর কাছে বিষয়টি গোপন রাখে। এরপর থেকে পরিবারের সাথেই বসবাস করে আসছে রাজীব। গত ২০১৫ সালে মুসলমানের রেওয়াজ অনুসারে বিয়ে করে। স্ত্রীকে খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহন করার জন্য তাগাদা দেয়। এ নিয়ে স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৬ সালে স্ত্রীকে তালাক দেয়।
এরপর থেকে গোপনে বিভিন্ন ভাবে গ্রামের অসহায় ও গরীব শ্রেনীর লোকজনদের গরু, ছাগল ও টাকা দেয়ার প্রলোভন দিয়ে ঢাকায় খ্রীষ্টান চার্চে নিয়ে যেত। সেখানে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহনে তাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য বোঝানো হতো। সর্বশেষ গত কয়েকদিন আগে গ্রামের খোকা সহ ৪-৫ জন যুবককে ঢাকায় বেড়াতে যাওয়ার নাম করে চার্চে নিয়ে যায়। সেখানে ৪-৫ জন যুবক দুইদিন থেকে চার্চে আটকে থাকে। অবশেষে সুযোগ বুঝে তারা পালিয়ে আসে। এরপর তারা গ্রামে এসে বিষয়টি এলাকাবাসীকে জানায় যে রাজীব খ্রীষ্টান হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য হেদায়েতুল ইসলাম ও শামীম হোসেন বলেন, ৩/৪ বছর আগে রাজীব খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করলেও গত দুই সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে বিষয়টি প্রকাশ পায়। এ নিয়ে এলাকায় শুরু হয় নানান গুঞ্জন। এরপর তার বাবা-মা, ভাই-ভাবী, চাচা-চাচীসহ তিনটি পরিবারকে সর্তক করে দেয়া হয়। যেন তারা রাজীব এর সাথে কোন ধরনের মেলামেশা, যোগাযোগ না রাখে এবং সে যেন এলাকায় না থাকে। এ নিয়ে রাজীব নওগাঁ জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দেয়।
তিনি আরো বলেন, গ্রামবাসী সর্তক করার পর রাজীব তার বাবা-মার সাথে বসবাস করে। ফলে এলাকাবাসী গত তিন আগে গ্রাম্য সালিসের সীদ্ধান্তে ওই তিনটি পরিবারকে বাশেঁর বেড়া দিয়ে ঘিরে এক ঘরে করে রাখা হয়।
গ্রামের শাহারিয়ার বিন শাকিব ও রাব্বি হোসেন বলেন, রাজীব গ্রামের অসহায় ও গরীব শ্রেনীর লোকজনদের লোভ দেখিয়ে ও প্রতারণার ফাঁদে ফেলে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করার জন্য উদ্ধৃদ্ধ এবং এজেন্ট হিসেবে কাজ করত। সে নিজ খরচে ঢাকাসহ বিভিন্ন চার্চে এসব অসহায় লোকদের নিয়ে যেত। এলাকাবাসী হিসেবে আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবী করছি।
রাজীবের চাচী নিলুফা বলেন, কিছুদিন পূর্বে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে আমাদের পরিবারকে ঢাকায় খ্রীষ্টান চার্চে নিয়ে যায়। তবে আমরা কেহ খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহন করিনি। এ বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় এলাকাবাসী আমাদের একঘরে করে রাখে। এখন একের পাপে দশের শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে। বাড়ি থেকে বের হওয়া ও খাবার পানি সংগ্রহ নিয়ে বিপাকে পড়েছি।
রাজীবের মা কোহিনুর বেগম ও ভাবী নাসরিন সুলতানা বলেন, রাজিব খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করায় তাকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। তার সাথে আমরা কোন যোগযোগ রাখি না। এ বিষয়টি নিয়ে সমাজের কাছে আমরা ভূল স্বীকার করলেও ক্ষমা পায়নি। আমাদেরকে সমাজ থেকে বাঁশের বেড়া দিয়ে এক ঘরে রাখা হয়েছে। বাড়ির বাহিরেও বের হওয়া যাচ্ছেনা। এ দূরবস্থা থেকে আমরা মুক্তি পেতে চায়। রাজীব বলেন, ২০১৩ সাল থেকে খ্রীষ্টান ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে ২০১৬ সালে গ্রহন করি। এলাকার ১৫-২০ জনকে সুসমাচার দিলেও এখন পর্যন্ত কেহ খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহন করেনি। আমি আমার পরিবারের সাথেও কোন যোগাযোগ রাখিনা।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইস্কেন্দার মির্জা বাচ্চু বলেন, ছেলেটি খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহন করেছে তা ঠিক আছে। কিন্তু বিষয়টি গোপন রেখে একই সমাজে বসবাস করে অন্যায় করেছে। সে খ্রিষ্টান হয়েও মুরগির দোকানে কাজ করে মুরগি জবাই করে খাইয়েছে। সেজন্য এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে তার কারণে যে তিনটি পরিবারকে এক ঘরে করে রাখা হয়েছে তা তিনি জানেন না।
নওগাঁর পুলিশ সুপার মোজাম্মেল বিপিএম, পিপিএম বলেন, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে ওই পরিবারগুলোকে বাঁশের বেড়া দিয়ে এক ঘরে করে রাখাটাও অন্যায়। বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।