Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭: 18তাঁতের খটখট শব্দে চলছে শাড়ি বানানোর কাজ। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন বেনারসি পল্লীর শ্রমিকরা। রাতদিন যেন একাকার হয়ে গেছে। ঈদের শাড়ির ব্যাপক চাহিদা হওয়ায় রংপুরের বেনারসি পল্লী সরব। কারিগর আছিয়া জানান, ভাই এখন কথা বলার সময় নেই। এখানে আমরা তৈরি করছি বুটি জামে বাহার, বেলবুটি, সাটান, নকশি, ফুলকলিসহ বিভিন্ন প্রকারের শাড়ি। এখান থেকে দোকানি-মহাজনেরা পাইকারী দরে শাড়ি কিনে নগরীর অভিজাত প্রতিষ্ঠানে বেশি দামে শাড়ি বিক্রি করছে। সরজমিন অনুসন্ধানকালে জানা যায়, রংপুর নগরীর প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গঙ্গাচড়া উপজেলায় গড়ে উঠেছে বেনারসি পল্লী। এক সময় গজঘণ্টা ইউনিয়নের তালকু হাবু গ্রামের বেনারসি পল্লীর নাম ছিল দেশময়। ২০০৫ সালে প্রায় ১০০ তাঁতী ওই এলাকায় বেনারসি পল্লী গড়ে তোলে। এখানকার পণ্যের মান ছিল দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে অনেক ভালো। বিপণন ও আর্থিক সমস্যার কারণে এক সময় মুখ থুবড়ে পড়ে এ শিল্প। আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায় বেশির ভাগ কারখানা। বেকার হয়ে পড়েন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫০০ কারিগর। তাদের কথা চিন্তা করেই এই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে সরকার উদ্যোগ নেয়। এজন্য সরকার ২ কোটি ৩৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। এ টাকা দিয়ে ৪০টি তাঁত বসানো হয়েছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের চাহিদা ও রুচির প্রতি নজর রেখে কারিগরদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এরপর তারাই অত্যাধুনিক বেনারসি শাড়ি ও অন্যান্য কাপড় তৈরি করছেন। তাঁতের খট খট শব্দে এখন মুখর হয়ে উঠছে বেনারসি পল্লীর এ শিল্প। সূত্রটি আরও জানায়, তাঁত শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ কাজ চলছে। তাঁত মালিকদের সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হচ্ছে। ওই এলাকায় ৬৭ টি পরিবারের মধ্যে সমন্বয় করে তাঁত স্থাপনের জন্য ৬৮০ বর্গ ফুট আয়তনের ৪০টি শেড নির্মাণ করার কাজ হয়েছে। সেগুলোতে চলছে বেনারসি শাড়ি তৈরির কাজ। এরপর সেখানেই থাকছে বেনারসি শাড়ীর প্রদর্শনী কেন্দ্র। তাঁত মালিক রোস্তম মিয়া জানান, এক সময় তার নিজের ৩০টি তাঁত ছিল। পুঁজি সংকট, কাঁচামাল এবং বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে সব বন্ধ হয়ে যায়। এখন তিনি নিঃস্ব। সরকার এ শিল্পের দিকে নজর দেয়ায় আবার শিল্পটি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এখন বেনারসি তৈরির কাজে মুখরিত হয়ে উঠছে পুরো এলাকা। গঙ্গাচড়ার তালুক হাবু এলাকার রহমান উইভিং তাঁত শিল্পের মালিকের কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, কারিগরদের তাঁত চালানোর খুটখাট শব্দ। তাদের এদিক সেদিক তাকানোর যেন সময় নেই। ওই কারখানায় কথা হয়, কারিগর রোস্তম মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে বেনারসি শাড়ির চাহিদা বেড়ে গেছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। এ কারণে আমাদের রাতদিন কাজ করতে হচ্ছে। এ কারখানার মালিক ফরিদা আখতার জানান, তার এখানে ৮টি তাঁত রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২৪ ঘণ্টাই চলছে কাজ। এক সপ্তাহে যেখানে ১৬ টি শাড়ি তৈরি হত সেখানে এখন ৩০টি শাড়ি হচ্ছে। এসব শাড়ি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত বিপণী বিতানে সরবরাহ করা হচ্ছে। একই এলাকার নিশাত বেনারসি ফ্যাক্টরির মালিক কুদ্দুস মিয়া জানান, এখানকার বেনারসি পল্লী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এতে করে এ অঞ্চলের বেকার লোকজনের বেকারত্ব দূর হবে। এ এলাকার নামও ছড়িয়ে পড়বে দেশ-বিদেশে। তার তাঁত রয়েছে ২০টি। প্রশিক্ষণার্থী লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের আমেনা, মোহসেনা, ফাতেমা এবং কবিতা বেগম জানান, বেনারসি শাড়িসহ অন্যান্য কাপড় তৈরির জন্য ৬০ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তারা বানাতে পারছেন বেনারসি শাড়ি। এতে করে তাদের বেকারত্ব ও দারিদ্র্যতা ঘুচেছে। আনোয়ার ও ফরিদা জানান, একেকজন কারিগরের একেকটি শাড়ি তৈরি করতে তিন দিন থেকে চার দিন সময় লেগে যায়। একটি শাড়ি তৈরি বাবদ তাদেরদেয়া হয় এখন ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা পর্যন্ত। তাদের বানানো ওই শাড়িই বাজারে বিক্রি হয় ২ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সূত্র: মানবজমিন