খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ২৮ জুন, ২০১৭: অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেছেন, এবারের বাজেটে মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে টার্গেট করেছে সরকার। ভ্যাট আদায়ের নামে এ টার্গেট সরকারের জন্য ভাল কিছু বয়ে আনবে না। বাজেট দেখে মনে হয় সরকার ধনীক শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করছে। অন্যদিকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, অর্থমন্ত্রী গায়ের জোরে বাজেটে ভ্যাট বাড়িয়েছেন। আবগারি শুল্ক হয় তামাকের ওপর, মদের ওপর। এবার ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বসানো হয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর যখন ভ্যাট চাপানো হচ্ছে। তখন সাধারণ মানুষ এ বিষয়টিকে ভাল ভাবে নিচ্ছে না। টিভিএনএ নিউজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, সব কিছুর ওপর সরকার ১৫% ভ্যাট আরোপ করেছে। এর মধ্য দিয়ে যিনি ধনী তিনি ১৫% ভ্যাট দিবেন অপর দিকে যিনি মধ্যবিত্ত তাকেও ১৫% ভ্যাট দিতে হবে। এতে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। সরকারের উচিত নিত্যপণ্যের ওপর ভ্যাট কমিয়ে আনা। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। সাধারণ মানুষের ওপর ভ্যাটের বোঝা চাপিয়ে সরকার অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন করতে চাইছে। এটা না করে সরকারের উচিত ধনীক শ্রেণীর ওপর করের পরিমাণ বাড়ানো। আপত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ধনীকে আরো ধনী করার কৌশল হাতে নিয়েছে সরকার। ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ জনগণকে বেকায়দায় ফেলেছে মন্তব্য করে এম এম আকাশ বলেন, ব্যাংকে এখন ১ লাখ টাকা জমা থাকলেই বছর শেষে শুল্ক গুণতে হবে ৮শ’ টাকা। যা আগের বছরও ছিল ৫০০ টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকে টাকা জমা রাখার এমন বিভিন্ন স্তরে এভাবেই গুণতে হবে বাড়তি আবগারি শুল্ক।
গবেষক আবুল মকসুদ বলেন, যখন সরকার সাধারণ মানুষের সঞ্চয় থেকে টাকা কেটে নিতে চায় তখন মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব পড়েছে সংসদে। সরকার ও বিরোধীদলীয় এমপিরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অথচ অর্থমন্ত্রী বলছেন এবারের বাজেট তার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট। শ্রেষ্ঠ বাজেট নিয়ে যখন এত কথা হচ্ছে তখন বুঝতে হবে, এ বাজেট তার জীবনের বড় বাজেট হতে পারে। কোনো একটি বাজেট বড় বাজেট আর কোনো একটি বাজেট শ্রেষ্ঠ বাজেট, দু’টো দুই বিষয়। ছোট বাজেটও শ্রেষ্ঠ বাজেট হতে পারে। আবার বড় বাজেটও খারাপ বাজেট হতে পারে। অর্থমন্ত্রী বাজেটে কিছু বিষয় গায়ের জোরে যুক্ত করেছেন। এ কারণে নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এমনকি তার দলের লোকেরাও প্রতিবাদ করছে। আবুল মকসুদ বলেন, বাস্তব অবস্থা অর্থমন্ত্রীকে অনুধাবন করতে হবে। সাধারণ মানুষের যাতে কল্যাণ হয় সেদিক চিন্তা করে অর্থমন্ত্রী সংসদে বাজেট পাশ করতে সহযোগিতা করবেন এটাই সবার প্রত্যাশা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর পদক্ষেপ ও ব্যাংকে লাখ টাকা রাখার ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ আত্মঘাতী হবে বলে মনে করছেন। এতে ব্যাংক বহির্ভূত মানুষকে সেবার আওতায় আনার যে প্রক্রিয়া তা বাধাগ্রস্ত হবে। আর ব্যাংকাররা মনে করছেন, এতে মানুষের নিঃস্ব হওয়ার ঝুঁকি বাড়াবে। কারণ ব্যাংক বিনিয়োগের বিকল্প ক্ষেত্রেগুলো এখনো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের পরামর্শ বাজেটের আবগারি শুল্ক বাড়ানো ও সঞ্চপত্রের সুদ হার কমানোর প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা উচিত। খবর আমাদের সময়.কমের