খােলা বাজার২৪।। মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০১৭: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিতের মেয়াদ আরও দুই সপ্তাহ বাড়িয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
রাষ্ট্রপক্ষের করা চার সপ্তাহের সময় আবেদনের পর মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চে এই আদেশ দিয়ে শুনানি দুই সপ্তাহ মুলতবি করেন। ফলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত আরও দুই সপ্তাহ চলতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টাম হাসান এম এস আজিম।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় ২ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে গত ২১ মে আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
গত ১১ মে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিধানসহ সংশ্লিষ্ট আইনের কয়েকটি ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা পৃথক তিনটি রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট এই রায় দেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এসথেটিক প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খানকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। সে বছরের ২০ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি।
এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন (মোবাইল কোর্ট অ্যাক্ট-২০০৯) কয়েকটি ধারা ও উপধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ১১ অক্টোবর কামারুজ্জামান হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে রিট আবেদনকারীর (কামরুজ্জামান) সাজা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি সাজার আদেশ স্থগিত করা হয়।
২০১১ সালের ওই রায়ের একদিন আগে একই অভিযোগে টয়নবি সার্কুলার রোডে অবস্থিত এক বাড়ির মালিক মো. মজিবুর রহমানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আইনের বিধান ও অর্থ ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর রিট করেন মজিবুর। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই দিন হাইকোর্ট রুলসহ সাজার আদেশ স্থগিত করেন।
এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের কয়েকটি বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে ২ মে দিনাজপুরের বেকারি মালিকদের পক্ষে মো. সাইফুল্লাহসহ ১৭ জন আরেকটি রিট করেন। এতে বেকারিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে খাদ্য বিশেষজ্ঞ ও পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি সঙ্গে রেখে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়। শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৮ মে হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী হাসান এম এস আজিম জানান, রুলে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ধারা ৫,৬ (১), ৬ (২), ৬ (৪), ৭, ৮ (১), ৯, ১০, ১১, ১৩, ১৫ কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিন রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া রুল একসঙ্গে শুনানি হয়।
আইনজীবী আজিম বলেন, রিটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও বিচার করার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ওই ধারাগুলো সংবিধান, মাসদার হোসেন মামলার রায় ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
ওই আইনের ৫ ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়ে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ৬ (১), ৬ (২), ৬ (৪), ৭, ৮ (১), ৯, ১০ ধারায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা পদ্ধতি, ১১ ধারায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দেওয়া ক্ষমতা, ১৩ ধারায় আপিল ও ১৫ ধারায় তফসিল সংশোধনে সরকারকে দেওয়া ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে।