খােলা বাজার২৪।। মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০১৭: জয়পুরহাট-১ আসনে আগাম নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। তবে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলেই প্রার্থিতা নিয়ে দ্বন্দ্ব-বিবাদ রয়েছে। এই সংকট আওয়ামী লীগেই বেশি।
আওয়ামী লীগে অবশ্য সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। এ কারণে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আলাদাভাবেই নিজেদের তৎপরতা চালাচ্ছেন। বিএনপির একাধিক প্রার্থী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় করছেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক হলেও জামায়াতে ইসলামী দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। ২০ দলীয় জোট প্রার্থীকে সমর্থন করা সম্ভব না হলে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীতে। এই আসনে জাতীয় পার্টিরও সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী ছিলেন জাতীয় পার্টির তিতাস মোস্তফা। কিন্তু তিনি শেষ মুহূর্তে প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও
আওয়ামী লীগের প্রধান মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি তার নির্বাচনী
এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তৎপরতা চালিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদুর বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সখ্যের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মীর। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটারদের সঙ্গে তার দূরত্ব রয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতিতে বিশ্বাসী অনেকে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু বলেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন। তিনি বলেছেন, বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের রোডম্যাপ মেনে চলছেন না। দুর্নীতিগ্রস্ত এই এমপি দলের ক্ষতি করছেন। জয়পুরহাট সদর পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাকও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তিনিও বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে বলেছেন, অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদুর নীতি-নৈতিকতা নেই।
এই আসনে জয়পুরহাট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, অধ্যক্ষ খাজা সামছুল আলম, জাকির হোসেন এবং সাবেক প্যানেল মেয়র নন্দলাল পার্শীও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। দৃশ্যমান উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে এই আসনে আওয়ামী লীগের ভোট বাড়লেও বিএনপি পিছিয়ে নেই। এ কারণে আওয়ামী লীগ যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থী বাছাইয়ে ব্যর্থ হলে আসনটি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা থাকবে বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন। সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদ না মেটানো হলে পরিস্থিতি আরও প্রকট রূপ নেবে। সেই ক্ষেত্রে দলীয় প্রার্থীর সহজে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে আসবে বলে অনেকের ধারণা।
দীর্ঘদিন ধরে জয়পুরহাট জেলার দুটি আসন বিএনপির দখলে ছিল। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বলেই মনে করছেন দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তারা ক্রমেই চাঙ্গা হয়ে উঠছেন। জয়পুরহাট-১ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় বিএনপির জেলা সভাপতি মোজাহার আলী প্রধানের অবস্থান বেশ শক্ত। দলের দুর্দিনের নেতা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন হওয়ায় এই আসনে তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মোজাহার আলী প্রধান তার মনোনয়নের ব্যাপারে বলেছেন, তিনি সবসময় কর্মীদের সঙ্গে রয়েছেন। কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তাই তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে বিশ্বাস করছেন। জেলা বিএনপির বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান এবার দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে মনোনয়ন চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। ফজলুর রহমান বলেছেন, মনোনয়ন না পেলেও তিনি দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড করেছেন। নিশ্চয়ই জনপ্রিয়তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে দল তাকে মনোনয়ন দেবে।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফয়সল আলীম ও গোলজার হোসেন। ২০১৩-১৪ সালে সরকারবিরোধী সহিংস ঘটনার কারণে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এসব মামলা নিয়ে বিএনপির নেতারা অনেকটা দিশেহারা অবস্থায় রয়েছেন। সেই সঙ্গে রয়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদের ঘটনাবলি। এসব কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি কতটা সফল হবে, তা নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা সংশয় রয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন চাইবেন। আলাদাভাবে নির্বাচনের সুযোগ পেলে তিনিই হবেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী। এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক রয়েছে।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনী জোট হলে তিতাস মোস্তফা জাতীয় পার্টির প্রার্থী হবেন বলে নেতাকর্মীরা নিশ্চিত করেছেন। আর জোট না হলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হবেন তিতাস মোস্তফা। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের বিশ্বাস, গত নির্বাচনের মতো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও মহাজোটের ব্যানারে হবে। সেই জোটে থাকবে জাতীয় পার্টি। সমকাল