Mon. Jun 16th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০১৭: 59টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজার জেলাব্যাপী প্রবল বন্যা ও নদীভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে। সে সাথে বেড়েছে পাহাড়ধসের ঝুঁকি। বন্যায় তলিয়ে গেছে জেলা সদর, চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও রামু উপজেলাসহ নিম্নাঞ্চলের তিন শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি পড়েছে এসব এলাকার অন্তত ১০ লাখ মানুষ।

উখিয়ার পালংখালীর আনজুমানপাড়ায় দেয়ালচাপায় ১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঘুমধুমে পাহাড় ধসে চেমন খাতুন নামে বয়োবৃদ্ধ মহিলা মারা গেছে। পাহাড়ের মাটি এসে পড়ায় কলাতলী মেরিনড্রাইভ সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। উপড়ে গেছে সড়কের দুই পাশের অনেক গাছপালা। কক্সবাজার টেকনাফ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় যানচলাচল বন্ধ গেছে। জেলায় পানিবন্দি পড়েছে ১০ লক্ষাধিক মানুষ। বাঁকখালী ও ঈদগাঁও নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্ধ পড়েছে বিভিন্ন এলাকার সড়ক যোগাযোগ।

মাতামুহুরী নদীতে উজান নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও পৌরসভার তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পতিত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার কর্মকর্তা এ কে এম নাজমুল হক জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকেই অতি ভারি বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল ৩টা বুধবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে ১৯৭ মিলিমিটার।

তিনি আরো জানান, গত চারদিনে মোট ৫৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার বৃষ্টিপাত কমতে পারে।

জেলা প্রশাসক মোঃ আলী রহাসেন জানান, বুধবার বন্যাকবলিত এলাকার মধ্যে চকরিয়া ও কক্সবাজার সদরে ১০০০ খাবার প্যাকেট ও নগদ ২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে জেলার আশ্রায়নকেন্দ্রসমূহ। দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসন সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছে। প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এদিকে টানা অতি বর্ষণের কারণে কক্সবাজারের আকাশে এসেও অবতরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট। একই অবস্থায় পড়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করতে হয়েছে রিজেন্ট এয়ারের অপর বিমান। শিডিউল মতো বুধবার দুপুরে ফ্লাইট দুটি যাত্রী ওঠা-নামা করতে কক্সবাজার এসেছিল বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক সাধন কুমার মোহন্ত।

বিকেল পৌনে ৬টায় রিজেন্ট এয়ারের বিমানটি কক্সবাজার এসে যাত্রী ওঠা-নামা করে ফিরে গেলেও বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি বাতিল করা হয়। ঢল ও বৃষ্টির পানিতে নিুাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। রাস্তাঘাট ভেঙে ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ। এতে জেলার কয়েকলাখ মানুষ পানিবন্দি চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। তলিয়ে গেছে কৃষি ফসল ও চিংড়ি ঘের।

তবে যেকোনো দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, অতি বর্ষণে জেলার মিঠাপানির তিন নদী চকরিয়ার মাতামুহুরি, ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী ও কক্সবাজারের বাঁকখালীতে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পাহাড়ি ঢলের পানি। ঢলের তীব্রতায় ভেঙে যাওয়া ঈদগাঁওর রাবার ড্যাম এলাকা দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে বৃহত্তর ঈদগাঁওর জালালাবাদ, ঈদগাঁও, চৌফলদন্ডী, পোকখালী ও ইসলামাবাদ এলাকার অর্ধশত গ্রামের রাস্তা-ঘাট, বাসা-বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলের মাঠ। ভেঙ্গে গেছে আঞ্চলিক সড়কগুলো। এছাড়া কক্সবাজার শহরসহ চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, রামুসহ বেশ কয়েক উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঢলের পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানিতে ওসব এলাকাগুলোতে কোমর সমান পানি জমে গেছে।
জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা ইমরুল হাসান রাশেদ জানান, আমার এলাকার প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শুকনো খাবার ও পানি সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ঈদগাঁও বাজার ফরাজীপাড়া সড়কের পূর্ব লরাবাগের হাফেজখানা পয়েন্ট দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে যানবাহন ও

জনসাধারণের চলাচলে চরম বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। ভেঙ্গে গেছে জালালাবাদের পালাকাটা এলাকায় অনেকের বসত বাড়ি। ভেসে গেছে গৃহস্থালী সামগ্রী। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরকারের পক্ষ জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ তৎপরতা শুরুর দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী। জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আতি বর্ষণে পাহাড়ধসে অনাকাক্সিক্ষত যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরাতে কাজ চলছে। জরুরি সভা করে পাহাড়ে

অবস্থানকারীদের সরিয়ে এনে আশ্রয় কেন্দ্র নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রবল বর্ষণের মাতামুহুরীর নদীর পানি বেড়ে চকরিয়া উপজেলার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড এবং সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, লক্ষ্যারচর, বরইতলী, হারবাং, কোনখালী, ঢেমুশিয়া, খুটাখালী, ডুলাহাজারা, সাহারবিল পুরোসহ ১৭ ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়ন, রাজাখালী, মগনামাসহ সবকটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি পড়েছে বলে জানা গেছে। এসব স্থানের অনেক লোকজন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আশ্রয়কেন্দ্র ও ইউপি ভবনসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। বাঁকখালী নদীর পানি উপচে পড়ে রামু উপজেলার গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, কাউয়ারখোপ, জোয়ারিয়ানালা, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, রাজারকুল ও ফতেখাঁরকুলে ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক সড়ক পানিতে ডুবে থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রামু দক্ষিণ মিঠাছড়ি কাটিরমাথা এলাকায় অতিরিক্ত পানি বেড়ে যাওয়ায় টেকনাফ কক্সবাজার সড়কের যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার সমিতিপাড়া, টেকপাড়া, বাহারছড়া, আলীরজাহালসহ আরো বিভিন্ন ওয়ার্ড কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক লাখ মানুষ পানিবন্দি পড়েছে। সড়কে কোমর সমান পানির কারণে যান চলাচলে বিঘœ হচ্ছে।জালালাবাদের

প্যানেল চেয়ারম্যান ওসমান সরওয়ার আলম ডিপো জানান, জালালাবাদ ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভাঙনে ও ঢলের পানিতে চৌফলদন্ডী, ঈদগাঁও, পোকখালী, ইসলামাবাদসহ পাশের ইউনিয়নগুলোর প্রায় অর্ধলাখ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। দূর্গত মানুষদের সাহায্য ও পূনর্বাসন জরুরী।মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান, প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ধলঘাটার কয়েকটি গ্রামের সড়কের ওপর পানি ওঠে চলাচল অনুপযোগী পড়েছে। ধানের বীজতলা, পানের বরজের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন টিপু সুলতান বলেন, নিচু এলাকায় প্রতি বছর বন্যা দেখা দেয়। যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ আমরা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্ব প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারী বর্ষণে উজান নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় নদীতে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।