খােলা বাজার২৪।। মঙ্গলবার, ১১ জুলাই, ২০১৭: অতি বর্ষণ ও উজান নেমে আসা ঢলে দেশের পাঁচ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন নদ নদীর পানি বৃদ্ধি এতে চরম দুরবস্থায় পড়েছে পাঁচ জেলার লাখ লাখ পানিবন্দী মানুষ। এদিকে বন্যার পানিতে ফসলি জমি, সবজি ক্ষেত, পাট ক্ষেত ও আখ ক্ষেত তলিয়ে গেছে অনেক জায়গায়। তাছাড়াও বিভিন্ন জেলায় স্কুল, কলেজ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে বন্যার পানি উঠায় পাঠদান বিঘিœত হচ্ছে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা যায়,
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম জানান, গাইবান্ধার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সোমবার আরও অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ি গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ১১ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদসীমার ৩৮ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসময় ঘাঘট নদীর পানি ১৬ সে.মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা, যমুনা ও করতোয়া নদীর পানি এখন বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
ইতোমধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ চরাঞ্চল বেষ্টিত ৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে বন্যার পানি উঠায় পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে।
অপরদিকে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় জেলার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৪ উপজেলার প্রায় ৭৫ হাজার পরিবার এখন পানিবন্দী। ওইসব এলাকার নিম্ন ও চরাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, ফসলী জমি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি নুরনবী সরকার জানান, ভারি বর্ষন ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা, নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নদী গুলোর পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার তিস্তা তীরবর্তী এলাকা গুলোতে দুই দিন ধরে বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানিতে জেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। পানিবন্দি লোকজনের মাঝে ত্রাণ, বিশুদ্ধ পানি ও ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের দোয়ানী পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২.৫৪ সেন্টিমিটার যা স্বাভাবিকের (৫২.৪০ সেন্টিমিটার) চেয়ে ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
জামালপুর প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম ঝোকন জানান, জামালপুর জেলার ছয়টি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ইসলামপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। জেলার যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরাম, ঝিনাই ও সুবর্ণখালীসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বেড়ে নতুন নতুন এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ছে। ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ ও বকশীগঞ্জ উপজেলার একাংশ যমুনা পাড়ের এই ছয়টি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার প্রায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি সৌরভ কুমার ঘোষ জানান, কুড়িগ্রামে সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ৫৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে তিস্তা ও দুধকুমারসহ অন্যান্য নদীর পানি।
বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের চর ও দ্বীপচরসহ প্রায় আড়াই শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ। বানভাসী মানুষজন ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাঁধ ও উচু জায়গা আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। টানা ৫দিন ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা এলাকা গুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট। অনেক পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে উচুঁ স্থানে আশ্রয় নিলেও তাদের হাতে কোন কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে অতিকষ্টে দিন যাপন করছে। বন্ধ রয়েছে জেলার দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি রেজাউল করিম জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জের ৫ উপজেলার চরাঞ্চলের ২৮টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলসহ সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। অপরদিকে, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুরের আরকান্দি থেকে শাহজাদপুরের কৈজুরী পর্যন্ত এলাকায় নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ডুবে গেছে এসব অঞ্চলের শত শত একর ফসলি জমি।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম জানান, মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার বেড়ে ৪৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরও বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে।