Mon. Jun 16th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৭:  96বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে আংশিক পরিবর্তনের বিষয়ে ভাবছে সরকারি দল। বাজেট পাস ও আইন প্রণয়ন ছাড়া অন্য ইস্যুতে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে, এমনকি দলের বিরুদ্ধেও সংসদে ভোট দিতে পারবেনÑ এমন পরিবর্তন আনার বিষয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে সরকারি দলের উচ্চ পর্যায়ে। একাধিক সূত্র তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।সূত্রগুলো জানিয়েছে, উচ্চ আদালতের রায়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পর মূলত বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে সরকারের নীতিনির্ধারকরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের নির্দেশনা দেন, বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায়। তখন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের পক্ষে মত দেন অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে এখন সরকারি দলের উচ্চ পর্যায়ে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনা চূড়ান্ত হওয়ার পর জাতীয় সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের বিল আনা হতে পারে।

দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নিষেধাজ্ঞা থাকায় সরকারি দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় যেদিন ঘোষিত হয় সেদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে এবং পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ষোড়শ সংশোধনীর বাতিলের রায় নিয়ে সংসদের বাইরে কথা বলতে দলের নেতা-মন্ত্রীদের নিষেধ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটা নিয়ে যা আলোচনা হবে সংসদে। সংসদের বাইরে ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে কোনো কথা বলার দরকার নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক শীর্ষ নেতা সম্প্রতি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী পুনর্বহালে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। কারণ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে বড় যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদকে।৩ জুলাই উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে অর্পণ করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে তা খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আপিল বিভাগের এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনো প্রকাশিত হয়নি।

সরকারি দলের নেতারা রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রকাশ্যে সক্রিয় হবেন বলে জানা গেছে। আপিল বিভাগের রায় ঘোষণার দিন মন্তব্য জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এ বিষয়ে মন্তব্য করব আমরা।এর আগে গত বছরের আগস্টে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ আখ্যা দিয়ে উচ্চ আদালতের হাইকোর্ট বিভাগের রায় প্রকাশিত হয়। উচ্চ আদালতের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ১৬৫ পৃষ্ঠার ওই রায়ে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে বলা হয়, ওই অনুচ্ছেদের কারণে দলের সংসদ সদস্যরা হাইকমান্ডের কাছে জিম্মি। নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা নেই। দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যরা ভোট দিতে পারেন না। বিভিন্ন উন্নত দেশে স্বাধীনভাবে সংসদ সদস্যদের সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা আছে; কিন্তু ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে আমাদের দেশের সংসদ সদস্যদের দলের অনুগত থাকতে হয়। বিচারপতি অপসারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তারা দলের বাইরে যেতে পারবেন না। রায়ে বলা হয়, এই সংশোধনী থাকলে বিচারপতিদের সংসদ সদস্যদের করুণাপ্রার্থী হয়ে থাকতে হবে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে।গত বৃহস্পতিবার দশম সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে কথা বলেন।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে অনেকে ভুল ব্যাখ্যা করেন, মন্তব্য করে বলেন, সংসদে এবার বাজেটের ওপর ২০৭ জন সংসদ সদস্য আলোচনা করেছেন। বিরোধী দলের চেয়েও এবার সরকারি দলের সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি সরকারের, বাজেটের ও অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। নিজেদের মতামত প্রকাশে কেউ তাদের বাধা দেয়নি। সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদ থাকলেও সংসদ সদস্যদের যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে তা এখন প্রমাণিত সত্য। অথচ অনেকে এই ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করেন।আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের ওই সূত্রে আরও জানা গেছে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে আংশিক পরিবর্তন আনা হলে ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের বিষয়টি ‘অটোমেটিক মিটমাট’ হয়ে যাওয়ার কথা। কারণ বাজেট পাস এবং আইন পাস ছাড়া সংসদ সদস্যরা তখন দলের বাইরে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। এমনকি উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক দলের বাইরে গিয়ে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন এমপিরা।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে আংশিক পরিবর্তন আনা হলে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বর্তমান যুক্তিটি আর কার্যকর থাকার কথা নয়। তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউয়ের প্রস্তুতি চলছে। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। জাতীয় সংসদেও এ সংক্রান্ত বিল উত্থাপনের সুযোগ আছে বলে জানান ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে ‘রাজনৈতিক দল হইতে পদত্যাগ বা দলের বিপক্ষে ভোটদানের কারণে আসন শূন্য হওয়া’ বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদিÑ (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।

সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়