খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭: নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মরজাল গ্রামে এ বছর আদার বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারমূল্য কম হওয়ায় আদা বেচে কৃষকের উৎপাদন-খরচও উঠে আসছে না। তাই হাসি নেই তাদের মুখে। লোকসানের আশঙ্কায় হতাশার মধ্যে সময় কাটছে তাঁদের।
চাষিরা জানান, উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় বিভিন্ন এলাকায় এবার প্রচুর আদা চাষ হয়েছে। গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে চাষিরা খেত থেকে নতুন আদা তুলে বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেছেন। প্রতি বছর ই মরজাল বাজার, যোশর, বাড়িচা, শিবপুর, পুটিয়াতে হাটের দিনে আদার বাজার জমে থাকে। কিন্তু এ বছর আদার দাম কম। অন্যদিকে আদাবীজ, সার, কীটনাশক আর শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় অনেকে উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না।
১৫ জুলাই মরজাল বাজার হাটে গিয়ে কথা হয় আদাচাষি আব্দুল বাসেত এর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তিন মণ আদার বীজ রোপণ করে আমার প্রায় আট মণ আদা উৎপাদন হয়েছে। বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরিসহ খরচ হয়েছে প্রায় আট হাজার টাকা। এখন প্রতি মণ ৯০০ টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছি সাত হাজার ২০০ টাকা। নিজের শ্রম ছাড়াও লোকসান হয়েছে প্রায় ৮০০ টাকা।’
জলিল বেপারী বলেন, ‘আমি ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে ১ মণ আদাবীজ রোপণ করে ৩ মণের কাছাকাছি আদা পেয়েছি। প্রতি মণ আদার দাম পেয়েছি ১ হাজার ৫০ টাকা। এতে উৎপাদন খরচের টাকাও না ওঠায় মনটা খারাপ হয়ে গেছে।’
আদা ব্যবসায়ী ফরিদ ও কাশেম বলেন, ‘ঢাকার দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমরা আদা কিনে থাকি। আজ মণপ্রতি ৯০০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় কেনাকাটা হচ্ছে। এর বেশি দামে কিনলে আমাদের লোকসান দিতে হবে।’ তাঁরা জানান, চীন, বার্মা, ভারত থেকে আদার চালান আসায় আদার দাম কমেছে। গত সপ্তাহে মানভেদে প্রতি মণ ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে আদা কিনেছেন তাঁরা। এগুলো ঢাকায় নিয়ে প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি করা যাবে। এতে তাঁদেরও তেমন বেশি লাভ থাকে না।
কিছুদিন পর নরসিংদীর বাজার ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করলে মণপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা লাভ পাওয়া যাবে বলে আশা করেন তাঁরা।
উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রায়পুরাতে এ বছর ১৩৫ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ২০ মণ হিসেবে ২ হাজার ৭০০ মণ আদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে কত মণ আদা উৎপাদিত হয়েছে তা এখনো নির্ণয় করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে রায়পুরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকা এবং রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হওয়ায় গত বছরের মতো এ বছর আদার ফলন ভালো হয়েছে।
চাষিরা ইতিমধ্যে নতুন আদা তুলতে শুরু করেছেন। তবে উৎপাদন ভালো হলেও উৎপাদন- খরচ তুলে লাভ না পাওয়ার কারণে চাষিরা কিছুটা হতাশাগ্রস্ত ও চিন্তিত।