খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭: চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নিজেরা নিজেদের প্রতিপক্ষ হবেন না। মাঝে মাঝে আপনারা নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে যেভাবে কথা বলেন, মনে হয় আপনার দলের লোক বিএনপির চেয়ে আপনার বেশি শত্রু। কলহ করবেন না, দলকে বিভক্ত করবেন না। ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না। মশারির মধ্যে মশারি খাটাবেন না।
রোববার দুপুরে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য নেতাকর্মীদের এখন থেকেই প্রস্তুতি ও প্রতিটি ভোট কেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি গঠনের তাগিদ জানান মন্ত্রী।
চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলন রমজানের আগেই শেষ হয়। কিন্তু দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের দ্বন্দ্বের কারণে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বিভক্ত হয়ে থাকেন। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে দুইজনের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে আজ এই প্রতিনিধি সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ওবায়দুল কাদের।
নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব সংঘাত মিটিয়ে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, একটা কথা বলতে চাই, আওয়ামী লীগ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, আগামী নির্বাচনে কেউ আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে পারবে না। আগামী নির্বাচনে যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।
তিনি বলেন, আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে পরিস্থিতি ২০০১ সালের চেয়েও ভয়াবহ হবে। আবারও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটবে। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ২০০১ সাল মনে আছে? বিএনপি ক্ষমতায় আসলে দেশের কী পরিস্থিতি হবে সেটা একবার ভেবে দেখেছেন?
ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০০১ সাল থেকে পরের পাঁচ বছর দেশ অমানিশার অন্ধকারে ডুবে ছিল। দেশ সে অন্ধকারে ফিরে যাবে যদি বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসে। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তবে আবারও নজিরবিহীন খুন, লুণ্ঠন ও নৈরাজ্য ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, একটা কথা বলে রাখি, বিএনপির এখন প্রধান শত্রু আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি ও তার দোসরদের প্রধান টার্গেট এখন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে হঠাতে পারলে বিএনপির শান্তি। বারবার তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। এখনো ষড়যন্ত্র চলছে, এখনো চক্রান্ত চলছে।
ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলনে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা বক্তৃতা করলেও আজ দক্ষিণ জেলার তৃণমূলের কেউই সেই সুযোগ পাননি। মঞ্চে উপস্থিত প্রতিমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় নেতা ও দক্ষিণ জেলার সংসদ সদস্যরাই কেবল বক্তব্য রাখেন। এতে প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা দিনে না পারলেও কেউ হইচই করেনি। উপস্থিতি দেখে আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। এ উপস্থিতির দাম নেই কারণ তৃণমূলের একটি লোকও বক্তব্য করতে পারেননি। যারা এখানে প্রাণভোমরা সে কর্মীরা কিছু বলতে পারেনি। অনতিবিলম্বে বর্ধিত সভা ডেকে তৃণমূলের কথা শুনবেন। তৃণমূলের কথা আমাদের খুব খারাপ লাগে। আমরা নেতারা সমালোচনা সইতে পারি না। সমালোচনা শুনতে হবে। সমালোচনা যদি সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে হয় সেটা আমি শুনব। সেটা আমি শুনতে চাই। আমি সবসময় সঠিক নাও হতে পারি।
পদ হারানোর ভয়ে কর্মীরা নেতাদের সমালোচনা থেকে বিরত থাকেন জানিয়ে কাদের বলেন, ছোট একটা পদ চলে যেতে পারে তাই এ ভয়ে কেউ কিছু বলে না নেতাদের। এ ভয়ে অনেকে মনের কথা মুখে আনে না। এদের মুখে ভাষা দিতে হবে। এদেরকে কথা বলতে দিতে হবে। এদের নালিশ শুনতে হবে। সেটাই আওয়ামী লীগের প্রাণ। সমালোচনা, আত্মসমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রাণ।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, প্রার্থীতা নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। আমাকে অমুক ভাই সবুজ সংকেত দিয়েছেন। কাদের ভাই আমাকে বলেছেন চালিয়ে যান। এই কাজ শুরু হয়ে গেছে। দয়া করে এসব কথা বলবেন না। এই চালিয়ে যেতে যেতে আওয়ামী লীগের বারোটা বেজে যাবে।
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশের জনগণ বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনার সরকারকে হঠানোর চক্রান্ত কখনো সফল হবে না। আমাদের ক্ষমতার উৎস জনগণ।
প্রতিনিধি সভায় সভাপতিত্ব করেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন চৌধুরী। সভা সঞ্চালনা করেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার চৌধুরী মহিবুল হাসান নওফেল, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।