Tue. Jun 17th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

 খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৭: আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্তমান ও সাবেক অনেক মন্ত্রী বা হেভিওয়েট প্রার্থীরাও মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন। নির্বাচন করার সুযোগ হারাতে যাচ্ছেন তারা। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে এ আভাস পাওয়া গেছে। দলের জরিপ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাঠ রিপাের্ট ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ভোটযুদ্ধের রণকৌশল থেকেই এমনটি করা হচ্ছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কঠিন নির্বাচন ধরেই শেখ হাসিনা দলের ঐক্য এবং মনোনয়নের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন।

শেখ হাসিনার দু’টি মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে যারা সংসদে রয়েছেন, তাদের এক তৃতীয়াংশই মনোনয়ন পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে হাইকমান্ড এসব সংসদ সদস্যের আসনে বিকল্প প্রার্থী যাচাই বাছাই করছেন। নির্বাচনে বিকল্প প্রার্থী হিসাবে অনেককে সবুজ সঙ্কেতও দেয়া হয়েছে। বর্তমান মন্ত্রিসভার অন্ততপক্ষে ৪/৫ জন প্রবীণ সদস্য আছেন, যারা স্বেচ্ছায় মনোনয়ন দৌঁড় থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। একাধিক প্রবীণ মন্ত্রী নিজ নিজ পুত্রের পক্ষে মনোনয়ন পাইয়ে দেয়ার চেষ্টায়রত রয়েছেন। ১৯৯৬-০১ এবং ২০০৮-১৩ মেয়াদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যেও বেশ ক’জন নিজ নিজ এলাকায় উত্তরাধিকারী তৈরিতে দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন।

পাশাপাশি ওই দুই মেয়াদের মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে যারা সর্বশেষ নির্বাচনে মনোনয়ন হাতছাড়া করেছেন তাদের অনেকে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যেই বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের মূল্যায়ণের কথা জানিয়েছেন। মন্ত্রিসভায়ও যোগ-বিয়োগের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই মন্ত্রিসভাকে ঢেলে সাজাবেন। যাদের অযোগ্য ও বিতর্কিত মনে করবেন তাদের বাদ দেবেন। তিনি বলেন, বিতর্কিত কাউকেই আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে না।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই অনেক দূর এগিয়েছে। খসড়া তালিকা যাচাই বাছাই চলছে এমন কথা জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনেরর একটি প্রার্থী তালিকা আগেবাগেই তৈরি করে রাখবে।

এদিকে দায়িত্বশীল সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তে দেখা যায়, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন এজেন্সির মাঠ পর্যায়ের সরেজমিন প্রতিবেদনে বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের পাশাপাশি সম্ভাব্য বিকল্প প্রার্থীদের অবস্থানও ফুটে উঠেছে। প্রতিবেদনে প্রায় এক তৃতীয়াংশ মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় সংসদ সদস্য হিসাবে অবস্থান অত্যন্ত শোচনীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা যায়, এসমস্ত আসনে বিকল্প প্রার্থীদের বিষয়েও সুপারিশ রাখা হয়েছে। পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনগুলোর তথ্যচিত্র প্রধানমন্ত্রীকেও হতাশ করেছে। সর্বশেষ আরেক দফা সমীক্ষার পর সংসদীয় বোর্ড বসবে। হাইকমান্ড স্বয়ং পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তিনশত আসনে প্রার্থীদের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করে রাখা হচ্ছে।

গোপালগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুক খান এবং গোপালগঞ্জ-২ আসনরর সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম দু’জনই সাবেক মন্ত্রী।

১৯৯৬-০১ টার্মে দেড় বছরের মাথায় হওয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম, গোপালগঞ্জ-১ আসনে একক প্রার্থী হলেও গোপালগঞ্জ-২ আসনে এবার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে নাম লেখাবেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। ফলে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদের বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খানের আসনটি হাতছাড়া হচ্ছে। অবশ্য কর্নেল ফারুক খানকে ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথারীতি প্রার্থী হবেন গোপালগঞ্জ-৩ আসনে।

মাদারীপুর-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম। এখানে অতীতে ১৯৯১ থেকে প্রতিটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসা সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সর্বশেষ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। কানাডার আদালত থেকে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় বিভিন্ন রাজনীতিবিদসহ সমাজের নানা অংশ তার প্রতি সহানুভূতিই প্রকাশ করেননি মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, আগামী মন্ত্রিসভার রদবদলে তাকে আবার মন্ত্রী করা হচ্ছে।

শরীয়তপুরের তিনটি আসনের মধ্যে শরীয়তপুর-২ আসনে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী। বয়সের কারণে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন না তিনি। এ আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম।

ফরিদপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী নিজ থেকে নির্বাচন না করার চিন্তাভাবনা করছেন। তার আসনে পুত্র আয়মন আকবর চৌধুরীকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন। আরমান এলাকায়কাজওকরছেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ঢাকা-১৮ আসনে এবার মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন। চাঁদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীরে ভাগ্যেও এবার মনোনয়ন বিপর্যয় ঘটতে পারে। পাবনা-১ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কম সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুরও। এখানে অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে ফিরিয়ে এনে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। বি. বাড়িয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন না। এই আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন এটিএম মনিরুজ্জামান সরকার। জামালপুরের দুটি আসনে সাবেক দুই মন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা ও আবুল কালাম আজাদ এবার মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন। আবুল কালাম আজাদের জায়গায় নূর মোহাম্মদ ও রেজাউল করিম হীরার আসনে ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন অথবা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকী বিল্লাহ মনোনয়ন পেতে পারেন।

পাবনা-১ আসন থেকে নির্বাচিত বর্তমান ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, নরসিংদী-৫ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দীন আহমেদ রাজু মনোনয়ন দৌঁড়ে নেই। রাজিউদ্দীন আহমেদ রাজু তার পুত্রকে প্রার্থী হিসাবে দেখতে চাইছেন। কিন্তু এখানে মেধাবী ব্যরিষ্টার তৌফিকুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

চট্টগ্রাম-১০ আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন না সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন। তার আসনে প্রার্থী করা হতে পারে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে ফিরে আসা সাবেক চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মঞ্জুরুল আলমকে। গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ডেপুটি স্পীকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বীও এবার মনোনয়ন হারাতে পারেন। তার আসনে প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হোসেন রিপন।

খুলনা থেকে নির্বাচিত সাবেক প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানেরও মনোনয়ন হাতছাড়া হতে পারে। মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনও মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রবীন নেতা অ্যাডভোকেট রহমত আলী এবার মনোনয়ন না পেলে তার পুত্রের জন্য মনোনয়ন চাইবেন।

সাবেক সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মোজাম্মেল হোসেন বাগেরহাট-৪ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন। এখানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এ‌্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ মনোনয়ন প্রত্যাশী।