খােলা বাজার২৪।। সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭: প্রায় এক মাস ধরে পানিবন্দি রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানের কয়েক লাখ মানুষ। মৌলভীবাজারের হাকালুকি ও কাউয়াদিঘি হাওর পাড়ের কয়েক লাখ মানুষ এক মাস ধরেই এই পানি পানিবন্দির শিকার । শুধু মৌলভীবাজার নয় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনও বিপদসীমার উপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার কবলে দেশের কয়েক লাখ মানুষ ।
হাকালুকি হাওরে বন্যার একটু উন্নতি হলেও বাড়িঘর থেকে পানি এখনো নামেনি। পানি নিমজ্জিত রয়েছে এখনো শ’শ’ গ্রাম। অকাল বন্যায় হাওর তীরের মানুষ শতভাগ বোরো ফসল হারিয়েছে। বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। ভয়াবহ বন্যায় জেলার ৩৩টি ইউনিয়নে ৭২২টি গ্রামের স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, ল-ভ- হয়ে গেছে। ৩৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬ শতাধিক পরিবার অপেক্ষায় রয়েছে তাদের বাড়ি ফেরার। তবে প্রতিদিনকার বৃষ্টি তাদের অপেক্ষা দীর্ঘায়ত করছে।
এদিকে অনেক পরিবারের মানুষ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে পারলেও নিজেদের গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন শ’ শ’ মানুষ। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে ভেসে থাকা সড়কে ও সেতুর ওপর গবাদি পশু রেখে সেখানে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।
কুশিয়ারা ও জুড়ি নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় এ বছর দীর্ঘস্থায়ী বন্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর। এ ছাড়াও হাকালুকির পানি নিষ্কাসন এলাকা বুড়ি কিয়ারী বিল ভরাট এবং বেশ কিছু ইট ভাটা বন্যার ব্যপ্তি বাড়ানো অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম .আব্দুল্লাহ আল মামুন।
অপরদিকে বন্যা এলাকায় ডায়রিয়াসহ দেখা দিয়েছে নানান রোগ। আর রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় অন্ত নেই দুর্ভোগেরও।
এদিকে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে জেলার ৫টি উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় পানিবন্দি প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে ধান,পাট,আখসহ বিভিন্ন ফসল। পাশাপাশি পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। এতে দিশেহারা কৃষক ও মৎস্যচাষিরা।
ভুকশিমইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান মনির জানান, এখন ভরা বর্ষাকাল। বৃষ্টিপাত আরো হবে। বন্যার পানি সাময়িক কমলেও তা আবার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে এখন খুশি হওয়ার কিছু নেই। বরং হাওর তীরের বন্যা কবলিত ইউনিয়নগুলোতে বন্ধ হওয়া ওএমএস দ্রুত চালু করলে মানুষের কিছুটা হলেও দুর্ভোগ লাঘব হবে।
হাকালুকি হাওর তীরের জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান গুলশান আরা মিলি জানান, হাওর এলাকায় যখন শতভাগ বোরো ফসল ভাসিয়ে নিয়ে যায়, তখনই ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা উচিত ছিল। প্রায় ৪ মাসে পুরো এলাকার অবস্থা নাকাল। রাস্তাঘাট অবকাঠামো সবকিছু ল-ভ- হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ওএমএস চাল বিক্রি বন্ধ করা দু:খজনক।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন জানান, মন্ত্রীর কাছে ওএমএস’র দাবি জানালে তিনি চালুর ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ দিচ্ছে। কিন্তু তারপরও চাহিদা মিটছে না।
দেশের বন্যা দুর্গতদের জন্য আরও ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি আগামীতে যেন এরকম বন্যার শিকার হতে না হয় সে বিষয়ে নজর দিবে কর্তৃপক্ষ এমটাই চায় বন্যা কবলিত মানুষ।
সূত্র : আরটিভি