Wed. May 14th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০১৭: 93ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) কার্যালয়ে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির (বেতনের সরকারি অংশ) তালিকা তৈরিতে অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা এ জন্য উপপরিচালককে দায়ী করেছেন। অনিয়মে তাঁকে সহযোগিতা না করায় প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মচারীকে বদলিও করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষক ও কর্মচারীদের অভিযোগ, মাউশির উপপরিচালক এ এস এম আবদুল খালেক প্রভাব খাটিয়ে তাঁর স্ত্রীকে একই কার্যালয়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার চেয়ারেও বসিয়েছেন। স্ত্রী ও ব্যক্তিগত সহকারীর (এপিএস) যোগসাজশে উপপরিচালক এসব অনিয়ম চালাচ্ছেন।

এমপিওভুক্তি নিয়ে অনিয়ম ও শিক্ষক হয়রানির ব্যাপারে উপপরিচালক এ এস এম আবদুল খালেক রোববার সকালে বলেন, ‘অনিয়ম তো মন্ত্রণালয়েও হয়। সেটা বন্ধ করতে পারবেন?’

শিক্ষক স্ত্রীকে নিজ কার্যালয়ে হিসাবরক্ষণ পদে বসানোর ব্যাপারে আবদুল খালেক বলেন, ‘পদটি ছোট হলেও একসঙ্গে থাকছি।’

কর্মচারীদের বদলির অভিযোগ প্রসঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে উপপরিচালক এ এস এম আবদুল খালেক বলেন, ‘সব বদলি হয়েছে ওপরের নির্দেশে।’

মাউশি কার্যালয়ে অনিয়ম ও শিক্ষক হয়রানির ব্যাপারে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মুহাম্মদ আবদুল লতিফ বলেন, ‘ব্যাপারটি মুখে মুখে শুনছি। কেউ আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

‘কেন্দ্রের চিঠিকেও পাত্তা দেননি উপপরিচালক’

ময়মনসিংহ সদরের মাইজবাড়ি আবদুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক সায়মা নিলুফা অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পেয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। এরপর তিনি এমপিওভুক্তির জন্য মাউশির ময়মনসিংহ আঞ্চলিক উপপরিচালকের কার্যালয়ে আবেদন করেন। কিন্তু উপপরিচালক আবদুল খালেক দেড় বছর ধরে তাঁকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন।

সায়মা নিলুফা জানান, সবকিছু ঠিকঠাক থাকা সত্ত্বেও তাঁর এমপিওভুক্তি নিয়ে উপপরিচালক আবদুল খালেক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের মহাপরিচালককে চিঠি দেন। চিঠিতে জানতে চাওয়া হয় তাঁকে (সায়মা নিলুফা) এমপিওভুক্ত করা যায় কি না? এরপর মাউশির সহকারী পরিচালক সবুজ আলম ফিরতি চিঠিতে নিলুফাকে এমপিওভুক্ত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু মাউশির সেই চিঠিকে পাত্তা না দিয়ে তিনি তা বাতিল করতেও চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ নিলুফার।

ভুক্তভোগী শিক্ষক আরো বলেন, ‘ময়মনসিংহে মাউশির দপ্তরে ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়ে গেছি। বেশির ভাগ দিন কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায় না। আমরা ছোট চাকরি করি, প্রতিবাদ করতেও পারি না।’

এ ব্যাপারে মাইজবাড়ি আবদুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম জহিরুল হক বলেন, ‘শিক্ষক সায়মা নিলুফার এমপিওভুক্তির তালিকা মহাপরিচালকের দপ্তরে পাঠানোর শেষ দিন ছিল গত শনিবার। কিন্তু তিনি (উপপরিচালক আবদুল খালেক) তা পাঠাননি।’

জহিরুল হক অভিযোগ করেন, বিষয়টি নিয়ে অনেকবার উপপরিচালকের কাছে গেছেন ওই শিক্ষক। কিন্তু তিনি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিলুফার এমপিওভুক্তি আটকে রেখেছেন। ফলে বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন নিলুফা।

এমপিওভুক্তি নিয়ে একই রকম হয়রানির শিকার নেত্রকোনার মদন শহীদ স্মরণিকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তামান্না জাহান। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাঁর এমপিওভুক্তি হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

তামান্না জাহান বলেন, ‘যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পরিপত্রের দোহাই দিয়ে আমার এমপিওভুক্তি আটকে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সময় তদবির করেছি। কিন্তু উপপরিচালক নানা অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপণ করছেন।’

‘১৩ বছর ধরে এক জায়গায় আর দুই মাসেই বদলি’

এদিকে, ময়মনসিংহে কর্মরত মাউশির সাবেক অফিস সহকারী রইস উদ্দিন শ্যামল অভিযোগ করেন, এমপিওভুক্তি ও নানা অনিয়ম নিয়ে উপপরিচালকের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে সম্প্রতি তাঁকে স্ট্যান্ডরিলিজ (তাৎক্ষণিক বদলি) করা হয়েছে ফরিদপুরে।

রেজাউল করিম নামে চতুর্থ শ্রেণির আরেক কর্মচারীকেও কয়েক দফায় জামালপুর জেলায় বদলি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। উপপরিচালক ও তাঁর স্ত্রীর পা ধরেছি বদলি না করার জন্য। কিন্তু কাজ হয়নি।’

প্রোগ্রামার আক্তারুজ্জামানকেও গত বছর ৬ নভেম্বর স্ট্যান্ডরিলিজ আদেশ দিয়ে সিলেট বদলি করা হয়। আকতারুজ্জামান বলেন, ‘উপপরিচালক খালেকের বিরুদ্ধে এমপিওভুক্তির বিষয় নিয়ে অভিযোগ ওঠায় ঢাকা থেকে একটি তদন্তদল ময়মনসিংহে আসে। তদন্তদলের সামনেই অনিয়মের প্রতিবাদ ও খোলামেলা কথা বলায় এক বছর দুই মাসের মাথায় আমাকে স্ট্যান্ডরিলিজ আদেশ দিয়ে সিলেটে বদলি করা হয়।’

অভিযোগ রয়েছে, অফিসের সাঁটলিপিকার আবুল কালামকে উপপরিচালক আবদুল খালেক তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) বানিয়েছেন। কালাম ২০০৪ সালে যোগদান করে ১৩ বছর ধরে একই জায়গায় চাকরি করছেন। পাশাপাশি উপপরিচালকের খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ায় নৈশপ্রহরী নূর হোসেন কখনোই দায়িত্ব পালন করেন না।

সূত্র জানায়, শুরু থেকেই হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাজটি কার্যালয়ের অন্য কাউকে দিয়ে চালিয়ে নেওয়া হতো। উপপরিচালক আবদুল খালেক গত বছর ২২ মে যোগদান করেই তাঁর স্ত্রী রেজুয়ানা নাসরিনকে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার চেয়ারে বসিয়ে দেন। তাঁর স্ত্রী বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন।