খােলা বাজার২৪।। সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭: উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের পর উচ্চ শিক্ষা অর্জনে প্রায় সব শিক্ষার্থীর পছন্দের শীর্ষে থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত আসন নেই। ফলে স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয় অনেক শিক্ষার্থী। এ কারণে এইচএসসি’র ফলের পর প্রতিবছরই দেখা যায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কপালে থাকে চিন্তার ভাঁজ। কিন্তু এবছর জিপিএ-৫ কম থাকায় মানবিক থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ বেড়েছে। তবে প্রতিবারের মতো এবারও বিজ্ঞান ও বাণিজ্যের শিক্ষার্থীরা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়বেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্ভাব্য ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। গতকাল উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়েছে। দশটি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ১ হাজার ৭১১ জন। গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। মোট জিপিএ পেয়েছে ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। এর মধ্যে আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে বিজ্ঞান থেকে পাস করেছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২২০ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮ হাজার ৯৩৫ জন। মানবিক থেকে পাস করেছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৩ জন। এ বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৭২৬ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পাস করেছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৪২৯ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৫৮১ জন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৩৯টি। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিবিএস পড়ানো হয় না। নবগঠিত ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা পাওয়া যায় নি। বাকি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে মোট ৪৫ হাজার ৭১টি। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ৬ হাজার ৮০০টি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এ আসন রয়েছে ১ হাজার ৩০টি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৪ হাজার ৭৭২টি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ২০০টি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৭৬০টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৬৫৩টি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ১১২টি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪৪৮টি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৭০টি, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৯৫০টি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৬৯৫টি, খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৭৫টি, রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮১৫টি, চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৯০টি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ১০টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪৩০টি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৩০০টি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ১৯০টি, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৬০টি, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৮৫টি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ে ৯১৬টি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০০টি, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৪০টি, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৮০টি, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০টি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮২৫টি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭০টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০০টি, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬১০টি, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০০টি, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১০টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭৫টি। মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে আসন রয়েছে ৩ হাজার ৭৪৪টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৯৫৩টি।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ হাজার ৮০০ আসনের মধ্যে বিজ্ঞানের জন্য রয়েছে ১৬৮০টি, মানবিকের জন্য ২ হাজার ২৪১টি, ব্যবসায় শিক্ষা থেকে উত্তীর্ণদের জন্য ১২৫০টি, সম্মিলিত বিভাগের রয়েছে ১ হাজার ৪৪০টি এবং চারুকলা অনুষদে ১৩৬টি আসন রয়েছে। সম্মিলিত বিভাগ ও চারুকলা অনুষদেও মানবিকের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন। সে হিসেবে মানবিক থেকে উত্তীর্ণদের জন্য রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০টি আসন। এভাবে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুমানিক হিসেবে মানবিকের শিক্ষার্থীদের জন্য আসন রয়েছে প্রায় ১৮ হাজার। এবছর মানবিক থেকে পাসের হার বাড়লে জিপিএ-৫ কমেছে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি ও এইচএসসির রেজাল্টের একটি যোগফল মূল রেজাল্টের সঙ্গে যুক্ত করে।
জিপিএ-৫ কমে যাওয়ায় এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাড়তি সুবিধা পাবেন। সে হিসেবে যারা জিপিএ-৫ পাননি তারাও শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবেন। অন্যদিকে বিজ্ঞান ও বাণিজ্যে প্রতিবারের মতো এবারও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। এই দুই বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। একই সঙ্গে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে বিজ্ঞান বিভাগে ১৯ হাজার ৭৪৪ জন শিক্ষার্থী বেশি পাস করেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুই বিভাগের জন্য পর্যাপ্ত আসন নেই। যার কারণে এই দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। অনেক জিপিএ-৫ ধারী শিক্ষার্থী শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হতে পারবেন না।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে পারে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান, উপকরণের অভাব এর জন্য দায়ী বলে জানা গেছে। পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত টিউশন ফি’র কারণে অনেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্ভাব্য ভর্তি পরীক্ষার তারিখ
গত ১৫ই জুলাই বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ১৪ই অক্টোবর, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২১শে অক্টোবর, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৭ই নভেম্বর, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০শে অক্টোবর, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ২৬শে নভেম্বর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ৪ঠা নভেম্বর, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ১লা ডিসেম্বর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ৮ই নভেম্বর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ১৭ই নভেম্বর, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ২রা ডিসেম্বর, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৫ থেকে ৮ই নভেম্বর, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৮ই নভেম্বর, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৯ ও ১০ই নভেম্বর, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২৭শে অক্টোবর, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০ ও ২১শে ডিসেম্বর, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৩ ও ৪ঠা নভেম্বর এবং রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী বছরের মার্চের চতুর্থ সপ্তাহে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ থেকে ১৮ই অক্টোবর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ২২ থেকে ২৬শে অক্টোবর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ২২ থেকে ৩০শে অক্টোবর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ২৫ থেকে ২৯শে নভেম্বর, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস ২৪ ও ২৫শে নভেম্বর, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ১৭ ও ১৮ই নভেম্বর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৯ থেকে ২৩শে নভেম্বর, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ২৪ ও ২৫শে নভেম্বর, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ২৬ থেকে ৩০শে নভেম্বর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ১১ই নভেম্বর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় ৮ই ডিসেম্বর এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ৫ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন শুরু হবে ২৪শে আগস্ট থেকে। তবে এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঠিক করা হয়নি।