Tue. Apr 22nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

094714food1খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০১৭: আজকাল ব্যস্ত জীবনে ছুরি আর বটি নিয়ে বসে যত্ন করে সবজি কাটার মতো সময় যেন আমাদের প্রায় কারোর হাতেই নেই। তাই সপ্তাহের শেষে সুপার মার্কেট থেকে প্যাকেটবন্দি সবজি আর মাছ-মাংস কিনে আনাই এখন রেওয়াজ। সময় মতো মশলা দিয়ে রান্না করে নিলেই তৈরি সুস্বাদু খাবার। অনেক সময় তো প্যাকেটজাত খাবারগুলো মশলা মাখানো অবস্থাতেই বিক্রি হয়ে থাকে। যার ফলে বাড়িতে তেলের ওপর নাড়াচাড়া করলেই মনের মতো খাবার পেট পুরে খাওয়া যায়।

কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছি এই প্যাকেটবন্দি কাঁচা খাবারগুলো কিভাবে দীর্ঘদিন ধরে ভালো থাকে? না কোনো ম্যাজিক বা শুধুই ফ্রিজের কেরামতি নয়। বিষাক্ত কীটনাশক এবং স্বাদবর্ধক উপাদান এই খাবারগুলোকে দীর্ঘদিন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও ব্যবহার করা হয় মাত্রাতিরিক্ত তেল, নুন এবং চিনি। এই উপাদানগুলোই আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট ঢুকতে বাধ্য করে, একইসঙ্গে বৃদ্ধি পায় কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যাও। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে এই ধরনের খাবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো কী…..

১. কৃত্রিমভাবে তৈরি মিষ্টি জাতীয় খাবার
অনেকেই আছেন, যারা চা বা মিষ্টি জাতীয় কোনো খাদ্যে সরাসরি চিনির ব্যবহার করতে চান না। তাই তাদের দৈনন্দিন জীবনে মিষ্টির ঘাটতি মেটায় কৃত্রিম মিষ্টি স্বাদের এক ধরনের ট্যাবলেট। আবার অনেকে মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়ে ডায়েট সোডা খেয়ে থাকি, যা বাস্তবে শরীরকে মোটা হওয়ার হাত থেকে তো রক্ষা করেই না, উল্টো শরীরের আরও বড় ধরণের ক্ষতি করে। কারণ এই ধরণের পানীয় বা ট্যাবলেটগুলির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে কেমিক্যাল থাকে। আর সেগুলিই ধীরে ধীরে আমাদের শরীরের ক্ষতি করে। তাই এই ধরনের কৃত্রিম মিষ্টি পদার্থ খাদ্যতালিকা থেকে যত দ্রুত সম্ভব বাদ দেওয়া উচিত।

২. সোডিয়াম নাইট্রেট
সুপার মার্কেটে ফ্রিজের ঠাণ্ডায় জমানো সসেজ, নাগেট আরও কত কি। বাড়িতে এনে তেলে ভেজে নিলেই তৈরি মুখরোচক খাদ্য। কিন্তু আমরা কখনও কি ভেবে দেখেছি, পচনশীল উপাদান হয়েও কেন এই ধরনের কাঁচা খাবারগুলি দীর্ঘদিন ধরে ঠিক থাকে! তার কারণ এগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম নাইট্রেট দেওয়া থাকে, যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

৩. ক্যাফেইন
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা কফি মগে ডুব দেওয়ার অভ্যাস আছে নাকি? তাহলে বদলে ফেলুন সেই অভ্যাস। কারণ আপনারা অজান্তেই নিজের শরীরের ক্ষতি করছেন কিন্তু! কারণ ক্যাফেইন শরীরের পক্ষে তেমন উপকারী উপাদান নয়। এ ছাড়াও ভবিষ্যতে নানা ধরনের সমস্যা যেমন, মা-বাবা হওয়ার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এই ক্যাফেইন। সেই সঙ্গে হৃদরোগ, দুশ্চিন্তা এবং মানসিক সমস্যার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায় অতিরিক্ত ক্যাফেইন সেবনের কারণে।

৪. পরিশোধিত চিনি
দৈনন্দিন খাবারের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই আমরা ব্যবহার করে থাকি রিফাইন্ড বা পরিশোধিত চিনি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে, এই ধরনের চিনি শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক। রিফাইন্ড চিনি ডায়াবেটিস তো বটেই, সেই সঙ্গে মাথা ধরা, স্থূলতা, ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

৫. এমএসজি
রাস্তার ধারে সুস্বাদু ফাস্ট ফুড থেকে অনুষ্ঠান বাড়ির মহাভোজ, সব জায়গাতেই রান্নার স্বাদ বাড়াতে যথেচ্ছ পরিমাণে ব্যবহার করা হচ্ছে এম এস জি বা মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট। এর ফলেই শরীরে বাসা বাঁধছে স্নায়ুর সমস্যা থেকে শুরু করে মাথা ব্যথার মতো হাজারো ব্যাধি।

৬. ঠাণ্ডা পানীয়
পিপাসায় কাতর হয়ে হোক অথবা গরমে ক্লান্তি দূর করতে, সব সময়ের জন্যই আমাদের খুবই প্রিয় কোল্ড ড্রিঙ্ক। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছি কি কোন কোন উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে এই ধরনের ঠাণ্ডা পানীয় তৈরিতে? ঠাণ্ডা পানীয়গুলিতে ব্যবহার করা হয় ব্রোমিন যুক্ত সাদা তেল বা ভেজিটেবল অয়েল। ব্রোমেট নামক ক্ষতিকারক এক ধরনের উপাদান থেকেই তৈরি হয় ব্রোমিন যুক্ত সাদা তেল, যা কোল্ড ড্রিঙ্কের মাধ্যমে প্রবেশ করে আমাদের শরীরে। তারপর নানারকম দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পথ প্রশস্ত করে।

৭. অলিয়ন
যেকোনো রকম স্ন্যাক্স জাতীয় খাবারেই ব্যবহার করা হয় অলিয়ন নামক উপাদানটি, যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র নানারকম পেটের সমস্যা দেখা যায়। একই সঙ্গে শরীরে ভিটামিনের পরিমাণ ব্যাপক হারে কমতে শুরু করে।

৮. জিএমও
বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে জনসংখ্যা যত হারে বাড়ছে, ততই খাদ্যের যোগান দিতে আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে নিত্য নতুন পন্থার। সবজি থেকে ফল এমনকি মাংসের চাহিদা বাজারে অটুট রাখতে নির্বিচারে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে জি এম ও অথবা জেনেটিকালি মডিফায়েড অরগানিজম। এর ফলে নানারকম অ্যালার্জি তো বটেই, এ ছাড়াও হ্রাস পাচ্ছে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। এমনকি শরীরে বাসা বাঁধছে ক্যান্সারের মতো মারণব্যাধিও।

৯. কীটনাশক
পোকা মাকড়ের হাত থেকে কৃষিজাত পণ্যকে রক্ষা করতে ব্যবহার করা হয় কীটনাশক। এ ক্ষেত্রে জেনে রাখা ভাল, যে কোনও রকম কীটনাশকই ক্যান্সার রোগের সম্ভাবনাকে ব্যাপক হারে বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক হারে কমে যায়। সেই কারণেই যেকোনো রকম সবজি, দানা শস্য, ফল প্রভৃতি রান্না করা বা খাওয়ার আগে ভাল করে ধুয়ে নেওয়া উচিত।