Tue. Apr 22nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

50738790468cc7673852e5898b4de298-599aa4c7770bcখােলা বাজার২৪।। সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০১৭: ‘এইখানে যে পানি দেখতাছেন, এইটা কোনো বিল না, এইটা হইলো আবাদি জমি। এইখানে আমরা সবজি আবাদ করছিলাম। কিন্তু বন্যার পানিতে পুরা (সম্পূর্ণ) এলাকা ডুইবা গেছে। এর নিচে রইছে আমগ্র স্বপ্নের সবুজ সবজি খেত। কিন্তু বন্যার পানি আমগ্র সবজির স্বপ্ন ভাইঙ্গা দিছে। অহন আমরা ক্যামনে বাঁচমু, ক্যামনে সংসার চালামু—এইটা নিয়া দুশ্চিন্তায় আছি।’

কথাগুলো বলাইয়েরচর ইউনিয়নের জঙ্গলদী নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক মো. নাইম মিয়ার। এলাকাটি শেরপুর সদর উপজেলার সবজিভান্ডার হিসেবে খ্যাত। ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট বন্যায় এখন সবই পানির নিচে।

নাইম বলেন, ৩০ হাজার টাকার খরচ করে আধা একর জমিতে পটোলের আবাদ করেছিলেন। কিছু গাছে পটোলও ধরেছিল। কিন্তু বন্যার পানির প্রবল স্রোতে এক রাতেই পুরো জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

এ সময় এ গ্রামের প্রান্তিক চাষি সুলতান মিয়া বলেন, ‘কৃষিকাজ কইরা সংসার চালাই। নিজের জমি নাই। ছয় কাঠা (৩০ শতাংশ) জমি বর্গা নিয়া মুলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গাসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করছিলাম। সব সবজি পানির নিচে তলাইয়া গেছে। অহন জমির মালিকরে কী দিমু আর নিজেইবা কী নিমু। ক্যামনে চলবো আমগ্র দিন। সরকারের কাছে আমরা বাঁচার জন্য সাহায্য চাই।’

ছয় একর জমি লিজ নিয়ে এ বছরই প্রথম পেঁপেবাগান করেছিলেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা নাহিদ হাসান। প্রায় আট লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এখনো পুরো বাগান তিন-চার ফুট পানির নিচে। ছবি: দেবাশীষ সাহা রায়সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বুধবার সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অস্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে নদসংলগ্ন শেরপুর সদর উপজেলার চরাঞ্চলে ঢোকে। এতে উপজেলার চরপক্ষীমারী, চরমোচারিয়া, কামারেরচর, বলাইয়েরচর, রৌহা ও বেতমারী ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২০ হাজার মানুষ। আকস্মিক বন্যা এখন কৃষকের চোখের জল হয়ে ঝরছে। অন্যদিকে রয়েছে ব্যাংক ও বিভিন্ন সমিতি থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রাথমিক হিসাবে সদর উপজেলার তিন হাজার হেক্টর জমির আমন, আউশ ও সবজি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ।

আজ সোমবার বিকেলে উপজেলার জঙ্গলদী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দুদিন ধরে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও এখনো অধিকাংশ বাড়ির চারপাশে পানি। খেতও পানির নিচে। গ্রামের অন্তত ২০ জন কৃষক বলেন, এখানকার অধিকাংশ মানুষ সবজি আবাদের ওপর নির্ভরশীল। ধানের পাশাপাশি সারা বছরই এ আবাদ করা যায়। এ এলাকায় উৎপাদিত বেগুন, পটোল, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দুল, লাল শাক, লাউ শাকসহ বিভিন্ন সবজি শেরপুর জেলা সদরসহ রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করা হয়। কিন্তু এবারের বন্যায় ধান, সবজিসহ অধিকাংশ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তাঁরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে সবজিচাষি আশরাফ আলীর ঝিঙে আবাদ। ছবি: দেবাশীষ সাহা রায়জঙ্গলদী নয়াপাড়া গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা নাহিদ হাসান বলেন, ‘ছয় একর জমি লিজ নিয়ে এ বছরই প্রথম পেঁপেবাগান করেছিলাম। এ জন্য প্রায় আট লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। ছয় মাস ধরে পেঁপেবাগানের পরিচর্যার কাজ করেছি। গাছে পেঁপে ধরেছিল। ইতিমধ্যে ৪০-৪৫ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রিও করেছিলাম। কিন্তু বন্যায় পেঁপেবাগানটি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এখনো পুরো বাগান তিন-চার ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। গাছের পাতাগুলো হলুদ হয়ে মরে যাচ্ছে। আর আমার সবুজ সবজির স্বপ্ন ভেঙে গেছে।’

জঙ্গলদী গ্রামের মৎস্যচাষি মো. লেচু মিয়া বলেন, আটজন চাষি মিলে কুরখাখালী বিলের প্রায় ১০০ একর জমিতে মাছ চাষ করেছিলেন। খরচ হয়েছিল প্রায় ছয় লাখ টাকা। কিন্তু বন্যার পানিতে সব মাছ ভেসে গেছে। এখন তাঁরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। মাছ চাষ তাঁদের প্রধান পেশা। এখন সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

শেরপুর সদরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিকন কুমার সাহা দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, চরাঞ্চলের কৃষকেরা সবজি আবাদ করে স্বাবলম্বী হওয়ায় দিন দিন শাকসবজির আবাদ বাড়ছিল। কিন্তু বন্যায় সবজিচাষিরা এবার চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি জানান, বন্যার পানি সরে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ বিবরণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। তখন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।