খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭: মেহেদী হাসান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: যানজট পূর্ণ ঢাকা, সেখানে শতভাগ অনাবাসিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) পরিবহনে সঙ্কট ধীরে ধীরে তীব্র আকার ধারণ করেছে। টাকা দিয়েও ২৩ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৭ হাজার শিক্ষার্থীই পরিবহন সেবা পাচ্ছেন না। প্রতিনিয়ত সকাল-বিকাল ঝুলন্ত অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন তারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শতভাগ অনাবাসিক হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিবহন সংকট দূর করার যথাযথ উদ্যাগ নেয়নি। বেহাল অবস্থায় রয়েছে পরিবহন খাত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শতভাগ অনাবাসিক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সুবিধা ভোগ করে খুব কম শিক্ষার্থী। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বছরে ৬০০ টাকা করে পরিবহন ফি আদায় করা হয়। এ হিসেবে পরিবহন বাবদ বছরে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সাড়ে ২৩ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১৬টি বাস রয়েছে। এর মধ্যে ভাড়ায় চালিত বিআরটিসির দ্বিতল বাস রয়েছে ১২টি, নিজস্ব ৪টি। প্রতিটি দ্বিতল বাসের ধারণক্ষমতা ১০০ জন। সেই হিসেবে মোট ১৬টি বাসের ধারণক্ষমতা প্রায় এক হাজার চারশত। সাড়ে ২৩ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ২১ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য কোনো পরিবহন ব্যবস্থা নেই। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ধারণক্ষমতার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি শিক্ষার্থী যাতায়াত করছেন বাসগুলোতে। সূর্যের আলো উঠার আগে ঝুলন্ত বাদুরের মত আসেন আবার ক্লাস-পরীক্ষা শেষে ক্লান্ত শরীরেও বাদুড় ঝোলা হয়েই ফেরেন তারা। এতে দূর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। বাসগুলোতে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি শিক্ষার্থী বহন করায় প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। গত বছরের ডিসেম্বরে সাভারে বিশ্ববিদ্যালয় বাস থেকে পড়ে মিশুক নামের এক শিক্ষার্থী আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওই বছরের মার্চ মাসে বাসের পা-দানিতে দাঁড়ানো অবস্থায় অপর একটি বাসের ধাক্কায় এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছিলেন। এসব দুর্ঘটনার পরেও বাস ও ট্রিপের সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে না।
পরিবহন দপ্তর সুত্র জানায়, ভাড়ায় চালিত বিআরটিসির মোট ১৫টি বাস শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহনে ব্যবহার করা হয়। এ জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। প্রতিদিন বিআরটিসিকে ভাড়া বাবদ এক লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়। সে হিসেবে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হয় কর্তৃপক্ষকে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, পরিবহনের জন্য বছরে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৬০০ টাকা ফি দিতে হয়। শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধা দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিআরটিসি থেকে বাস ভাড়া করে চালাচ্ছেন। ভাড়া হিসেবে যে টাকা গুণতে হচ্ছে তা দিয়ে প্রতি মাসে গাড়ি কেনা সম্ভব। প্রতি বছর প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। কিন্তু পরিবহন সুবিধা বাড়ে না।
ডাবল ট্রিপের দাবি: বিভিন্ন সময় আন্দেলনে ডাবল ট্রিপের দাবি করা হলেও তা চালু করা হচ্ছে না। পরিবহন ফি দিয়েও পরিবহন সুবিধা না পাওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে পাবলিক বাসে যাতায়াত করেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষা শেষ হয় ১২ টার আগেই। কিন্তু ডাবল ট্রিপের কোন ব্যবস্থা না থাকায় এবং বাস ফেরার সূচী বিকালে মাএ একবার থাকায় লম্বা সময় কোন কাজ ছাড়াই বিশ^বিদ্যালয়ে সময় নষ্ট করতে হয় বিকেল পর্যন্ত নতুবা লোকাল বাসের শরণাপন্ন হতে হয় বাসায় কিংবা মেসে ফেরার জন্য। লোকল বাসে হাফ ভাড়াকে কেন্দ্র করে প্রায়ই ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। এর স্থায়ী সমাধানের দাবি শিক্ষার্থীদের। ডাবল ট্রিপ চালু, বাসের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ পরিবহনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বারবার আন্দোলন করছেন তারা। কিন্তু প্রশাসনের এ ব্যপারে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই বললেই চলে।
বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে প্রায় একই ধরণের ভোগান্তির কথা জানা যায়। ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের থাকার জায়গা দেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাই বিভিন্ন গন্তব্য থেকে প্রতিদিন ক্যাম্পাসে আসতে-যেতে সময় লাগে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪-৫ ঘণ্টা আমরা জ্যামে বসে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি সকাল ৯টার মধ্যে। এরপর মেসে বা বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। ফিরেই খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি। পড়াশোনা করার মতো শক্তি ও মানসিকতা কোনোটাই আর থাকে না। অনেকে টিউশনি করেন, ফলে সেখানেও সময় দিতে হয়। তাই অন্তত ২-৩ ঘণ্টা হাতে সময় নিয়ে বের হতে হয়, পরীক্ষা অথবা ক্লাস যেটাই থাকুক হাতে বই থাকে। বাসে বসেই পড়াশোনা করতে হয়। বাসায় অথবা হোস্টেল থেকে পড়াশোনা শেষ করে আসার কথা থাকলেও পরীক্ষার প্রস্তুতিটা অনেক সময় বাসে বসেই নিতে হয়। পরিশেষে শিক্ষার্থীদের দাবি একটাই, জবির পরিবহন সমস্যার থেকে মুক্তি চাই।