Wed. Apr 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

k12খােলা বাজার২৪।।বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭: সামিরার ষোল বছরের জীবনে বয়ে গেছে নির্মম এক ঝড়। সামিরা বেগম। ষোল বা সতের বছরের এক কিশোরী। উদভ্রান্তের মতো টেকনাফের শামলাপুর বাজারে একটি মাছের আড়তে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের সাথে বসে আছে।

অন্যদের চেয়ে এই কিশোরীকে সহজেই আলাদা করা যায়। চোখ মুখে বেদনার ছাপ। নাম জিজ্ঞাস করতে বললো সামিরা। এই ষোল বছরের জীবনে বয়ে গেছে নির্মম এক ঝড়। চোখের সামনে খুন হয়েছেন বাবা, মা, দুই ভাই। চার বোন হয়েছেন ধর্ষণের শিকার।

কাঁদতে কাঁদতে জানান, আমার চোখের সামনে ৪ বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে।

আর নিজে ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে জীবন নিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে কোনো মতে নাফ নদী পার হয়ে এপারে এসেছে। সামিরার এখন কেউ নেই।

বাবা, মা আর দুই ভাইকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা হত্যা করেছে। চার বোন কী বেঁচে আছে, তাও জানে না সামিরা।

ঘটনার দিন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের বাড়িতে ঢুকে পুরুষ ও নারী সমস্যদের আলাদা করে ফেলে। বোনদের যখন ধরে একটি রুমে আটকে রাখা হচ্ছিলো।

তখন সামিরার বাবা ও ভাইয়েরা বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। সেখানেই গুলি করে বাবা ও মাকে হত্যা করে সৈন্যরা। এরপর দুই ভাইকে জবাই করে।

সামিরা যখন এসব বর্ণনা দিচ্ছিলো তখন তার কণ্ঠ বাষ্পরুদ্ধ হয়ে আসছিল। চোখে পানি নেই। কান্নার ক্ষমতাও যেনো হারিয়ে ফেলেছে। আনমনা হয়ে পড়ছে সামিরা।

সামিরার বোনদের রুমের মধ্যে উলঙ্গ করে চলে পৈশাচিক উল্লাস। সামিরার গায়ে হাত দেয় সৈন্যরা, চিৎকার করতে থাকে সামিরা।

এক পর্যায়ে তার উরুতে রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করে এক সৈন্য। চিৎকার করে ঘর থেকে বেরিয়ে পরে সামিরা। এরপর অন্য প্রতিবেশীদের সাথে নৌকায় উঠে পরে।

কোথায় যাচ্ছে তখনও তিনি কিছুই জানতো না। এখন সামিরার কেউ নেই। বার বার ভেসে উঠছে মা, বাবা আর ভাই বোনদের মুখ। তার বড় বোনেরা কী বেঁচে আছেন? জানে না সামিরা।

তবে শুনেছে মিয়ানমার আর্মি অনেক মেয়ের ওপর জুলুম (ধর্ষণ) করে তাদের হত্যা করেছে। হয়তো সামিরার বোনদের একই পরিণতি হয়েছে।

বাকরুদ্ধ সামিরা জানে না কোথায় সে যাবে। কী করবে। কী খাবে। দুদিন হলো সাগর পারি দিয়ে এ বাংলাদেশে এসেছে। পেয়েছে কয়েক কেজি চাল আর আলু।

কিন্ত এগুলো কোথায় রান্না করবে জানে না। আরেকজন কিছু বিস্কুট দিয়েছে। তা খেয়ে আছে। আসলে খেতেও তার ইচ্ছে করে না। কিন্ত এখন কী করবে, পরিবারের আদরের মেয়েটি।

নয় সদস্যর পরিবারে সামিরারা দুই ভাই পাঁচ বোন। বাবার ছোট দুই ভাই শফিক আর ফারুক ব্যবসায় সাহায্য করতো। বড় বোন ফাতেমার বিয়ে হয়েছিলো। মরিয়ম, কাজল আর রোজিনার সাথে হেসে খেলে তাদের কৈশোরের আনন্দময় দিন ছিলো।

এখন সামিরার চোখে শুধুই অন্ধকার। তার কেউ নেই। বাবা নেই, মা নেই, ভাই নেই, নেই বোনও। তুমি কী সুযোগ পেলে আবার মিয়ানমার ফিরে যাবে? মংডুর গ্রামে?

চোখ ছল ছল করে উঠে সামিরার। বলে কার কাছে যাবো? ওরা তো গেলে মেরে ফেলবে। বাকি জীবন মৃত্যুর বিভীষিকা নিয়ে হয়তো বেঁচে থাকতে হবে সামিরাকে।