খােলা বাজার২৪।। শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭: ক্রীড়া প্রতিবেদক : দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশ দলের ‘টু ডু’ লিস্টের শীর্ষে অবধারিতভাবে পেস বোলিং সামলানোর কৌশল আবিষ্কার। বেনোনিতে চলমান তিন দিনের ট্যুর ম্যাচের প্রথম দিন সে অভিযানে সাফল্য দাবি করতেই পারে মুশফিকুর রহিমের দল।
প্রথম ইনিংসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মমিনুল হক সে দলেই। তাঁর দৃষ্টিতে দলের কারোরই পেস বোলিং খেলা নিয়ে সমস্যা হয়নি। গতকাল ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে কন্ডিশন ব্যবহারে বাংলাদেশি পেসাররাও উতরে গেছেন ভালোভাবে। এ রিপোর্ট লেখার সময় ৭ উইকেটে ৩০৭ রান নিয়ে ব্যাট করছিল দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশ, যদিও একটা সময় ১৬৮ রানে ৬ উইকেট খুইয়ে ধুঁকছিল স্বাগতিকরা।
অভিষেকের পর থেকে টেস্টে বাংলাদেশের মানে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স মমিনুল হকের। তবে মাত্র দুটি টেস্টে রান না পেতেই তাঁকে দল থেকেই বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন হেড কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে। বলা হলো, পেস বোলিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে ইদানীং অফ স্পিনও ভালো খেলতে পারছেন না মমিনুল! সে দৃষ্টিকোণ থেকে স্বভাবতই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ‘অ্যাসিড টেস্ট’ মমিনুলের। প্রথম ইনিংসে ৭৩ বলে ৬৮ রানের ইনিংস দেখে কোচের বিভ্রান্তি দূর হয়েছে কি না, জানা যায়নি। তবে মমিনুলের নিজের মনে হয়েছে, ‘আমার কাছে তেমন কিছু মনে হয়নি।
আমার মনে হয়, আমাদের দলের সবাই শর্ট বল সামলাতে পারে। কেউ ভালো খেলে, কেউ-বা দেখেশুনে ঠিকঠাক ছেড়ে দেয়। ’
তার পরও ফাস্ট বোলিং তো সব ব্যাটসম্যানের জন্যই চ্যালেঞ্জের। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কন্ডিশনে। সে চ্যালেঞ্জ নিয়েও খুব একটা দুর্ভাবনা নেই মমিনুলের, ‘শর্ট বল খেলা চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে কি না? আপনি যদি মনে করেন চ্যালেঞ্জ, তাহলে চ্যালেঞ্জ। আর যদি মনে করেন চ্যালেঞ্জ না, তাহলে চ্যালেঞ্জ হবে না। আর এটা নির্ভর করছে কন্ডিশনের ওপর, কেমন উইকেটে খেলবেন। ’ দলের বাকিদের ব্যাটিং নিয়েও সন্তুষ্ট তিনি, ‘সব মিলিয়ে আমার মনে হয় এই কন্ডিশনে ব্যাটসম্যানরা সবাই ভালো ব্যাটিং করেছে। মানিয়ে নিতে পেরেছে সবাই। ’ কথাবার্তা শুনে মনে হতে পারে মমিনুল বুঝি প্রস্তুতি ম্যাচের ফিফটি করেই আশ্বস্ত। পরের মন্তব্যেই জানিয়ে দিলেন, বরং আক্ষেপ আছে তাঁর মনে, ‘ইচ্ছে ছিল দ্বিতীয় নতুন বলটা খেলার। সেটা করতে পারলে ভালো হতো। ’ তিন নম্বরে নামা ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় নতুন বল খেলতে চাচ্ছেন মানেই ধরে নিতে হবে, তাঁর লক্ষ্য বড় ইনিংস। বাংলাদেশের ‘ব্র্যাডম্যানে’র কাছে তো এমনই চাওয়া দলের।
দলের চাওয়া আছে বোলারদের কাছেও, বিশেষ করে কন্ডিশন বিবেচনায় পেস আক্রমণের কাছেই বড় দাবি বাংলাদেশ দলের। প্রথম দিন আইজ্যাক ডিকগাল রান আউট হয়ে ফিরেছিলেন। গতকাল দিনের শুরুতেই স্থানীয় দলের আরেক ওপেনার ইয়াসিন ওয়ালিকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেছেন শুভাশীষ রায়। লিউস দু প্লুয়কে নিজের প্রথম স্পেলেই ফিরিয়েছেন শফিউল ইসলাম। অধিনায়ক হেনরিক ক্লাসেনকে নিজের শিকার বানিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। অপরপ্রান্তে উইকেট পতন ঘটলেও টপ অর্ডারের জুবায়ের হামজা ছিলেন অনড়। তাঁর সে প্রতিরোধ ভেঙেছেন বাংলাদেশ একাদশের আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ।
প্রতিপক্ষ ইনিংসের অর্ধেকটা তুলে নেওয়ার পর বাকিটা উপড়ে ফেলার ক্ষেত্রে সেই পুরনো ব্যর্থতার পালা এরপরে। ম্যাথিউ ব্রিজক, ম্যাথিউ ক্রিস্টেনসেন এবং শন ফন বার্গের দাপটে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের বড় রানে লিডের সম্ভাবনা ধুঁয়ে গেছে শেষমেশ। সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের নেতা মেহেদী হাসান মিরাজ শুরুতে বিস্তর রান দিয়ে শেষবেলায় উইকেট পেয়েছেন একটিই—ব্রিজকেরটি। স্থানীয় দলের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরিয়ান ক্রিস্টেনসেন পরিণত হয়েছেন শফিউলের দ্বিতীয় শিকারে।
উইকেট সংখ্যা বিবেচনায় শফিউলই সফলতম বোলার। তবে ওভারপিছু পাঁচের ওপর রান দেওয়াটা ডান হাতি এ পেসারের পক্ষে যায় না। তবে নতুন বলে মুস্তাফিজুর রহমান, শুভাশীষ রায় সর্বোচ্চ সমীহ পেয়েছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের। একটি করে উইকেট পেলেও শুভাশীষ ছাপিয়ে গেছেন বাকিদের। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১৫ ওভার বোলিং করেছেন তিনি, তবে রান খরচ করেছেন সবচেয়ে কম। ওভারপ্রতি ১.৮০ করে। মুস্তাফিজের ইকোনমি রেট এর চেয়ে সামান্য বেশি ১.৮৩। তাসকিন আহমেদ বরাবরই আক্রমণাত্মক, তাই রানও গুনেছেন বেশি, ৪.৩০। সব সময় তারকাদের আলোয় আড়ালে পড়ে যাওয়া বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম যথারীতি হিসেবি বোলিং করেছেন।
তাতেও অবশ্য বোলিং নিয়ে চাপা উদ্বেগ রয়েই গেছে। ক্রিস্টেনসেনের পর নিখাদ টেল এন্ডারদের নিয়ে যে পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছেন শন ফন বার্গও!