Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

8খােলা বাজার২৪।। মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭: নির্যাতনের কারণে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা দেবে তুরস্ক। রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে বিরাট সুখবর দিলেন এরদোয়ান। এছাড়া তুরস্ক রোহিঙ্গাদের জন্য শিগগিরই ১৩টি আইটেমের সমন্বয়ে প্রস্তুতকৃত ১০ হাজার প্যাকেট ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করবে।

সফররত তুরস্কের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিষয়ক সংস্থার সমন্বয়ক আহমেদ রফিক আজ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সাথে তার সচিবালয়ের অফিসকক্ষে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে একথা জানিয়েছেন।

সাক্ষাৎকালে তারা রোহিঙ্গা পরিস্থিতিসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করেন। রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের বিষয়টিকে অমানবিক হিসেবে উল্লেখ করে দ্রুত এর সমাধান আশা করেন তারা।

ত্রাণ মন্ত্রী জানান, একান্ত মানবিক কারণে বাংলাদেশ মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গা নিয়ে সরকারের মনোভাব ও অবস্থান অবহিত করেন মন্ত্রী।

তুরস্কের প্রতিনিধি জানান, রোহিঙ্গা সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে তুরস্ক বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

এ সময় আহমেদ রফিক জানান, তুরস্ক বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে দেবে। আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের স্থান নিয়ে আলোচনা করেন তারা। আহমেদ রফিক আরো জানান, তুরস্ক শিগগিরই ১৩টি আইটেমের সমন্বয়ে প্রস্তুতকৃত ১০ হাজার প্যাকেট ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করবে। এগুলোর হস্তান্তর নিয়েও কথা বলেন তারা।

প্রতিনিধি আরো জানান, শিগগিই তুরস্কের উপপ্রধান মন্ত্রী রিসেপ আব্বাস বাংলাদেশ সফর করবেন। বাংলাদেশ তুরস্কের উপপ্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবে বলে মন্ত্রী প্রতিনিধিকে জানান। সফরের কর্মসূচি নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে আলাপ হয়। -বাসস

রোহিঙ্গাদের পক্ষে এরদোগান সোচ্চার যে কারণে

গত আটমাসে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান।

তিনি সরাসরি বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে।

এরদোগানের মতো এতোটা জোরালো অভিযোগ অন্য কোনো রাষ্ট্রপ্রধান করেননি।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে এরদোগান সরাসরি ফোন করেছিলেন মিয়ানমারের সবচেয়ে ক্ষমতাবান রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সু চি-কে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সু চি’র কাছে উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুর্দশা সচক্ষে দেখতে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি আমিনা এরদোগান বাংলাদেশে আসেন। টেকনাফে রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যান।

প্রশ্ন হচ্ছে, রোহিঙ্গা ইস্যুকে তুরস্ক কেন এতটা গুরুত্ব দিচ্ছে?

যুক্তরাষ্ট্রের অস্টিন পি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক ড. তাজ হাশমি মনে করেন এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে।

তুরস্ক একসময় মুসলিম বিশ্বে নামকরা একটি দেশ ছিল। ইরান ছাড়া পুরো মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা তুরস্কের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

হাশমি বলেন, “অনেকে এরদোগানকে বলছেন নিউ সুলতান। উনি তুরস্কের সে পুরনো রোলে (ভূমিকায়) ফিরে যেতে চাচ্ছেন। তুরস্কের পুরনো শৌর্য পুনরুত্থান করতে হবে।”

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সোচ্চার হওয়ার পেছনে এরদোগানের ব্যক্তিগত বিষয় জড়িত আছে বলে মনে করেন হাশমি।

তিনি মনে করেন, ইসলামপন্থী হিসেবে পরিচিত এরদোগান মুসলিম বিশ্বের প্রধান প্রতিনিধি হতে চাচ্ছেন।

এরদোগান চাচ্ছেন, মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরব এবং পাকিস্তানের পরিবর্তে তুরস্ককে নেতৃত্বের আসনে নিয়ে আসতে।

রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এরদোগান সোচ্চার হলেও মিয়ানমারের উপর তিনি কতটা চাপ তৈরি করতে পারবেন?

তাজ হাশমি মনে করেন, সে সম্ভাবনা খুবই কম। ভারত এবং চীন প্রত্যক্ষভাবে এবং আমেরিকা পরোক্ষভাবে মিয়ানমারের শাসক গোষ্ঠীকে সহায়তা করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

“নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তিনি রোহিঙ্গা রিফিউজিদের ফিরিয়ে দেবেন। চীন সিকিউরিটি কাউন্সিলে ভেটো দিয়েছে। তার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অ্যাকশন নেয়ার ঘোর বিরোধী। এছাড়া মুসলমানদের ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে পলিসি তাতে মনে হচ্ছে না যে আমেরিকা এগিয়ে আসবে। আমেরিকার মিডিয়াতে রোহিঙ্গাদের ব্যাপার নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য হচ্ছে না,” বলছিলেন তাজ হাশমি।

তার ধারণা বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি নতুন ফ্রন্ট দাঁড় করানো যায় কিনা সে চেষ্টা তুরস্ক করছে।

যদি মিয়ানমারের উপর কোনো চাপ তৈরি করা সম্ভব না হয়, তাহলে এরদোগানের তাতে কী লাভ হবে?

তাজ হাশমি মনে করেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সোচ্চার হয়ে এরদোগান দেশের মধ্যে এবং মুসলিম বিশ্বে এক ধরনের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।

তিনি বলেন, “মুসলিম বিশ্বে তার একটা ইমেজ সৃষ্টি হবে যে উনি ইসলামের একজন চ্যাম্পিয়ন, উনি মুসলিম বিশ্বের ঐক্য সাধনে প্রচেষ্টা করছেন।”

তাজ হাশমির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, তুরস্ক চাচ্ছেন সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ইরান ও বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে একটি ফ্রন্ট করার চিন্তা-ভাবনা এরদোগানের রয়েছে।