খােলা বাজার২৪।। মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭: এবার কি দুঃখ ঘুচবে দক্ষিণ আফ্রিকার? হাহাকার ঘুচে এবার কি মিলবে আলোর দেখা? অনাদায়ি হিসাব বুঝে নেওয়ার সুযোগ হবে? দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অনেক দেনা পড়ে আছে বাংলাদেশের। প্রোটিয়াদের কাছে আতিথ্য নিয়ে যে বারবার হতাশ করেছে বাংলাদেশ। টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকানদের দুবার ব্যাটিং করার সুযোগই দেয়নি সফরকারীরা!
২০০২ সালের বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ছিল আদতে শিক্ষা সফর। মাত্রই টেস্ট আঙিনায় পা রাখা দলটি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যে খুব বেশি করতে পারবে না, এটা জানা ছিল সবার। ইস্ট লন্ডনের সে ম্যাচে বাংলাদেশ আশাতীত ভালো করেনি। কিন্তু গ্যারি কারস্টেন, হার্শেল গিবস, গ্রায়েম স্মিথ ও জ্যাক ক্যালিসদের সে দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সকে উড়িয়ে দেওয়াও যাবে না। প্রথম ইনিংসের ১৭০ রানকে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫২ রানে তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ মাত্র ১০ ওভার খেলা হলেও ম্যাচটা গড়িয়েছিল চতুর্থ দিনে।
দুই ইনিংস মিলিয়ে সেবার ১৪৬ ওভার খেলেছিল বাংলাদেশ। রানে দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র ইনিংসকে (৫২৯/৪) পেছনে ফেলতে না পারলেও বল খেলায় বাংলাদেশ অন্তত পেছনে ফেলছিল স্বাগতিকদের (১২৯ ওভার)। দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলা পরের তিন টেস্টেই এ কাজ আর করা হয়নি বাংলাদেশের!
পরের সপ্তাহে পচেফ্স্ট্রুমে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ২১৫ রান তোলা কিংবা ৬৯.৫ ওভার খেলায় উন্নতির ছাপ মিলছিল। হাজার হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে প্রথম দিনে ব্যাট করতে নামার অভিজ্ঞতা তো ছিল না ওই দলের কারও। কিন্তু সে স্বস্তি উবে গেল দ্বিতীয় ইনিংসে। মাত্র ১০৭ রানে অলআউট হয়ে সিরিজ শেষ করেছিল বাংলাদেশ। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ অলআউট হওয়ার আগে মাত্র ৩০.৩ ওভার ব্যাট করেছে দল।
দক্ষিণ আফ্রিকায় সাদা পোশাকে আরেকবার খেলতে ছয় বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ২০০৮ সালের সে সিরিজে অবশ্য বোলাররা নিজেদের সর্বস্ব দিয়েছেন। দুই টেস্টেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুবার অলআউট করেছেন সাকিব-মাশরাফিরা। কিন্তু মূল সমস্যা ব্যাটিংয়ে কোনো উন্নতির নজর মেলেনি। ব্লুমফন্টেইনে সিরিজের প্রথম টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯০ ওভারও খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে চাইলে এ ম্যাচ থেকেও উজ্জ্বল দিক বের করে নেওয়া যায়। তামিম-আশরাফুল কিংবা মুশফিকদের এমন ব্যর্থতার পরও ম্যাচটা চতুর্থ দিনে গড়িয়েছিল। কারণ, বৃষ্টি-বাধায় তৃতীয় দিনে মাত্র ১৯ ওভার খেলা হয়েছিল। আর দুই ইনিংসেই দেড় শ ছাড়ানোকে (১৫৩ ও ১৫৯) সাফল্যের কাতারে নেওয়া ঠিক হবে কি না, এ নিয়ে তর্ক হতে পারে।
সেঞ্চুরিয়নে অবশ্য দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০০ ওভার পার করেছিল বাংলাদেশ। তবে সেবারও দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র ইনিংসকে (১১৫.২ ওভার) ছাড়াতে পারেননি তামিম-সাকিবরা। প্রথম ইনিংসে ২৫০ রান করে ও ৭৬.২ ওভার খেলে তাও যা একটু লড়াইয়ের ভাব জাগিয়েছিল বাংলাদেশ; কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে এর অর্ধেক সময়ও (৩৬.৪) ব্যাটিং করা হয়নি। রানটাও ছিল দেড় শর (১৩১) নিচে।
অবশ্য বাংলাদেশের বিপক্ষে একবার ব্যাটিং করাটাই অভ্যাস হয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার। ২০১৫ সালে বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়া সে সিরিজের আগে ৮ ম্যাচে মাত্র একবারই ইনিংস পরাজয় এড়াতে পেরেছে বাংলাদেশ। আর ২০১৫-এর চট্টগ্রাম টেস্টে তো লিডও পেয়েছিল বাংলাদেশ।
আশার কথা, এই বাংলাদেশ ‘সেই বাংলাদেশ’ তো নয়। সেটাই এবার মাঠে প্রমাণ করার পালা।