
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব দুর্গাপূজা। উৎসব মানেই আনন্দ, সাজসজ্জা, নতুন পোশাক পরা, ঘুরে বেড়ানো। দুর্গাপূজার আয়োজন চলে কয়েকদিন ধরে। তাই প্রতিদিনের উত্সবের সাজেই থাকা চাই ভিন্নতা। শুরু থেকেই যদি একটি প্ল্যান করে নেওয়া যায় যে কোন দিন কী ধরনের পোশাক পরবেন বা কীভাবে সাজিয়ে তুলবেন নিজেকে, তাহলে পূজার উৎসবের দিনগুলোতে সাজের ভিন্নতা রাখতে পারবেন খুব সহজেই। দুর্গাপূজার সময়টায় মোটামুটি গরম আবহাওয়াই বিরাজ করে তাই পূজামণ্ডপে দীর্ঘ উপস্থিতির ক্ষেত্রে সুতি পোশাকটাই বেশি স্বস্তিদায়ক হয়। আর মেকআপ, হেয়ারস্টাইল ও অন্যান্য সাজের অনুষঙ্গ অনেকটাই নির্ভর করে পোশাক, আবহাওয়া, পরিবেশ, অনুষ্ঠানের ধরন—এ সবকিছুর উপর।
মুখের মেকআপ
মেকআপের ভিত্তিই হলো বেজ মেকআপ। বেজ মেকআপের জন্য এ সময়ে অর্থাত্ পূজার সারাদিনের সাজে অবশ্যই স্কিন টোনের সঙ্গে ম্যাচ করে বা এক বা আধ শেড উজ্জ্বল মেকআপ নির্বাচন করা প্রয়োজন। গরমের কারণে ঘাম হয়, তাই মেকআপ হতে হবে ওয়াটার প্রুফ। একই সঙ্গে ত্বক সানবার্নমুক্ত রাখতে অবশ্যই সান প্রোটেকটেড ফিল্টার সমৃদ্ধ মেকআপ নির্বাচন করা প্রয়োজন। বেজ মেকআপ করার আগে মনে রাখবেন, আপনার চেহারার দোষত্রুটি আড়াল করে লুকিয়ে থাকা সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলাই কিন্তু এর কাজ। বেজ মেকআপ অ্যাপ্লাই করলে চেহারা বা ত্বকের ন্যাচারাল শেড ঢাকা পড়ে যায়। ফ্ল্যাট লুক আসে। তাই ডার্কশেড ব্যবহার করে পুনরায় চেহারার শার্পনেস ঠিক করে নিতে হবে। আপনার পূজার সাজ যেহেতু হবে হালকা, তাই বিশেষভাবে খেয়াল রাখবেন এর প্রতি। মনে রাখবেন, অতিরঞ্জিত কিছু দিনের আলোয় সহজেই ধরা পড়ে।
যেহেতু দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা। তাই সাজসজ্জায় বাঙালি লুকটাই গুরুত্ব পায়। আর পূজা যেহেতু গরমের সময় তাই হালকা মেকআপই ভালো লাগবে। আইশ্যাডের ক্ষেত্রে ব্রাউন, ব্রোঞ্জ, গোল্ডেন, কপার এবং চাহিদা অনুযায়ী আইলাইনার ও ২ বা ৩ কোট মাশকারার প্রলেপ দিন। যা এ সময়ের জন্য উপযুক্ত। মনে রাখবেন, আইব্রুর শেপ ও আইলাইনার দেওয়ার ধরন আপনার ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করবে।
লিপস্টিক
চোখের মেকআপকে গুরুত্ব দিতে হলে ঠোঁটের সাজ হালকা রাখতে হয়। আবার একটু গ্লসের ব্যবহারেই হালকা লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁটই বেশি গুরুত্ব পেয়ে যায়। কিন্তু এই গরমের সময় পূজার দিনের সাজ লিপগ্লস একদমই বেমানান। তাই বুঝে নিন কোনটি আপনার জন্য মানানসই। একপ্যাচে লাল সাদা গরদের শাড়ি, চুলের সাজে খোঁপা বা বেণী বা খোলা রাখা লম্বাচুল, সিঁথিতে সিঁদুর, কপালে লাল টিপ, হাতে শাখা—এ সাজে খুব সহজেই আমরা ঠোঁটে লাল লিপস্টিকই ভাবি। আবার এই ধরনের সাজের সঙ্গে সালোয়ার-কামিজ বা ফতুয়াকে পোশাক হিসেবে ভাবা যায় না। অর্থাত্ ঠোঁটের লিপস্টিকের শেড অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
অনুষঙ্গ
সিঁথিতে সিঁদুর দেওয়ার ভিন্ন ভিন্ন ধরন আছে, কিন্তু বিবাহিত মেয়েদের কাছে সিঁথিতে সিঁদুর কেবলমাত্র সাজের অনুষঙ্গ নয়। হাতের শাঁখা-পলাও ঠিক তেমনই গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রত্যেক বিবাহিত নারীর কাছে। প্রতিটি অনুষঙ্গের বিশেষত্বকে বুঝে ভিতরে ধারণ করে তার প্রকাশ ঘটাতে পারলেই সাজে পূর্ণতা আসে। কানের দুল, গলার মালা, নাকের নথ, খোঁপার কাঁটা—সবই নির্ভর করে সাজের বিশেষত্ব, পোশাকের ধরন এবং মানুষটির পছন্দ ও ব্যক্তিত্বের ওপর।
চুলের স্টাইল
চুলের স্টাইল বা সাজের ধরনও চুলের ধরনের ওপর নির্ভর করে। সাজের ক্ষেত্রে চুলের সাজই পরিপূর্ণতা এনে দিতে পারে। আর তাই মানানসই চুলের সাজ না হলে সাজে অপূর্ণতা থেকে যায়। তাই অবশ্যই পরিবেশ, আবহাওয়া, সময়, বয়স, পোশাক, চুলের ধরন, সাজের ধরন—সবকিছু বিবেচনা করেই সঠিক হেয়ারস্টাইলটি নির্বাচন করুন। যেটিতে আপনি নিজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, আপনার নিজের ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে—এমন সাজই কাম্য পূজার সময়। ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার। তাই আমরা অন্য ধর্মের যারা পূজা দেখতে মণ্ডপে যাব তারা অবশ্যই নিজ নিজ সত্তাকে ভেতরে ধারণ করেই যাব।