রবিবার, ১ অক্টোবর ২০১৭: সৌদি আরবের জাতীয় দিবস উপলক্ষে এই প্রথমবারের মত দেশটির রাস্তায় নারী ও পুরুষ সম্মিলিত ভাবে রাতভর মেতে থাকলেন পার্টিতে। ২৩ সেপ্টেম্বর সৌদির ৮৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পপ গান আর ড্যান্সের তালে রাতের আকাশ মাতিয়ে রাখলেন সৌদি আরবের তরুণ-তরুণীরা। রক্ষণশীল সৌদি আরবের এমন দৃশ্য ইন্টারনেটে দেখে মোটামুটি ধাক্কা খেয়েছেন ভিউয়াররা।
দেশটির বিনোদন বিভাগ দেশের ১৭টি শহরে কনসার্ট ও লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সৌদি আরবের ৯৯ তালা বিশিষ্ট কিংডম টাওয়ার সজ্জিত করা হয় রিওতে অংশগ্রহণ করা সৌদি নারী অলিম্পিয়ান স্পিন্টার কারিমান আবুলজাদেয়েল। শহরজুড়ে ডিজে গানের তালে তালে সৌদি নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী নৃত্যের মুদ্রা প্রদর্শন করেন।
রিয়াদের তাহিলা স্ট্রিটে মেয়েকে নিয়ে এই উৎসব উপভোগ করতে আসা সামিরা, ছদ্মনাম (৬০) বলেন, জনসম্মুখে এই প্রথম আমি এমন স্বাধীনতা প্রত্যক্ষ করলাম। বিশেষ করে রিয়াদের মত সৌদির সবচাইতে রক্ষণশীল শহরে এমন আয়োজন দেখে আমি অভিভূত।’
উৎসবে যোগ দেয়া আর একজন বলেন, ‘আমি মোহিত, আমি উচ্ছসিত। এটি অভাবনীয় মুহুর্ত। জীবনের এমন আনন্দের প্রকাশ আমি আগে আর কখনোই দেখিনি, বিশেষ করে জনসম্মুখে, সবার সামনে এবং যখন এটি সরকার কর্তৃক আয়োজন করা হয়। রাজ্যজুড়ে পরিবর্তন এসেছে।’
অন্যদিকে একজন টুইটার ব্যবহারকারী এই আয়োজনের সমালোচনা করে বলেন, ‘একজন খাঁটি মুসলমান হিসেবে আমি জাতীয় দিবসে এই আয়োজনের কড়া নিন্দা জানাই। এখানে নারী-পুরুষ একসঙ্গে নাচছে এবং উৎসব করছে। এটি একটি ছড়িয়ে পড়া বিকৃত শক্তি।’ এছাড়া অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই আয়োজনকে ‘পাপ’ বলে এর নিন্দা করেন।
তবে উৎসবের সমর্থক সৌদি নাগরিকদের মতে, ‘আমাদের তরুণরা ধর্মীয় নেতাদের কণ্ঠ শুনতে শুনতে ক্লান্ত। তাদের উন্মুক্ত সমাজ উপলদ্ধি করা প্রয়োজন। তারা নারী-পুরুষ ট্যাবুর মত সামজিক কুসংস্কার কাটিয়ে একটু ভিন্নভাবে জীবনকে উপলদ্ধি করতে চায়।’
সৌদি রাজপুত্র ও ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানের ‘ভিশন-২০৩০’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নকে লক্ষ্য করে একের পর এক সংস্কার চলছে দেশটিতে। বিন সালমানকে রাজপরিবারের একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সৌদি আরবের বিভিন্ন খাতে নারীদের প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তিনি।
সৌদি আরবে সম্প্রতি অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নাগরিক অধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতার সংস্কার করা হয়েছে। তরুণরা এখন একে অপরের সঙ্গে আড্ডা দেয়, মজা করে ও পশ্চিমা গানের সঙ্গে নাচে। কিন্তু জনসম্মুখে রাষ্ট্র কর্তৃক আয়োজিত এমন স্বাধীনতাপূর্ণ আয়োজন এই প্রথম।
তবে সৌদি আরবের এই সামাজিক উদারতাকে সৌদি রাজনীতির উদারনীতির সংস্কারের পাথেয় মনে করার কোন কারণ নেই। দুই সপ্তাহ আগেই সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে আদর্শগত দ্বন্দ্বের কারণে ১৪ জনকে আটক করে কর্তৃপক্ষ। এদের কেউ উদারপন্থী কেউ অতি-রক্ষণশীল আবার কেউ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। এদের মধ্যে আছে ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে সৌদি রাজপরিবার ত্যাগ করা রাজপুত্র শেখ সালমান আল আওলাদ। টুইটারে তার ফলোয়ার সংখ্যা ১৪ মিলিয়ন।