Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

fee35b6e2bbfef6752e283c21c43296e-59d1da31675ff (1)

খােলা বাজার২৪।।সোমবার, ২ অক্টোবর ২০১৭: গ্রামের প্রবেশমুখেই একটা সাইনবোর্ড লাগানো। এতে লেখা, ‘এই গ্রাম মুসলমানশূন্য এলাকা’। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাইরের একটি গ্রাম এটি। মূলত রোহিঙ্গা মুসলমানদের দূরে রাখতেই এই সাইনবোর্ডটি লাগানো, যাদের ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিগৃহীত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

কারণটা কঠিন কিছু নয়। সেই ১৯৯২ সাল থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে মিয়ানমার সরকার। নিজের দেশের ভেতরেই এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতে তাদের কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে হয়। অতিক্রম করতে হয় অভিবাসন চেক পয়েন্ট। শুধু তা-ই নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকারগুলোর বিষয়েও বৈষম্যের শিকার রোহিঙ্গারা।

নে সান লুইন নামের একজন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট বলেন, ‘তারা (মিয়ানমার সরকার) গত ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের উন্মুক্ত কারাগারে বন্দী করে রেখেছে। ১৯৭৮ সাল থেকে তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী, তারা দেশে হানা দিতে এসেছে—এসব বলে তারা সাধারণ মানুষের মগজধোলাই দিচ্ছে।’

নে সান লুইন বলেন, ‘আমরা রাখাইনের ভূমিতে এসেছি সপ্তম শতকে। একাদশ শতকে রাখাইন বৌদ্ধরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। সে সময় দক্ষিণাঞ্চলে যারা বাস করছিল, তাদের উত্তরাঞ্চলের দিকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়। (তারপর তারা বলতে শুরু করল) উত্তর দিক থেকে দেশে হামলা হচ্ছে। এটা আসলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের ইতিহাসের মতো, যেমনটা আমরা জানি, ফিলিস্তিনের লোকজন এখন অভিবাসীতে পরিণত হয়েছে।’ তাঁর মতে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীই আসলে চায় না রোহিঙ্গারা সেখানে টিকে থাকুক।

অং সান সু চির দল ক্ষমতায় আসার পর বহু রোহিঙ্গাই আশাবাদী হয়েছিল। কিন্তু তাঁর গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ও রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চলছে। গত ২৫ আগস্ট শুরু হয় সাম্প্রতিকতম অভিযানটি। এবারের অভিযানেই দেশছাড়া হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা।

ইউরোপ-প্রবাসী ব্লগার নে সান লুইন বলেন, ‘তিনি আমার নায়ক ছিলেন। আমরা তাঁকে সমর্থন করেছিলাম। সব রোহিঙ্গাই তাঁকে সমর্থন করেছিল। তিনি ক্ষমতায় গেলে রোহিঙ্গাদের ভাগ্য বদলাবে বলে মনে করেছিলাম আমরা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বিপরীতটাই ঘটেছে।’ তাঁর মতে, চীনের সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে রাখাইন রাজ্য খালি করছে মিয়ানমার। এই এলাকায় কিয়াউক পিউ স্পেশাল ইকোনমিক জোন প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের সঙ্গে এক হাজার কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়েছে সরকারের। তবে এ প্রকল্পই যে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণের একমাত্র কারণ, তা নয়। রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি বা ভাষাও কোনো সমস্যা নয় এখানে। নে সান লুইনের মতে, রোহিঙ্গাদের ধর্মই মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘দেশ থেকে সব মুসলিম মুছে ফেলতে (সেনাবাহিনীর) পরিকল্পনা রয়েছে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। ২০ বছরের মধ্যে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গামুক্ত করার পর তারা অন্য কোনো সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের পেছনে লাগবে।’