Wed. May 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

037db3c9e0e22bbc146afeca9e71cab0-59cf261660e57খােলা বাজার২৪।।সোমবার, ২ অক্টোবর ২০১৭: শারদীয় দুর্গাপূজার জন্য বাঁশ দিয়ে তৈরি হয়েছে ১০১ ফুট উচ্চতার দুর্গাপ্রতিমা। ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটি শহরের এই দুর্গাপ্রতিমা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বিশ্বের উচ্চতম দুর্গাপ্রতিমা হিসেবে স্বীকৃতি পাবে বলে উদ্যোক্তারা আশা করছেন। তবে মূল উদ্দেশ্য হলো, এই বিশাল কাজের মধ্য দিয়ে আসামের বাঁশ-বেতশিল্প সম্পর্কে সবাইকে জানান দেওয়া। আরেকটা ব্যাপার দেখার মতো। আর তা হলো, একজন মুসলমান শিল্পীর নেতৃত্বে গড়ে উঠছে এই বিশালাকার দুর্গাপ্রতিমা।

গুয়াহাটির এই দুর্গাপ্রতিমা তৈরির খবর ভারতসহ বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এই মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল গত ১ আগস্ট। কাজ চলছিল, তবে ১৭ আগস্ট এক ঝড়ে ভেঙে পড়ে প্রতিমা। তারপর আবার উদ্যোগ নেওয়া হয় প্রতিমা গড়ার।

প্রথমে ঠিক করা হয়েছিল, ১০৮ ফুট উঁচু দুর্গাপ্রতিমা বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবেন গুয়াহাটির লাচিত নগরের বিষ্ণুপুর সর্বজনীন পূজা কমিটির সদস্যরা। কিন্তু সাম্প্রতিক ঝড়ে ক্ষতি হয়ে গিয়েছে মারাত্মক। তাই ১০১ ফুট উঁচু দুর্গাপ্রতিমা বানিয়েছেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই উদ্যোক্তারা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। পুরো প্রতিমা নির্মাণের ভিডিও ধারণসহ প্রতিদিনই তাদের কাছে নানা তথ্য পাঠানো হচ্ছে বলে জানালেন বিষ্ণুপুর সর্বজনীন পূজা কমিটির মুখপাত্র প্রশান্ত বসু।

দুর্গাপূজা শুরুর কদিন আগে গুয়াহাটি থেকে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম খুঁটি পোঁতা থেকে পুরো কাজটাই গিনেস কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে করা হয়েছে। তারা ২৮ পৃষ্ঠার একটি নির্দেশিকাও পাঠিয়েছে। প্রশান্তের আশা, স্বীকৃতি তাঁরা পাবেনই।

যখন দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ চলছিল। ছবি: সংগৃহীতআরেকজন উদ্যোক্তা বীরেন সরকার মুঠোফোনে বলেন, ‘বাঁশ আসামের ঐতিহ্য। এই বাঁশ হারিয়ে যেতে বসেছে। বাঁশশিল্পকে শক্তিশালী করে বাঁশকে বাঁচাতে হবে। সেই সচেতনতার বার্তা দিতেই এই উদ্যোগ। সেই সঙ্গে সম্প্রীতির বার্তাও আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই।’

ঝড়ের কারণে উচ্চতা ৭ ফুট কমে গেলেও প্রতিমার উচ্চতা হ্রাস পায়নি। জানা গেল, শুরুতে ১০ ফুট উঁচু একটি মঞ্চের ওপর ছিল প্রতিমা। এখন সেই মঞ্চ নেই। ফলে প্রতিমার উচ্চতা কমেনি, বরং ৩ ফুট বেড়েছে। এই মূর্তি গড়া সম্পন্ন হওয়ার আগ থেকেই মানুষের ভিড় দেখা যায়। আসাম রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী হীমন্ত বিশ্বশর্মা পরিদর্শন করেছেন এই প্রতিমা। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এই প্রতিমার হাত ধরে রাজ্যের পর্যটনশিল্প আরও বিকশিত হবে।

কারুশিল্পী নুরুদ্দিন আহমেদসুবিশাল এই প্রতিমাটি তৈরি করা হচ্ছে শুধুই বাঁশ দিয়ে। আসামের প্রখ্যাত কারুশিল্পী নুরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ৪০ জন কারুশিল্পী দিনরাত এক করে গড়ে তুলেছেন দশভুজার প্রতিমা। ১ আগস্ট নুরুদ্দিন প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন।

দুর্গাপ্রতিমা এত উঁচু হলেও উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, পূজা হবে মাটির তৈরি ছোট প্রতিমার। বড়টি শুধু দর্শকদের দেখার জন্য।

কারুশিল্পী নুরুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি একজন শিল্পী। শিল্পই আমার ধর্ম।’  তিনি জানান, এই প্রতিমা তৈরিতে হাজার পাঁচেক বাঁশ লেগেছে। খরচ ১২ লাখ রুপি বলে তাঁর অনুমান।

আসামে প্রচুর বাঁশ পাওয়া যায়। এখানকার বাঁশ ও বেতশিল্প বেশ উন্নত। নুরুদ্দিন নিজেও বাঁশ-বেতের কাজে বেশ দক্ষ। কারুশিল্পী হিসেবে আগেই বহু সম্মানে ভূষিত। ১৯৭৫ সাল থেকে তিনি দুর্গাপ্রতিমা বানাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত শ দুয়েক প্রতিমা বানিয়েছেন তিনি। নুরুদ্দিন আরও বলেন, শুধু বাঁশ দিয়েই ১০১ ফুটের প্রতিমা দাঁড় করানো হয়েছে। কোনো ধাতুর ব্যবহার করা হয়নি। নুরুদ্দিনের সঙ্গে তাঁর ছেলে দীপ আহমেদও কাজ করেছেন।

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় এর আগে ৮৩ ফুট উঁচু দুর্গাপ্রতিমা বানানো হয়েছিল। সেটি তৈরি হয়েছিল লোহার কাঠামোর ওপর। বাংলাদেশে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গত বছর নির্মাণ করা হয়েছিল ৭১ ফুট উচ্চতার দুর্গাপ্রতিমা।