Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৭: অনেকেই বাস্তবসম্মতভাবে ভাবতে বলছিলেন। কারণ খেলাটা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে। কেউ কেউ আবার উদাহরণ হিসেবে ভারতের কথা উল্লেখ করেছেন। ১৯৯২ সাল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে খেলা ১৭ টেস্টের মধ্যে মাত্র দুটি ম্যাচ জিতেছে ভারত। সবই বোঝা গেল। কিন্তু প্রশ্ন হল, বাস্তবসম্মত ভাবনা কি এমন হওয়া উচিত ছিল যেমনটি খেলল বাংলাদেশ?

4

৯০ রানেই ইনিংস শেষ। ফল, ৩৩৩ রানের বিশাল এক হার। ভাগ্যিস এবারও ইনিংস পরাজয় দেখতে হয়নি। টেস্ট পথচলার শুরুতেও এমন অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের খুব বেশি হয়নি। হলেও নবীন দলের সিল থাকায় পার পাওয়া গেছে। সেভাবে সমালোচনাও হয়নি। কিন্তু ঘরের মাঠে রথী-মহারথীদের এক ঘাটে পানি খাওয়ানো দল বাইরে গিয়ে এভাবে আত্মসমর্পণ করবে সেটা নিশ্চয়ই বাস্তবসম্মত চিন্তা-ভাবনা নয়।

ঠিক কোন বিভাগের দুর্দশার চিত্র বর্ণনীয়? পচেফস্ট্রুম টেস্ট শেষে এটা বড় কঠিন প্রশ্নই মনে হতে পারে। কোনও বিভাগ থেকেই বলার মতো কিছু মেলেনি। দেখা মেলেনি চেনা-লড়াকু সেই বাংলাদেশের। প্রথমে বল হাতে নাভিশ্বাস অবস্থা। এরপর ব্যাট হাতে আশা জাগিয়েও আত্মহত্যায় প্রথম ইনিংস শেষ। আর শেষ দৃশ্য তো বাংলাদেশের অসহায়ত্ব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। পুরো ম্যাচে ধুঁকেছে মুশফিকবাহিনী। ধুঁকে ধুঁকে মেনে নিয়েছে বিব্রতকর হার।

এ যেন ঠিক মুদ্রার উল্টো পাশ। এই দলও এমন পারফরম্যান্স করতে বা এভাবে হারতে জানে সেটা দেখাটা যেন ক্রিকেটভক্তদের জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা। যেন কড়কড়ে নতুন বইয়ের মলাট উল্টিয়ে অজানা তথ্য জানা। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের রেশ এখনও কাটেনি। কিছুদিন আগেই তো ঘরের মাঠে স্টিভেন স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নারদের প্রথম টেস্টে হারিয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর ইংল্যান্ড নিয়ে গেছে হারের স্বাদ। চলতি বছর সফরকারী হয়েও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে মুশফিকরা।

নতুন দিগন্ত খেুলে গেছে- এভাবেই ভাবতে শুরু করেছিল সবাই। সাদা পোশাকেও বাংলাদেশ লড়তে শিখে গেছে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছিল। বিশ্ব ক্রিকেটেও হচ্ছিল বাংলাদেশের ভূয়সী প্রসংশা। শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ডের পর অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে টেস্টে হারানো অঘটন হিসেবে বিবেচিত হয়নি। বাংলাদেশকে বলা হচ্ছিল পরিণত দল। কিন্তু পচেফস্ট্রুম টেস্টের পর যেন নিজেদের পুরনো চেহারা মনে করিয়ে দিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
পচেফস্ট্রুম টেস্ট হারের পর আলোচনায় বেশ কয়েকটি বিষয়। ব্যাটিং-বোলিংয়ের আগে আরও বড় ভুল করে এসেছে বাংলাদেশ। টস জিতেও ফিল্ডিং বেছে নেন মুশফিকুর রহিম। তখন থেকেই এ নিয়ে সমালোচনা। ম্যাচ শেষে ওই সিদ্ধান্তের ভুল বুঝতে পেরেছেন মুশফিক। বলেছেন, ‘আমি আসলেই বুঝিনি উইকেট এমন ফ্লাট হবে। আমি ভেবেছিলাম প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেলতে পারবে না। সেই ভুলটা ব্যবধান গড়ে দিয়েছে।’
এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই ধুঁকতে শুরু করে বাংলাদেশ। বল হাতে একের পর এক ওভার করে যেতে হয়েছে মুস্তাফিজ, তাসকিন, শফিউল, মিরাজদের। কিন্তু উইকেটের দেখা নেই। ম্যাচের প্রথম দিন একটি উইকেট প্রাপ্তি। সেটাও রান আউটের কল্যাণে। বল হাতে প্রথম উইকেটের দেখা পেতে দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় বাংলাদেশকে। পরে দুটি উইকেট নিলেও লাভ হয়নি। তিন উইকেটে ৪৯৬ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে প্রোটিয়ারা।

জবাবে ৩২০ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেন মুমিনুল হক। ৬৬ রান আসে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে। ১৭৬ রানে এগিয়ে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৭ রান তুলে বাংলাদেশকে ৪২৪ রানের বড় টার্গেট দেয়। যে রান তাড়া করতে নেমে পুরোটা সময় অন্ধকারে হেঁটেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। আগের দিন ৪৯ রান তোলা বাংলাদেশ শেষদিনের একটি সেশনও পার করতে পারেনি। ৩২.৪ ওভারে ৯০ রান তুলতেই ১০ উইকেট শেষ। নামের পাশে আরও একটি হার।
বড় দল, অনেক সাফল্য ঝুলিতে জমা করার পরও ভারতের গায়ে অপবাদ আছে। বলা হয় তারা ঘরের মাটিতে বেশি শক্তিশালী। তবে অপবাদ এটা নয়, অপবাদ হচ্ছে ঘরের মাটিতেই বেশি সাফল্য তাদের। যে কারণে ঘরের মাটিতেই বেশি খেলতে চায় তারা। তবে কি প্রতিবেশি দেশটির কাছ থেকে সেই শিক্ষাই নিচ্ছে বাংলাদেশ? বাংলাদেশের প্রসঙ্গ উঠলেও বলা হয় তারা ঘরের মাটিতে দারুণ। কিন্তু বাইরের মাঠে? উত্তরটা ব্যাটে-বলে এখনও দিতে পারেনি বাংলাদেশ।