মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৭: মোঃ রাসেল মিয়া: নরসিংদীতে শিবপুর উপজেলার জয়নগর গ্রামে কৃষি সংগঠনের উদ্যোগে নতুনভাবে দেশী মুরগি উৎপাদন করার জন্য খামারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। যদিও খামারে লালিত-পালিত ব্রয়লার, লেয়ার, পাকিস্তানি মুরগিতে এখন দেশের বাজারগুলো সয়লাব। বিদেশি মুরগি পালনে লাভ বেশি বলে প্রচলিত। ফলে দেশি মুরগি বাজার থেকে হারাতে বসেছিল। সেই অবস্থা পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিদেশি নয়, দেশি মুরগি পালন করে নিত্যদিনের অভাবকে বিদায় জানিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন শিবপুর উপজেলার জয়নগর গ্রামের হাজারো আত্মপ্রত্যয়ী গ্রামীণ খামারীরা। স্বল্প পুঁজি ও নামমাত্র শ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় বিভিন্ন কৃষি সংগঠনের সদস্যসহ বেকার যুবক-যুবতী ও শিক্ষার্থীরাও ওই নারীদের দেখাদেখি দেশি মুরগি পালন করছেন। এতে করে বাড়ছে কর্মসংস্থান ও দেশীয় পদ্ধতিতে উন্নত জাতের দেশি মুরগি পালন। বিভিন্ন মুরগি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকায় দেশি মুরগি উৎপাদন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং এই এলাকায় ব্যাপকভাবে এখন দেশি মুরগির চাষ হচ্ছে। দেশি মুরগি উৎপাদনে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানা যায়। জানা যায়, দেশি মুরগি চাষ করার পূর্বে খামারিরা প্রশিক্ষণ নেন। এরপর উদ্যোক্তাদের কাছে সরবরাহ করা উন্নত জাতের দেশীয় আটটি মুরগি ও একটি মোরগ বাচ্চা দিয়ে তাদের মুরগি পালন শুরু হয়। এখন হাজার হাজার আত্মপ্রত্যয়ী যুবক-যুবতী স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন। ইতিমধ্যে অনেকেই সফলতা পেয়েছেন। এভাবেই পলাশ উপজেলার মরজাল, আমলাবো, শিবপুর উপজেলার জয়নগর, ভেড়ামারা, বেলাব উপজেলার চর উজলাব, দিঘলদীকান্দা, রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর, নীলক্ষ্যা, হাসনাবাদ, মনোহরদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামসহ নরসিংদী সদরের আলোকবালী ও নজরপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে উন্নত জাতের দেশি মুরগি পালন করে সবাই বেকারত্ব ও দারিদ্র্যকে বিদায় জানিয়ে আজ অনেকেই স্বাবলম্বী বলে জানান আঃ বাছেত নামে এক দেশি মুরগি চাষি। জয়নগরের শিক্ষার্থী সুমা ও করিমা জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি দেশি মুরগি পালন আয়ের ভালো একটি মাধ্যম। এর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ তারা পড়াশোনার কাজে ব্যয় করতে পারছেন। মরজাল গ্রামের বৃদ্ধা নাহিদা ও রহিমা বলেন, দেশি মুরগি পালন করতে আলাদা সময় ও খাদ্য সরবরাহ করতে হয় না তাদের। দেশীয় পদ্ধতিতে উন্নত জাতের দেশি মুরগি পালনে বাচ্চাগুলো ৩ থেকে ৪ মাস বয়সে প্রজননক্ষম হয় এবং ডিম দেওয়া শুরু করে। প্রতিটি মুরগি বছরে ২৫০ থেকে ৩০০টি ডিম দিয়ে থাকে। এ ছাড়া ওই ডিম ফোটানোর পর দুই মাস বয়সের একটি বাচ্চা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। বিধবা নারী আনোয়ারা, নাজনীন ও শিউলিসহ আরো অনেকের ভাষ্য, এখন তারা প্রতি বছর বাচ্চা বিক্রি বাবদ দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের দেশি মুরগি অন্যান্য মুরগির চেয়ে অধিক লাভজনক বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারা জানান, এ জাতের মুরগি ডিম বেশি দেয়, মাংস বেশি হয় এবং মাংস অন্য মুরগির চেয়ে সুস্বাদু। এসব বিবেচনায় নরসিংদীর বিভিন্ন গ্রামে এখন দেশি মুরগি পালন করা হচ্ছে। বর্তমানে নরসিংদীর বিভিন্ন উপজেলার গ্রামগুলোতে দেশি মুরগি চাষের সম্ভাবনাময় খামার দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশি মুরগি পালনকারীদের আগ্রহ ও সফলতা দেখে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর জন্য একটি ইনকিউবেটর দেওয়া হয়েছে। এখন তারা আরো লাভবান হবেন বলে মনে করেন এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। যার ফলশ্রæতিতে বর্তমানে নরসিংদীর বিভিন্ন গ্রামে বর্তমানে ২৬৩টি দেশি মুরগির খামার রয়েছে। দেশি মুরগির চাষীরা উন্নত জাতের দেশি মুরগি পালন করে সফলতা পেতে শুরু করেছেন বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, দেশি মুরগি প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করে বলে সংক্রমণ ও কোনো পরজীবী সহজে আক্রান্ত করতে পারে না। ফলে খুব বেশি ওষুধ বা ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হয় না। শুধু বাচ্চার ভ্যাকসিন করলেই চলে। অল্প পুঁজি ও স্বল্প শ্রমে যে কেউ ঘরোয়া পরিবেশে উন্নত জাতের দেশি মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। বেকারসহ গ্রামীণ বিভিন্ন এলাকার নারী-পুরুষকে দেশি মুরগি পালন করতে পরামর্শ ও সেবা দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ অফিস।