খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৭: ‘টস জেতাই ভুল হয়ে গেছে।’ ‘কোচের নির্দেশেই আমি আমি বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিং করেছি।’ বাংলাদেশ দলের টেস্ট সংস্করণের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের এমন কিছু বিধ্বংসী মন্তব্যের পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মন্তব্য, ‘বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে মুশফিক।’ বেশ কিছু দিন থেকেই এ সব বিতর্কে সরব ক্রিকেট পাড়া। আর এসব মন্তব্য দেশের ক্রিকেটের জন্য মঙ্গলজনক কিছু নয় বলে মনে করেন সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। মুশফিককে আরও শক্ত হওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। তাকে ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা থেকে শিক্ষা নিতে বললেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান আশরাফুল।
বিতর্কের শুরু দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেই নয়। এরপর আগে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকেই শুরু হয়। ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তে ব্যাটিংয়ে নামেন বলে তোপ দাগিয়েছিলেন মুশফিক। তার ভিত্তিতে মুশফিককে এক প্রকার ধুয়েই দিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি। তবে এসব ক্ষেত্রে মুশফিককে আরও কৌশলী হতে পরামর্শ দেন আশরাফুল, ‘মুশফিক দলের অধিনায়ক। সবচেয়ে বড় কথা ও দলের সেরা পারফর্মার। একজন পারফর্মারের অধিনায়কত্ব করা খুব সহজ। কিন্তু ও নিজেই বিষয়গুলো কঠিন করে ফেলছে। ওকে যদি কোচ ডিস্টার্ব করে তাহলে ও সরাসরি বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাছে যাক। খুলে বলুক সবকিছু। ওতো দেখছেই মাশরাফি কি করে? যে কোন সমস্যায় বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাছে যায়। মুমিনুলকে ওয়ানডে দলে নিয়ে আসলো। এর আগে শ্রীলঙ্কায় মাহমুদুল্লাহকে ছাড়া যাবেনা বলছে। শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহকে নিতে বাধ্য হয়েছে। একজন অধিনায়কের এমন হওয়াই উচিৎ।’
মুশফিকের এমন মন্তব্যের পর ক্রিকেট পাড়ায় জোর গুঞ্জন নেতৃত্ব হারাচ্ছেন তিনি। তবে এমনটা হলে ভালো কিছু হবে না বলে মনে করেন আশরাফুল। বাংলাদেশের অন্যতম ধারাবাহিক পারফর্মার মুশফিক। টেস্ট, ওয়ানডে কি টি-টুয়েন্টি – যে কোন সংস্করণেই ধারাবাহিক রান করছেন। তাই তাকে সরিয়ে দেওয়াটা সহজ মনে করছেন না আশরাফুল। তবে মুশফিককে আরও কৌশলী হতে বললেন তিনি। নিজের কাজটা শতভাগ উপভোগ করেই করা উচিৎ বলে মনে করেন অ্যাশ। অন্যথায় সসম্মানে ছেড়ে দেওয়াকেও ভালো মনে করছেন তিনি।
‘আমি বুঝিনা ও কেন ভয় পায়। ওর পারফরম্যান্স ওর পক্ষে। কিন্তু তারপরও…। ও যদি নিজের মতো করতে না পারে তাহলে ছেড়ে দেওয়াই ভালো। যদিও আমি এটার পক্ষে নই। আলোচনা করে সমাধান করাই উত্তম। আমি চাই মুশফিকই থাকুক। ও বলেনা ও সৎ ছেলে। আসলেই শতভাগ সৎ ছেলে, আমিতো দেখেছি। তবে ওকে আরও কৌশলী হতে হবে। ম্যানেজমেন্ট বললেই বাউন্ডারি লাইনে যেতে হবে নাকি? আগেতো ক্যাচ মিস হোক, এরপর ভাবা যাবে বাউন্ডারিতে যাবে কি যাবে না। নিজের কাজটা উপভোগ না করলে সবকিছুই কঠিন হয়ে যায়।’
দক্ষিণ আফ্রিকায় দুটি টেস্টেই অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি বোলাররাও এ সিরিজে ছিলে অনুজ্জ্বল। আর তাতে সংবাদ সম্মেলনে বোলারদের এক হাত নিয়েছিলেন মুশফিক। এ বিষয়টিতেও মুশফিককে একটু কৌশলী হতে বলে আশরাফুল। বোলারদের দ্রুত পরিবর্তন না করে তাদের উপর আস্থা রেখে তাদের সমস্যা সমাধান করতে এগিয়ে আসতে বলেন।
‘দুইটা টেস্টেই আমরা টস জিতে বোলিং নিয়েছি। আবার দেখা গেছে দুই তিন ওভার পরই বোলার পরিবর্তন করেছি। পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়ে যায়। প্রথম টেস্টে ছয় ওভার পরই মিরাজকে আনা হয়েছে। তখন তৃতীয় পেসার আনা যেত। আপনার বোলারদের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। যদি বিশ্বাস না রাখেন তাহলেতো ওরা মোড়ালি ডাউন হয়ে যাবে। মাশরাফির অধীনে বোলাররা এতো ভালো করে কেন? কারণ ও বোলারের উপর বিশ্বাস রাখে। এক স্পেল খারাপ করলে পড়ে আরেক স্পেলে আনে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছে রাব্বি মনে ৮ ওভার বল করছে মোটে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মোস্তাফিজ বল করতে আসছে ১৭ ওভার পর। বোলারদের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। ওরা খারাপ করলে কি করলে ভালো করবে সেই মোটিভেশন দিতে হবে। যেটা মাশরাফি করে।’
ম্যানেজমেন্ট চায় মুশফিক চার নম্বরে ব্যাট করুক। প্রায় সব দলের সেরা ব্যাটসম্যানরা এ পজিশনেই ব্যাট করে। কিন্তু চার নম্বরে শতভাগ স্বস্তি বোধ করেন না মুশফিক। এমনকি উইকেটের পেছনে না থাকলেও অস্বস্তিতে ভোগেন। তাই মুশফিককে নিজের মতো খেলতে দেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন আশরাফুল, ‘আমার মনে হয় মুশফিককে ওর মতোই খেলতে দেওয়া উচিৎ। ও উইকেটকিপিং করতে পছন্দ করে আর ছয় নম্বরে ব্যাট করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ওকে তাই করতে দেওয়া উচিৎ। কিপিং ছাড়া ওর আত্মবিশ্বাস কাজ করেনা। আর চার নম্বরে ও ব্যাট করতে কমফোর্টেবল বোধ করে না। আমাদের চার নম্বরের জন্য অন্য ব্যাটসম্যান খোঁজা উচিৎ।’
পচেফস্ট্রুম টেস্টের প্রথম দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু বিধ্বংসী মন্তব্য করেন মুশফিক। আর তাতেই তার উপর দারুণ চটেছে বিসিবি। তবে এসব না ঘটতে মুশফিককে আরও সাবধানী হতে বললেন আশরাফুল। অন্যথায় এটা ক্রিকেটের অমঙ্গল হবে বলে মনে করেন তিনি, ‘সার্বিক দিক থেকে চিন্তা করলে এসব ব্যপারগুলো কিন্তু আমাদের ক্রিকেটেরই ক্ষতি। যা হচ্ছে তা মোটেও ভালো নয়। আমার মনে হয় মুশফিকের আরেকটু বুঝে কথা বলা উচিৎ।