খােলা বাজার২৪।।শনিবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০১৭: ইরানের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী ড. সাইয়েন মোহাম্মেদ আইয়াজি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার জন্য ইরান বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এলাকায় একটি হাসপাতাল নির্মাণ করবে। এ লক্ষ্যে হাসপাতাল স্থাপনের জন্য জমি পেতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক চালু করা হবে বলেও জানান ইরানের উপমন্ত্রী।
শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত একটি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা জানান তিনি।এ সময় সফররত ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান ড. পেভান্দি উপস্থিত ছিলেন। রোহিঙ্গাদের জন্য ইরানি ত্রাণ সহায়তার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ও সরেজমিন দেখার লক্ষ্যে তারা বাংলাদেশ সফরে আসেন।
ইরানের উপপ্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের সহায়তার বিষয়ে ইরানের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আগেও সফর করেছে। আমরা রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল স্থাপন করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছি। এ নিয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার প্রতিনিধি নিয়োগ করবে। আমরাও প্রতিনিধি দেব। তার পর হাসপাতালের জমির জন্য আলোচনা করা হবে। যদিও আমরা জানি, জমির পরিমাণ অপ্রতুল। হাসপাতালের ধারণক্ষমতা এখনও ঠিক করিনি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের একটি বড় সমস্যা হয়েছিল ভাষাগত সমস্যা। বাংলাদেশ থেকে ৫০০ ডাক্তার ইরানে ছিলেন। তারা পার্সিভাষা জানেন, তাই এখন ভাষাগত সমস্যাটা দূর করেছেন। এখন ইরান থেকে ডাক্তাররাও আসবেন।
ইরান বাংলাদেশ থেকে কিছু রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দেয়ার লক্ষ্যে ইরানে নিয়ে যাবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দেশে ৩৫ লাখ আফগান শরণার্থী আছেন। ইরাক-ইরান যুদ্ধে আহত ইরাকের অনেকেই আমাদের দেশে আছেন। রাসায়নিক বোমায় আহতরা আছেন। আবার ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের শরণার্থীও আছেন। ফলে আমাদের দেশে শরণার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ইরান তাদের জন্য মানবিক সাহায্য দেবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাপ দেব, যাতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নেয়।
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চীন ও রাশিয়াকে সহায়তার জন্য ইরান অনুরোধ জানাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট রোহানি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আহ্বান জানিয়েছেন। ইরান এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার যাতে নাগরিকত্ব দিয়ে সম্মানের সঙ্গে ফিরিয়ে নেয়, সেই লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টিতে ইরান ভূমিকা পালন করা অব্যাহত রাখবে। তবে মিয়ানমারের ওপর একত্রিতভাবে সমন্বিত চাপ সৃষ্টি করতে হবে। ইরানের জনগণ মিয়ানমারে নিষ্ঠুরতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
ইরানি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান ড. পেভানদি বলেছেন, আমরা পরিস্থিতি সরেজমিন দেখে বোঝার জন্য এসেছি। রোহিঙ্গাদের পুষ্টিকর খাবারের অভাব, রান্না করা খাবারের অভাব, বিশুদ্ধ পানির অভাব, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ- এ ধরনের নানা সমস্যা রয়েছে। ইরানের সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য তিন ধাপে ১০০ টনের মতো ত্রাণ পাঠিয়েছে। এসব ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে আছে কম্বল, তাঁবু, ওষুধপত্র।




