Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।।রবিবার, ১৫ই অক্টোবর, ২০১৭: রানা প্লাজা ধসের পর দেশে-বিদেশে এক ধরনের নেতিবাচক প্রচারণার শিকার হতে হয় দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাককে। এ সময় দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা, ক্রেতা সবাই পোশাক কারখানা সংস্কার এবং নিরাপত্তা নিয়ে বেশ জোর দেয়। এর ফলে শ্রমিকের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০১৩ সালে দেশের শ্রম আইন সংশোধন হয়, যাতে কারখানাগুলোতে সেফটি কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতা থাকার পরও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এখনো বেশির ভাগ তৈরি পোশাক কারখানায় সেফটি কমিটি হয়নি। তবে বিজিএমইএর দাবি তাদের সদস্য এমন অধিকাংশ কারখানায় আছে। আর শ্রমিক নেতাদের দাবি কারখানা মালিকের গড়িমসি আর কৌশলী চিন্তার কারণেই সেফটি কমিটি নিয়ে বিলম্ব। এ ছাড়া কাগজে-কলমে কমিটি থাকলেও অর্ধেকেরও বেশি কারখানা নিষ্ক্রিয়।

এদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডাইফি) সূত্রে জানা যায়, গত জুলাই মাস পর্যন্ত প্রায় চার হাজারের বেশি কারখানার মধ্যে মাত্র ২ হাজার ১৭৪টি কারখানায় সেফটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ সদস্য কারখানায় সর্বশেষ তথ্য অনুসারে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত দেখা যায়, বিজিএমইএ কারখানাগুলোতে সেফটি কমিটি হয়েছে ৪৯৮টিতে বা ৩৫ শতাংশ এবং বিকেএমইএর কারখানায় হয়েছে ১৬৯টিতে বা ৪৭ শতাংশ।

জানতে চাইলে শ্রমিক নেতা তৌহিদুর রহমান বলেন, সেফটি কমিটি বলতে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কর্তৃপক্ষ, যা নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরিতে মালিক বা কারখানা কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করে। ২০১৩ সালে শ্রম আইন সংশোধন করে সেফটি কমিটি গঠন করা বাধ্যতামূলক করা হয়।
আইন অনুসারে যেসব কারখানায় ৫০ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করে তার প্রত্যেকটিতে এ কমিটি গঠন করা বাধ্যতামূলক। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক সংখ্যা এর থেকে কম ওই সব প্রতিষ্ঠানেও এই কমটি গঠনে কোনো বাধা নেই। সেফটি কর্মকর্তারা কারখানার বিভিন্ন ধরনের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করেন। তাঁরা নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন এবং শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি বিষয়ে পরামর্শ দেবেন।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. সামসুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ৫০ জনের বেশি শ্রমিক আছে এমন কারখানায় সেফটি কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক হলেও মালিকদের আগ্রহে কমতি থাকায় সেফটি কমিটি খুব একটা এগোচ্ছে না। তবে এ ব্যাপারে মালিকদের ওপর আমাদের তাগিদ রয়েছে। তবে আমাদের আশা একটু সময় নিলেও এ কমিটি প্রত্যেকটি কারখানায় বাস্তবায়ন হবে। এ কমিটি করা হলে কারখানার অনেক সমস্যাই সহজেই সমাধান হয়। তাই মালিক শ্রমিক উভয়ের স্বার্থেই এ কমিটি করা দরকার বলেও তিনি মনে করেন। তিনি আরো বলেন, আইনে অনেক নিয়ম থাকলেও তা কার্যকর করতে চায় না সংশ্লিষ্টরা।

বিজিএমইএ সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, দেশের ৬০০ কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন আছে, আর ইউনিয়ন বা অংশীদারি কমিটি আছে। ওই সব কারখানায় সেফটি কমিটিও আছে। কতগুলো কারখানায় সেফটি কমিটি আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা প্রায় আড়াই হাজারেরও বেশি। এ ছাড়া সরকারিভাবে রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল (আরসিসি) পরিদর্শন শেষে চিহ্নিত কারখানাগুলোতে এ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, আইন অনুসারে যেসব কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন বা অংশীদারি কমিটি রয়েছে এ ধরনের কারখানায় সেফটি কমিটি থাকা বাধ্যতামূলক। তবে কাগজ-কলমে থাকলেও প্রকৃত অর্থে অর্ধেক কারখানায় এ কমিটি নেই। আর থাকলেও অধিকাংশ কমিটিই নিষ্ক্রিয়। কারখানার মালিকরা কৌশলে এ কমিটি গঠন করা এড়িয়ে চলেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।